রাস্তা চওড়া করার জন্য তথ্য দেয়নি রাজ্য সরকার। বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনা করছে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রস্তাবিত ৬০০০ কোটি টাকার রসুলপুর সমুদ্র-বন্দর প্রকল্পে বিনিয়োগকারী সংস্থা আম্মালাইন্স। সেই বিকল্প অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাপেক্ষ হলেও আর কোনও উপায় হাতে নেই বলে দাবি তাদের।
রসুলপুর থেকে কিছুটা দূরে জুনপুট-হরিপুর অঞ্চলে এই গভীর সমুদ্র-বন্দর তৈরি হওয়ার কথা। প্রকল্পের জন্য জুনপুট থেকে কাঁথি পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাবতীয় পণ্য যাওয়া আসার জন্য এই সংযোগ জরুরি বলে দাবি বন্দর নির্মাতা আম্মালাইন্স-এর। কিন্তু জুনপুট-কাঁথি সড়কের উন্নয়ন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঘুরপথে হরিপুর থেকে কাঁথি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করছে সংস্থা।
আপাতত জুনপুট থেকে কাঁথি পর্যন্ত রাস্তা মাত্র দেড় লেন চওড়া। কমপক্ষে তিন লেন না-তৈরি করতে পারলে পণ্য পরিবহণ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাস্তা চওড়া করার জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। কারণ জমি বহু আগেই নিয়ে রেখেছে সরকার। কিন্তু সেই জমি অধিগ্রহণের মানচিত্র না-পেলে রাস্তার কাজ এগোনো যাবে না। সংস্থার অভিযোগ, অর্থ ও জমি নয়, তথ্যের অভাবে ওই কাজ করা যাচ্ছে না।
মোট তেরোটি মৌজার জমি এই রাস্তায় রয়েছে। তাই রাস্তা চওড়া করার জন্য এই জমির মানচিত্র ও বিবরণ জরুরি। দক্ষিণ রামপুর, দক্ষিণ গোপীনাথপুর, খাকিনা, বেণীপুর, বিচুনিয়া-সহ তেরোটি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, পূর্ত দফতর ও শিল্প দফতরের কাছে অধিগৃহীত জমির মানচিত্র চায় সংস্থা। ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পূর্ত ও শিল্প এই তিন দফতরের কাছে আর্জি জানিয়েও মেলেনি সেই তথ্য। দু’মাস কেটে গেলেও সেই তথ্য দেয়নি কোনও দফতর।
আম্মালাইন্সের দাবি, প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিকল্প হরিপুর-কাঁথি পথে ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হবে। তার জন্য জমির মালিকদের থেকে জমি কিনবে সংস্থা। জমি কেনার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে দাবি সংস্থা কর্তৃপক্ষের। গোটা বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ও খরচসাপেক্ষ হলেও আর কোনও রাস্তা খোলা দেখছে না আম্মালাইন্স।
প্রথম থেকেই এই প্রকল্প পদে পদে বাধার মুখে পড়ছে। রসুলপুরে বন্দর তৈরি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় বাম আমলে। পশ্চিমবঙ্গে গভীর সমুদ্র-বন্দর তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পরেই এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ দেখায় বন্দর পরিকাঠামো গড়ায় দক্ষ সংস্থা আম্মালাইন্স। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আগ্রহপত্র জমা দেয় তারা। রাজ্য সরকার তাদের লেটার অব ইনটেন্ট দেয়। এর পরে তৈরি হয় প্রকল্পের প্রাথমিক রিপোর্ট। তৈরি হয় টেকনো-ফিজিবিলিটি রিপোর্ট ও প্রকল্পের প্রাথমিক নকশা। এত দূর এগিয়েও অবশ্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিপত্র সই হয়নি।
সরকারি লাল ফিতের ফাঁসের পাশাপাশি প্রকল্পের পথে নতুন বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হলদিয়ায় শিল্প প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়। আটকে যায় রসুলপুরের ছাড়পত্রও। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি তার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।