প্রতীকী ছবি।
ঋণ বাড়িয়ে ও খরচ কমিয়েই টানাটানির সংসার চালানোর পথে নরেন্দ্র মোদী।
প্রত্যাশা মতো আয় হচ্ছে না। এ দিকে খরচ ছাঁটাও মুশকিল। মোদী-জেটলির সরকারকে তাই আরও ধার করেই চালাতে হবে সরকারি খরচ। সেই কারণেই চলতি বছরে বাজার থেকে অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত বুধবার জানাল অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। পাশাপাশি এ দিনই স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ এক ধাক্কায় কিছুটা কমিয়ে দিল তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, এর লক্ষ্য সরকারি খরচ বাঁচানোর ব্যবস্থা করা।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর পর থেকে রাজস্ব আদায় ধাপে ধাপে কমছে। সেই কারণেই ২০১১-’১২-র পরে এই প্রথম বাজেট-অতিরিক্ত ধার করতে হচ্ছে সরকারকে। যার ফলে রাজকোষ ঘাটতি নির্দিষ্ট অঙ্কে বেঁধে রাখার লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শেয়ার বাজারেও অস্থিরতা ছড়াবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে তা বোঝা যাবে আগামী কাল।
বাজেটে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জাতীয় আয়ের ৩.২ শতাংশে বেঁধেছিলেন অর্থমন্ত্রী। মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫.৮০ লক্ষ কোটি টাকা। জানুয়ারি-মার্চে অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি টাকা ধার করলে, ঋণ দাঁড়াবে ৬.৩০ লক্ষ কোটি টাকা। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের যুক্তি, ‘‘এর ফলে রাজকোষ ঘাটতির হার বাড়ার আশঙ্কা থাকছে।’’ তবে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, সরকারি ঋণপত্র থেকে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হলেও ট্রেজারি বিল মারফত স্বল্প মেয়াদি ঋণ কমানো হচ্ছে। তাই মোটের উপর ঋণের অঙ্ক বাড়ছে না।
বাজেটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাবদ আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম হবে বলে অবশ্য অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অনুমান। প্রায় ২০০ পণ্যে জিএসটি-র হার কমানোয় পরোক্ষ কর থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আয় কমতে পারে। আর্থিক বৃদ্ধির হার আশানুরূপ না-হওয়ায়, আয় ও কোম্পানি কর থেকেও ২৫ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কমার সম্ভাবনা।
এ দিকে, এপ্রিল-অক্টোবরের মধ্যেই রাজকোষ ঘাটতির ৯৬.১% বা ৫.২৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এপ্রিল-ডিসেম্বরের হিসেবে রাজকোষ ঘাটতির হার জাতীয় আয়ের প্রায় ৬.৩%।
চাপের মুখে গত কয়েক মাসে খরচে রাশ টানতে শুরু করেছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু বেশি খরচ ছাঁটতে গেলে অর্থনীতির স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমারেরও মত, ‘‘ঘাটতির লক্ষ্য ছোঁয়ার থেকে অর্থনীতির স্বাস্থ্য অনেক বেশি জরুরি।’’ লোকসভা ভোটের আগে ২০১৮-তেই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ফলে সেখানেও খরচ ছাঁটাই করা মুশকিল। শিল্পমহলও চাইছে, সরকার ঘাটতি ভুলে খরচ বাড়াক।
এ দিকে, রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত জিএসটি সংশোধনী বিল বুধবারই লোকসভায় পাশ হয়েছে। বিলাসবহুল গাড়ির সেস ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫% করার কথা এই বিলে বলা হয়েছে।
অশনি সঙ্কেত
• বাজেটের হিসেবের বাইরে ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকার
• জিএসটি খাতে রাজস্ব আয় নিয়ে অনিশ্চয়তা
• আর্থিক বৃদ্ধির হাল তেমন না-ফেরায় আয় কর, কোম্পানি করও আশানুরূপ নয়
• লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে রাশ টানা যাচ্ছে না ব্যয়ে
• গ্রাম-গরিব-চাষিদের জন্য আরও বেশি খরচ করতে দায়বদ্ধ সরকার
• সরকারি খরচ কমলে কঠিন হবে অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরানো
• রাজকোষ ঘাটতি বাড়লে ধাক্কা খাবে শেয়ার বাজার
• চড়ছে মূল্যবৃদ্ধি, এ বার ঘাটতিও বাড়লে সুদ কমাবে না আরবিআই