কলকাতায় ‘সঞ্চয়ের সহজপাঠ’ শেখাল সহজ বিনিয়োগের উপায়
বিচক্ষণ মানুষরা বলেন টাকা রোজগার করা সহজ, কিন্তু রোজগারের টাকা কী ভাবে ব্যবহার করছেন বা খরচ করছেন, সেটি বোঝাই আসল কেরামতি। আপনার টাকা শুধু খরচ করা বা জমানোই যথেষ্ট নয়, কোথায়, কী ভাবে বিনিয়োগ করে তা থেকে লাভবান হচ্ছেন সেটাই আসল।
একটু বোঝানো যাক। মাসের প্রথমে পাওয়া বেতন কিংবা রোজগারের টাকা প্রয়োজনীয় নানান খরচ করার পর যেটুকু পড়ে থাকে তা জমানোর জন্য অনেকেই গতানুগতিক সঞ্চয়ের পথে হাঁটে। যেমন ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজ়িট, রেকারিং ডিপোজ়িট, পিপিএফ কিংবা নিদেনপক্ষে পোস্ট-অফিসের নানা সেভিংস স্কিম। কিন্তু দিন-দিন জিনিসের দাম, মুদ্রাস্ফীতির পারদ এমন লাফিয়ে বাড়ছে তাকে হারানো তো দূরে থাক শুধু জমানো টাকায় খরচ সামলে ওঠাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তা হলে উপায়? সাধের বাড়ি কিংবা স্বপ্নের গাড়ি কেনা কি তাহলে অধরাই থেকে যাবে? তা কেন? মিউচুয়াল ফান্ড আছে তো! আজকের এই জেট গতির যুগে গতানুগতিক সঞ্চয়ের পদ্ধতি অচল। কথায় বলে, ‘মানি বেগেট মানি’। টাকাকে ফেলে না রেখে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে খাটাতে হবে। তার একটি সহজ উপায় হল মিউচুয়াল ফান্ড। অ্যাক্টিভ বা প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ডে কী ভাবে, কতদিনের জন্য কী ধরনের স্কিমে ইনভেস্ট করলে আপনি টাকার মুখ দেখবেন, এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে ‘কানাড়া রোবেকো মিউচুয়াল ফান্ড’ নিয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ, ‘সঞ্চয়ের সহজপাঠ’, সহযোগিতায় আনন্দবাজার পত্রিকা।
এই অনুষ্ঠান ঘিরে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ ছিল দেখার মতো। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘কানাড়া রোবেকো মিউচুয়াল ফান্ড’-এর বিজ়নেস হেড, সেলস(ইস্ট), সঞ্জয় চৌরাসিয়া। তিনি জানান,“আর্থিক ব্যবস্থার ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান দিন দিন আরও মজবুত হচ্ছে। লকডাউনের পর অর্থ বাজার আবার স্থিতিশীল হয়েছে এবং বিনিয়োগের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে ভারতে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারও আরও শক্তিশালী হবে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের তুলনায় ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এটা পরীক্ষিত সত্য। আর তাই, এখন ধীরে ধীরে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে।”
সঞ্জয় চৌরাসিয়া অর্থ বাজার এবং তার বৃদ্ধি সম্পর্কে শুধু পরিসংখ্যান দিয়েই বুঝিয়েছেন, তা নয়, বরং অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিনিয়োগে আগ্রহী মানুষদের খুব সহজে ছোট ছোট উদাহরণ দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড কী? কত ধরণের ফান্ড আছে? লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ, স্মল ক্যাপ, ফ্লেক্সিক্যাপ, মাল্টিক্যাপের সুবিধা-অসুবিধা কোথায়? কতদিনের জন্য কী ভাবে বিনিয়োগ করলে সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে? তা সহজেই বুঝিয়ে দেন। তাঁর মুখ থেকে ‘পাওয়ার অফ কম্পাউন্ডিং’ ও ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজ’ সম্পর্কে ধারণা পেয়ে উপস্থিত মানুষদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। আপনি আপনার টাকাকে চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে বাড়িয়ে তুলতে পারেন সঠিক ইনভেস্টমেন্ট-এর মাধ্যমে অর্থাৎ সুদের উপর সুদ! একেই বলে ‘পাওয়ার অফ কম্পাউন্ডিং’।
সঞ্জয় চৌরাসিয়া বেশ জোর দিয়েই বলেন, “অল্প বয়স থেকে বিনিয়োগ শুরু করলে বেশি সময় পাওয়া যায় এবং লং টার্মে রিটার্ন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। মিউচুয়াল ফান্ড-এর একটা বড় সুবিধা হল এখানে খুব কম টাকা থেকে বিনিয়োগ করা যায়। যার যেমন ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তিনি সেভাবেই বিনিয়োগ করতে পারেন।” সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এর মাধ্যমে কী করে নিয়মিত বিনিয়োগের সু-অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তিনি সহজ কথায় তা বুঝিয়ে দেন।
মার্কেট-এর সেনসেক্স নেমে গেলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। সে প্রসঙ্গে তাঁর মত, “অর্থ বাজারে ওঠা-নামা থাকবে, কিন্তু ভয় পেলে বা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না।” মিউচুয়াল ফান্ড কতটা সুরক্ষিত সে প্রসঙ্গে তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবি-র সুরক্ষা ও তত্ত্বাবধানের কথা মনে করিয়ে দেন। বিনিয়োগের রিটার্ন নেওয়ার সময় ট্যাক্স স্ল্যাবের সুবিধা-অসুবিধার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের শেষে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। মিউচুয়াল ফান্ড কী? মুদ্রাস্ফীতি কী? প্রভৃতি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয় উপস্থিত দর্শকদের থেকে। সফল উত্তরদাতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় পুরস্কার।
সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ-এর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ভেদ রেখা আছে। সঞ্চয় করলে টাকা জমে, তা বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক ফান্ডে বিনিয়োগ করলে আপনার টাকা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, মিউচুয়াল ফান্ডই তার প্রমাণ। বিনিয়োগের এই সহজ সত্যিটা মানুষের সামনে তুলে ধরার কাজে ‘কানাড়া রোবেকো মিউচুয়াল ফান্ড’-এর ‘সঞ্চয়ের সহজপাঠ’ উদ্যোগ যে সফল, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
সঞ্জয় চৌরাসিয়া এই অনুষ্ঠানের সাফল্য নিয়ে বলেন, “কলকাতার অনুষ্ঠানে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। খুবই ইন্টার্যাক্টিভ সেশন ছিল। মিউচুয়াল ফান্ড-এ বিনিয়োগের বিষয়ে অনেকেই দেখলাম বেশ আগ্রহী। দারুণ অভিজ্ঞতা হল।যত বেশি মানুষজন এ বিষয়ে বুঝবে, জানবে, ইনভেস্ট করবে ততই ভাল।”
প্রশ্ন এবং উত্তর পর্বের বিজয়ীরা এই অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁদের বক্তব্য রাখেন।
বেহালা থেকে কস্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, অশোক কুমার রায় জানান, “কানাড়া রোবেকো মিউচুয়াল ফান্ড ও আনন্দবাজার পত্রিকার এই উদ্যোগকে প্রশংসা করতেই হয়। আমি নিজে তো মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করবই, অন্যদেরও পরামর্শ দেব।”
লেকগার্ডেনস্ থেকে রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার, অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমেই এত সুন্দর উদ্যোগের জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি উপকৃত হয়েছি, যারা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন, তারাও অনেক তথ্য জানতে পেরেছে।”
বজবজ থেকে বিনিয়োগকারী অভিজিৎ দাস বলেন, “মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে খুব সহজে এনারা বুঝিয়েছেন। এমন অনুষ্ঠান আরও বেশি হওয়া উচিত।”
হাওড়ার সার্ভিসম্যান, দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, “মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমি চাই আরও অনেক মানুষ এভাবে বিনিয়োগ করে উপকৃত হোক।”
কলকাতার রেলওয়ে কর্মী, মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু বলেন, “সঞ্চয়ের সহজপাঠ অনুষ্ঠানে খুব সুন্দরভাবে বিনিয়োগের নিয়ম বোঝানো হল। আমার খুব ভাল লেগেছে। আমার মতোন অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে আগ্রহী হবে।”
এটি একটি স্পনসর্ড প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনটি ‘কানাড়া রোবেকো’—এর সঙ্গে এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।