পরিকাঠামো গড়তে ঘোষণা পরের সপ্তাহে

১০০ লক্ষ কোটির প্রকল্পে সঙ্গী প্রশ্নও

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশে ‘বিশ্ব মানের পরিকাঠামো’ গড়তে পাঁচ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ বার ১০০ লক্ষ কোটি টাকার নতুন ‘স্বপ্ন’ নিয়ে আসছে মোদী সরকার।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশে ‘বিশ্ব মানের পরিকাঠামো’ গড়তে পাঁচ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারি সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই তার প্রথম দফার প্রকল্পগুলি ঘোষণা করবে কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আশা, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ১০টি প্রকল্প ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, লগ্নির জন্য এত টাকা আসবে কোথা থেকে?

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৪.৫%। চলতি অর্থবর্ষে তা ৫ শতাংশে আটকে থাকবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস। এ দিকে ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চান মোদী। হিসেব অনুযায়ী, তার জন্য পাঁচ বছরে পরিকাঠামোয় অন্তত প্রায় ১০০ লক্ষ কোটি টাকা ঢালতে হবে। তা মেনেই প্রধানমন্ত্রী ওই অঙ্কের পরিকাঠামো প্রকল্পের কথা বলেছেন। অনেকের মতে, অর্থনীতিতে জোয়ার আনতে দ্রুত এই ঘোষণা করে লগ্নিকারীদের মনোভাব চাঙ্গা করতে চাইছেন তিনি।

Advertisement

সরকারি সূত্র বলছে, ভারতমালার অধীনে যে সব জাতীয় সড়ক প্রকল্প চিহ্নিত হয়েছিল, সেগুলিকে এই ১০০ লক্ষ কোটির প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যে সব পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে, তার মধ্যে কোনগুলি দ্রুত শেষ করা যায়, তা বাছাই করা হয়েছে। এ জন্য আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সও তৈরি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সূত্রের খবর, টাস্ক ফোর্সের কাজ প্রায় শেষ। জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ ছাড়পত্র দেখে পরের বছর থেকে যে সব প্রকল্প শুরু করা যাবে, তার তালিকা তৈরি। বাকি শুধু ঘোষণা।

সাধারণত সরকারি খাত থেকে এখন পরিকাঠামোয় গড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। চলতি বছরের বাজেটে মূলধনী খাতে বরাদ্দ ৩.৩৮ লক্ষ কোটি। পরিকাঠামোয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি আরও ৪.৫ লক্ষ কোটি ঢালবে। সব মিলিয়ে ৭.৮৮ লক্ষ কোটি। কিন্তু পাঁচ
বছরে ১০০ লক্ষ কোটি খরচ করতে হলে বছরে ২০ লক্ষ কোটি লাগবে। বাকি টাকা আসবে কোথা থেকে?

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেসরকারি লগ্নি আনার চেষ্টা হচ্ছে। জাতীয় পরিকাঠামো লগ্নি তহবিলে টাকা ঢালতে পারে অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশের পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থা। সে কারণেই জাতীয় সড়ক প্রকল্প তৈরির এক বছরের মধ্যেই তা বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে লগ্নির টাকা উঠে আসে।’’ মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, এই বিপুল টাকা খরচ হলে বৃদ্ধি চাঙ্গা হবে। পরিকাঠামো, নির্মাণ সংস্থাগুলির ব্যবসা বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থানও।

তবে পরিসংখ্যান মন্ত্রকেরই হিসেব, ৩৬০টি পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ না হওয়ায়, তাদের খরচ ৩.৮৮ লক্ষ কোটি বেড়েছে। এই সব ক’টি প্রকল্পেরই খরচ ১৫০ কোটির বেশি। মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, নজরদারিতে থাকা ১,৬০৮টি প্রকল্প সময়ে শেষ হয়নি। বাকিগুলির হিসেব চলছে। এই প্রকল্পগুলির মোট খরচ ছিল প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি নজরদারি থাকা সত্ত্বেও যদি ২০ লক্ষ কোটির প্রকল্প সময়ে শেষ করা না যায়, তা হলে ১০০ লক্ষ কোটির কাজ কী ভাবে সময়ে শেষ হবে? উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন