ভস্মীভূত: আগুনে পুড়েছে ব্যবসার নথি। —নিজস্ব চিত্র।
বছরে যাঁদের ব্যবসার অঙ্ক দেড় কোটি টাকার বেশি, তাঁদের আজ, বুধবারই অগস্টের রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন। সমস্ত ব্যবসায়ীকে ওই মাসের জিএসটিও জমা দিতে হবে আজকের মধ্যেই। অথচ সেই শনিবার রাত থেকে আগুনের সঙ্গে লড়াই চলছে বাগড়ি মার্কেটে। সব কিছুর সঙ্গে পুড়ে খাক পণ্য কেনাবেচার বহু নথিপত্রও। যা মাথায় হাত পড়া ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ। কারণ এই মুহূর্তে জিএসটির রিটার্ন দাখিল করা কিংবা কর জমা দেওয়ার কোনও উপায়ই আর খোলা নেই তাঁদের সামনে। ব্যবসায়ীদের আর্জি, দু’টি ক্ষেত্রেই জমার সময়সীমা বাড়াক জিএসটি কর্তৃপক্ষ।
শুধু তাই নয়, সাধারণ ভাবে যে সব ব্যবসায়ীর আয়কর রিটার্ন অডিট করতে হয় তাঁদের তা জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। বাগড়ি বাজারের এখন যা অবস্থা, তাতে ৩০ তারিখের মধ্যে ওই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়াও কঠিন বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন। তাই আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছেও সেই সময় বাড়ানোর দাবি তুলেছে তারা।
সঙ্গে আছে ক্ষতিপূরণের দাবি। বিক্রির জন্য সব ব্যবসায়ীদের দোকানেই মজুত ছিল পণ্য। যা কেনা বা তৈরির সময় কর মিটিয়েছেন তাঁরা। আগুনের লেলিহান শিখায় সেই খতিয়ানও নষ্ট হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ফলে আগের কর ফেরত পাওয়ার জন্য ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট দাবি করার কোনও উপায় নেই তেমন। জিনিসপত্রও পুড়ে খাক। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে কর ছাড়ের বন্দোবস্ত করারও দাবি জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে।
সমস্যা
• ব্যবসা দেড় কোটি টাকার বেশি হলে অগস্টের জিএসটি রিটার্ন জমার শেষ দিন আজ। সব ব্যবসায়ীকে অগস্টের করও জমা দিতে হবে আজই। অডিট করা আয়কর রিটার্ন জমার সময় ফুরোচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সংক্রান্ত বহু নথিপত্র, কম্পিউটার ইত্যাদি তো নষ্টই হয়ে গিয়েছে!
• বিক্রির জন্য মজুত পণ্য কেনা বা তৈরির সময় কর মেটানো হয়েছে। যার হিসেব দিয়ে ওই টাকা ফেরত পেতে ব্যবসায়ীরা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট দাবি করেন। কিন্তু বহু পণ্য পুড়ে খাক। হিসেবই বা কোথায়!
দাবি
• বাড়ানো হোক জিএসটির রিটার্ন ও কর জমার তারিখ।
• আয়কর জমার শেষ তারিখও পিছোনো হোক।
• কর দিয়ে কেনা পণ্যগুলি পুড়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কর ছাড়ের ব্যবস্থা।
কলকাতায় বিক্রয় কর কমিশনার এস মহাপাত্র জানান, ‘‘ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি লিখিত ভাবে আবেদন করলে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে জিএসটি পরিষদ এবং আয়কর দফতরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা কঠিন। রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো এবং দেরিতে কর জমা দেওয়ার জন্য জরিমানা যাতে মকুব করা যায়, সে চেষ্টা করা যেতে পারে।’’
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান মহেশ সিঙ্ঘানিয়া বলেন, ‘‘রাজ্যের বিক্রয় কর কমিশনারকে ফোনে আর্জি জানিয়েছি, বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর।’’ মহেশবাবুর কথায়, ‘‘শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, ওই বাজার চত্বরে একাধিক আয়কর এবং জিএসটি আইনজীবীর দফতর ছিল। সেগুলিও ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। রিটার্ন তৈরির জন্য অনেক ব্যবসায়ী মক্কেলেরই কর সংক্রান্ত নথিপত্র রাখা ছিল ওই সব দফতরে। তাঁরাই বা এখন হিসেব নিকেশের কাজ করবেন কী করে!’’
ক্যালকাটা চেম্বার অব ট্রেডের চেয়ারম্যান এমিরেটাস ফিরোজ আলিও জানান, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীদের রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখছি। রাজ্য সরকার এবং আয়কর দফতরের কাছে সেগুলির সুরাহার জন্য খুব শীঘ্রই লিখিত ভাবে আবেদন জানাব।’’
অবশ্য অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার্সের সভাপতি গণেশ পুরোহিত জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই নন, নানা কারণে অনেকেরই ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার অসুবিধা রয়েছে। তাই সকলের জন্যই শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর আর্জি তাঁরা আয়কর কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন। সংগঠনের জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান নারায়ন জৈনের দাবি, ‘‘আগুনে পুড়ে যাওয়ার দরুন যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য আয়কর ছাড় পেতে পারেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের এ ব্যাপারে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ সেল চালু করেছি।’’