অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছর কেটে গেলেও তেমন বেসরকারি লগ্নি আসেনি। কিন্তু তারা মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টেনেছে। অকালবৃষ্টি সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেই রাখা যাবে বলে আশা। বিশ্ব বাজারে তেলের দামও মাত্রাছাড়া হবে না। এই যুক্তি দেখিয়েই আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম।
২ জুন ঋণনীতি পর্যালোচনায় বসবেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মনে করছেন, সুদ কমলেই শিল্পের জন্য ঋণ সহজলভ্য হবে। নতুন বিনিয়োগ শুরু হবে। আজ সুব্রহ্মণ্যমও বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির হারের যে-পূর্বাভাস রয়েছে, রাজকোষ ঘাটতিতে যে-ভাবে রাশ টানা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি দেখে আমি মনে করি, সুদের হার কমানোর সুযোগ আছে।’’ তাঁর যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রার থেকেও মূল্যবৃদ্ধি কমই থাকবে। প্রসঙ্গত, চড়া হারে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকলে সাধারণত সুদ কমানোর পথে হাঁটে না শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কারণ, সুদ কমলে শিল্প ও সাধারণ মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়লে তা বাড়তি চাহিদার হাত ধরে আরও মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগায়।
পাশাপাশি ডলারে টাকার দর সামান্য কম রাখাই প্রয়োজন বলেও যুক্তি দিয়েছেন সুব্রহ্মণ্যম। বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও কয়েক দিন আগে একই যুক্তি দিয়ে বলেন, টাকার দর কমলে বিদেশের বাজারে ভারতীয় রফতানি পণ্যের দর কমবে। ভারতীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে। আজ নির্মলাকে সমর্থন জানিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি, চিনও আগ্রাসী নীতি নিয়ে ডলার কিনে বাজারে বিদেশি মুদ্রার জোগান কমিয়ে রাখছে। যাতে ডলারের দাম বাড়ে ও চিনের মুদ্রার দর কমে। চিন দ্রুত গতিতে সুদের হারও কমাচ্ছে। একটাই উদ্দেশ্য, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানো।
তবে সুব্রহ্মণ্যম মেনে নিয়েছেন, বেসরকারি লগ্নি না-আসাটা এখনও চিন্তার কারণ। মূলত বাজারের চাহিদা এবং কিছুটা সরকারি বিনিয়োগ— এই দেড়খানা ইঞ্জিনে ভর করেই যে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে, তা-ও মানছেন তিনি। কেন আসছে না বেসরকারি বিনিয়োগ? সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি, যখন অর্থনীতির চাকা দ্রুতগতিতে ছুটছিল, বৃদ্ধি প্রায় ১০% ছুঁয়েছিল, সে সময়ে মাত্রাতিরিক্ত হারে বিনিয়োগ এসে গিয়েছে। যে-সব প্রকল্পে লগ্নি হয়েছিল, সেগুলি পরে বাজারের পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় বা লাল ফিতের ফাঁসে আটকে রয়েছে। এই থমকে থাকা প্রকল্পের বোঝা নামাতে হবে দু’ভাবে। এক, আটকে থাকা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। দুই, অলাভজনক প্রকল্প থেকে লগ্নিকারীদের বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা সহজ করতে হবে।
কিন্তু সেই কাজ কি হচ্ছে?
অর্থ মন্ত্রকের দাবি, কাজ শুরু হয়েছে। আজই জেটলি ঘোষণা করেছেন, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পগুলির সমস্যা খতিয়ে দেখতে বিজয় কেলকরের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়েছে। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় রাজ্যগুলি থেকে যে ৭৮টি প্রকল্পের প্রস্তাব এসেছিল, তার মধ্যে ৬৪টি শুরু হয়নি। কমিটি এগুলির সমস্যা খতিয়ে দেখে সমাধানের রাস্তা বাতলাবে। বেসরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও লাল ফিতের ফাঁস কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে। শিল্পমহল যে মোদী সরকারের সঙ্গে একমত, তা অবশ্য নয়। এইচএসবিসি-র ভারতীয় প্রধান নয়না লাল কিদোয়াই অভিযোগ তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশি লগ্নিকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু দেশের শিল্পপতিদের এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অর্থ মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, দেশের শিল্পপতিদের স্বার্থেই তাঁরা সুদ কমানোর দাবি করছেন। পাইকারি দাম কমেছে ২.৭%। খুচরো মূল্যবৃদ্ধিও ৫ শতাংশের নীচে। কিন্তু অনাবৃষ্টি-অকালবৃষ্টি এবং তেলের দাম ফের বাড়ায় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার যুক্তি, তেল ব্যারেলে ৫০-৮০ ডলারের মধ্যেই থাকবে। অকালবৃষ্টি হলেও যথেষ্ট শস্য মজুত আছে। তা ঠিক সময়ে বাজারে ছাড়লে দাম কমই থাকবে।