মাস কয়েক আগেই দু’টি সেস বসেছিল বিমায়। কৃষি-কল্যাণ ও স্বচ্ছ ভারত সেস। তাতে প্রিমিয়াম গোনার খরচ বেড়েছে এক শতাংশ। এ বার জিএসটি চালুর পরে অধিকাংশ বিমা-পলিসির প্রিমিয়ামের বোঝা আবার বাড়তে চলেছে প্রায় ৩%। জীবনবিমার এনডাওমেন্ট পলিসি বা অ্যানুইটিতে অবশ্য তা কিছুটা কম। কিন্তু খরচ সেই বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ভারতের মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার বিশাল অংশ এখনও বিমার সুরক্ষার বাইরে, সেখানে তার প্রিমিয়াম গোনার খরচ সরকার এ ভাবে বাড়ায় কী ভাবে?
জিএসটি জমানায় কর বৃদ্ধির কোপে পড়েছে জীবন ও সাধারণ বিমা। জীবনবিমায় পুরো প্রিমিয়ামে কর গুনতে হয় না। তা লাগে ঝুঁকির জন্য গোনা অঙ্কটুকুর উপরে। যে-টাকা লগ্নি খাতে নেওয়া, তাতে কর লাগে না। সাধারণত এনডাওমেন্ট পলিসিতে প্রিমিয়ামের ২৫% জীবনের ঝুঁকির জন্য নির্দিষ্ট। আগে প্রথম বছরে তাতে ১৫% পরিষেবা কর (সেস সমেত) লাগত। সেখানে জিসটি ১৮%।
এনডাওমেন্ট পলিসিতে বছরে প্রিমিয়াম যদি ১০০ টাকা হয়, প্রথম বছরে তার ২৫% অর্থাৎ ২৫ টাকার উপরে ১৮% জিএসটি নেওয়া হবে। যা মোট প্রিমিয়ামের ৪.৫%। দ্বিতীয় বছর থেকে ওই হার অবশ্য অর্ধেক (২.২৫%) হবে। যেমন আগে হত।
যে-সমস্ত পেনশন প্রকল্পে এক লপ্তে প্রিমিয়াম (সিঙ্গল প্রিমিয়াম) দিতে হয়, সেখানে করের হার ১.৫% থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৮%। বাকি প্রায় সমস্ত জীবন এবং সাধারণ বিমা পলিসিতে করের হার ৩০০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ১৮%।
সাধারণ বিমার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা বিমা, গাড়ি বিমা, বাড়ি বিমা ইত্যাদি। আর রাইডার হল কোনও নির্দিষ্ট জিনিসের জন্য নেওয়া বাড়তি কভারেজ। যেমন অনেকে স্বাস্থ্যবিমায় ক্রিটিক্যাল ইলনেসে তা নেন।
বিমায় কর বৃদ্ধির সমালোচনা করে ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স কর্পোরেশনের প্রাক্তন কর্তা এন বাঞ্চুর বলেন, ‘‘এমনিতেই এ দেশে বিমা পলিসি অনেকেই কিনতে চান না। তা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিক্রি করতে হয়। জনসংখ্যার মাত্র ০.৭% সাধারণ বিমার আওতায়। জীবনবিমার ক্ষেত্রে তা ২.৭২%। তাই সরকারের যেখানে বিমার প্রসারে উদ্যোগী হওয়ার কথা, সেখানে কর বাড়ায় তাতে বরং বাধা সৃষ্টি হবে।’’
মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সমরাজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘অনেক দেশে বিমার প্রিমিয়ামে কর লাগে না। তাকে সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে দেখা হয়। আমাদের দেশে যা তেমন নেই বললেই চলে। তার পরেও প্রিমিয়ামে কর বৃদ্ধি বিমার প্রসারে বড় বাধা।’’