মনের ছোঁয়া হারালে ডিজিটালও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন

দু’জনেরই বক্তব্য, বিদ্যুৎ গতির ইন্টারনেট, অফুরান ডেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ আর নিত্যনতুন উদ্ভাবনের হাত ধরে জীবনকে আমূল বদলে দিচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কিন্তু মন, আর মানুষের অসুবিধা বোঝার ক্ষমতা তার কারিগরদের না থাকলে, প্রযুক্তি কী ভাবে বুমেরাং হতে পারে, তার উদাহরণ পেশ করলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

পড়শি: ইনফোকমের মঞ্চে অমিত মিত্র ও মুস্তাফা জব্বার। নিজস্ব চিত্র

ভাষা এক।

Advertisement

মঞ্চ এক।

এমনকি এক উদ্বেগও!

Advertisement

ডিজিটাল ডানায় ভর করে জীবন বিদ্যুৎ গতিতে বদলাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ওই ডিজিটাল প্রযুক্তির মানবিক মুখ না থাকলে, সেই ছিদ্র দিয়েই কি কালসাপ সেঁধিয়ে যাবে সভ্যতার বাসরঘরে। মনের ছোঁয়াহীন প্রযু্ক্তিই কি তখন হয়ে উঠবে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন? বৃহস্পতিবার এবিপি সংস্থা আয়োজিত ইনফোকমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে ডিজিটালের অনন্ত সম্ভাবনার পাশাপাশি এই আশঙ্কার কথাও শুনিয়ে গেলেন দুই বাংলার মন্ত্রী। রাজ্যের শিল্প, অর্থ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং বাংলাদেশের ডাক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার। চিন্তার কারণ দেখছে শিল্পও।

দু’জনেরই বক্তব্য, বিদ্যুৎ গতির ইন্টারনেট, অফুরান ডেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ আর নিত্যনতুন উদ্ভাবনের হাত ধরে জীবনকে আমূল বদলে দিচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কিন্তু মন, আর মানুষের অসুবিধা বোঝার ক্ষমতা তার কারিগরদের না থাকলে, প্রযুক্তি কী ভাবে বুমেরাং হতে পারে, তার উদাহরণ পেশ করলেন তাঁরা।

অমিতবাবু বলছিলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি কী ভাবে মানুষের ভাল করতে পারে, তার উদাহরণ ভুরিভুরি। তা কাজে লাগে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে। ঠিক সময়ে বীজ বুনে ঠিক দামে ফসল বেচে মুনাফা ঘরে তুলতে পারেন চাষি। আটকানো যেতে পারে হার্ট অ্যাটাকও! এ প্রসঙ্গে রাজ্যে ই-জেলা, ই-অফিস, ই-কর ব্যবস্থার সাফল্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি।

একই ভাবে জব্বারের কথায় উঠে আসে বাংলাদেশি অর্থনীতির ডিজিটাল ঘোড়ায় সওয়ার হওয়ার কথা। তাঁর দাবি, স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২-৭৩ সালে এই পড়শি মুলুকে বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। গড় আয়ু ৩৩ বছর। মাথাপিছু গড় আয় ৭০ ডলার। সেখান থেকে ৭০ বছর আয়ু, ১,৭৫২ ডলার গড় আয় আর ৪.৫ লক্ষ কোটির বাজেটের দেশ হয়ে ওঠার জিয়নকাঠি নাকি ডিজিটালই।

কিন্তু তাঁদের দু’জনেরই প্রশ্ন, এই ডিজিটাল দুনিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির হাত ধরতে না পেরে যাঁরা ছিটকে যাচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? চালকবিহীন গাড়ি এলে কী হবে পৃথিবীর ১.২ কোটি ড্রাইভারের? সেলাইয়ের কাজ যন্ত্র কেড়ে নিলে কোথায় যাবেন দরজিরা? মার্কিন মুলুকে নিজের ছাত্রজীবনের গল্প শুনিয়ে অমিতবাবুর প্রশ্ন, কোথায় গেলেন পিটসবার্গের খনি শ্রমিকরা? প্রশ্ন রাখলেন, এই সমস্যা আছে বলেই কি মাত্র ৪% বেকারত্বের দেশ আমেরিকাতেও জনসমর্থন রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য?

ইনফোকমে এ বারের বিষয় ‘হোয়েন ডিজিটাল বিকামস হিউম্যান’-এ প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছে শিল্পও। এরিকসন ইন্ডিয়ার এমডি অমিতাভ রায় ও অ্যাক্সেঞ্চার টেকনোলজিসের গ্রুপ চিফ এগ্‌জিকিউটিভ ভাস্কর ঘোষ জোর দিলেন নতুন প্রযুক্তির উপযুক্ত দক্ষতা অর্জনে। বিশেষজ্ঞ স্টিভেন ভ্যান বেলহ্যাম বললেন, বাচ্চার কান্না থামাতে মোবাইলের কেরামতি নয়, আস্থা থাকুক কোলে তুলে আদরে। এবিপির এমডি-সিইও ডি ডি পুরকায়স্থর কথায়, ডিজিটাল দুনিয়াতেও তাই মনের ছোঁয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন