এবিজি নিয়ে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ফের এক দফা আইনি লড়াই শুরু হতে চলেছে বলে জাহাজ মন্ত্রক সূত্রের খবর। —ফাইল চিত্র।
কিছুতেই আর শেষ হচ্ছে না এবিজি মামলা। এ বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লন্ডনের বাণিজ্যিক আদালতে আপিল মামলা করল তাদের ফরাসি সহযোগী লুই দ্রেফুস আর্মাতিয়োর (এলডিএ)। সংস্থাটির বক্তব্য, হলদিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গোটানোর আগে যথেষ্ট নিরাপত্তা দেয়নি ভারত। এর আগে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত সেই দাবি অগ্রাহ্য করে এলডিএর উপর জরিমানা ধার্য করেছে। সেই জরিমানার বিরুদ্ধেই এ বার লন্ডনের আদালতে গিয়েছে ফরাসি সংস্থা। ফলে এবিজি নিয়ে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ফের এক দফা আইনি লড়াই শুরু হতে চলেছে বলে জাহাজ মন্ত্রক সূত্রের খবর।
সেপ্টেম্বরে লন্ডনের সালিশি আদালত রায়ে বলেছিল, সংস্থাটি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে না পারার যে অভিযোগ তুলেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। রায়ে আদালত জানিয়েছিল, হলদিয়া বন্দরে এলডিএর ৫১% লগ্নি ছিল না। তাই ভারত-ফ্রান্স বিনিয়োগ নিরাপত্তা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় আসছে না সংস্থা।
এলডিএ কেন্দ্রের কাছে এ দেশে ব্যবসা করতে না পারার জন্য যে ২২৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল, তা-ও মানেনি আদালত। একই ভাবে কলকাতা বন্দরও ফরাসি সংস্থার কাছে ২২৭ কোটি টাকা চেয়েছিল। সেই দাবিও মানা হয়নি। তবে এই মামলা চালানোর খরচ হিসাবে কেন্দ্রকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ এলডিএকে দিয়েছিল আদালত। এখন এই জরিমানার নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে আপিল মামলা করল সংস্থা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের এপ্রিলে এবিজি ইনফ্রালিজিস্টিক এবং তার সহযোগী সংস্থাকে হলদিয়া বন্দরের ২ ও ৮ নম্বর বার্থে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের বরাত দেয় কলকাতা বন্দর। পরে এবিজির সঙ্গে গাঁটছড়া বাধে ফরাসি সংস্থা এলডিএ। তৈরি হয় এইচবিটি নামে একটি নতুন সংস্থা। সেই সংস্থার অভিযোগ ছিল, বরাত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় ঠিকাদাররা তাদের কাজ করতে বাধা দিয়েছে। এ নিয়ে কয়েক মাসের টানাপোড়েনের পর ২০১২ সালের অক্টোবরে বন্দরের সঙ্গে পণ্য খালাসের চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবিজি-এলডিএ। কারণ হিসাবে তারা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা, স্থানীয় ঠিকাদারদের প্রতি বন্দরের পক্ষপাতিত্ব এবং ব্যবসায় তাদের লোকসানের কথা তুলে ধরে। এ নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে দেশের সর্বোচ্চ সালিশি আদালতে এই মামলার বিচার এখনও চলছে। তাতে কলকাতা বন্দর এবিজি-এলডিএ’র কাছে ৭৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল। অন্য দিকে এলডিএ চেয়েছিল ২৯০ কোটি। এই মামলা চলাকালীনই এলডিএ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে চলে যায়।
ফরাসি সংস্থার মূল বক্তব্য ছিল, ভারত-ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ফরাসি সংস্থার বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য ভারত। কিন্তু চুক্তি অনুসারে, কোনও যৌথ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ৫১% লগ্নি থাকলে তবেই তারা কোনও আন্তর্জাতিক আদালতে আসতে পারে। সেই যুক্তিতেই অটল থাকে ভারত। আদালতও তা মেনে নিয়েছে। মামলা করার যোগ্যতা নেই বলায় সালিশি আদালত কী ভাবে এলডিএকে হলদিয়া বন্দর ছাড়তে হয়েছিল, সেই অবস্থা আর বিচার করেনি। এ বার সে সব নিয়েই আর এক দফা আইনি লড়াই শুরু হতে চলেছে।