ফিও-র মঞ্চে অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।
শিল্পের বেহাল দশা নিয়ে চাপান-উতোরের মধ্যেই রফতানিকারীদের এক সভায় রাজ্যের সাফল্যের ছবি তুলে ধরার সব রকম চেষ্টা করলেন শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। পূর্বাঞ্চলের যে-সব সংস্থা উল্লেখযোগ্য রফতানি করেছে, তাদের ১৮ জনকে পুরস্কৃত করতেই বৃহস্পতিবার ওই সভার আয়োজন করে রফতানি- কারীদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন্স (ফিও)। যার মঞ্চ থেকে অমিতবাবু বলেন, “ওঁদের ১৬ জনই পশ্চিমবঙ্গের। যাঁরা মোট ১১ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছেন।” এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রফতানি দ্বিগুণ করার আর্জিও জানান অমিতবাবু। তিনি বলেন, গত অর্থবর্ষে এ রাজ্য থেকে ৬২,৭৩৫ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। ফিও সদস্যদের কাছে শিল্পমন্ত্রী আর্জি, তা দ্বিগুণ করে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিন তাঁরা। তবে তার সময়সীমা ফিওকেই ঠিক করতে বলেছেন তিনি।
রফতানি দ্বিগুণের ব্যাপারে আশাবাদী ফিও। তবে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রফিক আহমেদ জানান, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে যেমন নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রকে আলাদা করে সেগুলিতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, তেমনই কী কী সমস্যা রয়েছে, তাও চিহ্নিত করা জরুরি। এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে ফিও।
রফিক জানান, গোটা দেশ থেকে এখন ৩২,৫০০ কোটি ডলারের (১৯,৭৩,০৭৫ কোটি টাকা) পণ্য রফতানি হয়। ২০১৮-’১৯-এ তা ৭৫,০০০ কোটি ডলারে (৪৫,৫৩,২৫০ কোটি টাকা) নেওয়ার লক্ষ্য স্থির হয়েছে। কী ভাবে তা সম্ভব, সেই দিশা পেতে নানা রাজ্যে সমীক্ষা চলছে। পশ্চিমবঙ্গেও তা হবে। এ প্রসঙ্গে ফিও-র পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান রমেশ কুমার অগ্রবাল বলেন, ২০১৩-’১৪ সালে ভারতের রফতানিতে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ৩.৪%। অমিতবাবু বলেন, রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের রফতানিই ৩২,৮৯৬ কোটি টাকার।
সাফল্যের খতিয়ান দিতে মুখ্যমন্ত্রী সভা মঞ্চেই আমলাদের দাঁড় করিয়ে কাজের ফিরিস্তি চান। অমিতবাবুও এ দিন কার্যত সে ভাবেই ফিও সদস্য ও পুরস্কার প্রাপকদের একাংশকে রাজ্যে তাঁদের লগ্নির সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে বলেন।
এ রাজ্যে লগ্নির জন্য ফিও সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের (চিন, মায়ানমার, রাশিয়া, বাংলাদেশ) কূটনৈতিক কর্তাদের কাছ থেকেও প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন শিল্পমন্ত্রী।
আহমেদ কল্যাণীর গয়েশপুরে জুতো কারখানা গড়তে শুরু করছেন বলে শিল্পমন্ত্রী নিজেই জানান। সভাতেই তাঁকে প্রশ্ন করেন, “আপনি আমার কাছে যে-সব সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন, তা কত দিনে মিটেছে?” আহমেদ জানান, এক দিনেই। আপাতত ওই কারখানায় দৈনিক দু’হাজার জুতোর অংশ তৈরি হবে। পুরো কারখানা চালু হলে দৈনিক চার হাজার জুতো তৈরি হবে। সবই রফতানি হবে। তাঁদের চেন্নাই কারখানার অনেক কর্মীই গয়েশপুরের বাসিন্দা। কারখানা চালু হলে তাঁরা সেখানেই ফিরে আসবেন। রাজ্যে দক্ষতা ফিরিয়ে আনার কৃতিত্বও তাই দাবি করেন অমিতবাবু।