চার দিনের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। আর্থিক ক্ষেত্রের খসড়া বিল নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে ব্যাঙ্ক-জমার সুরক্ষা সম্পর্কে ফের আশ্বাস দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। দাবি করলেন, কোনও কারণে দেশে ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও, গ্রাহকদের গচ্ছিত টাকা যাতে মার না-যায়, সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করবে কেন্দ্র।
সোমবার অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘(ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার ঘটনা ঘটলে) গ্রাহকদের গচ্ছিত পুরো টাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে সরকার। এ বিষয়ে কেন্দ্রের ভাবনা একেবারে স্পষ্ট।’’
সংসদীয় যৌথ কমিটির সামনে থাকা আর্থিক ক্ষেত্রের এই খসড়া বিল (ফিনান্সিয়াল রিজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনশিওরেন্স বিল-২০১৭) ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠছে সারা দেশে। বিরোধীদের অভিযোগ, শেষমেশ এই বিল আইন হলে, দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়ানো ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আর একশো শতাংশ নিশ্চিত থাকতে পারবেন না মানুষ। কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লালবাতি জ্বাললেও আমজনতার টাকা যাতে মার না-যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই নতুন আইন আনার তোড়জোড়।
এ দিন জেটলির অভিযোগ, এই খসড়া বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিরোধীরা। অকারণে বলা হচ্ছে যে, সঙ্কটের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের জমা ফেরতের দায় থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সমেত সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সরকার দায়বদ্ধ। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ২ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকার শেয়ার মূলধন জোগানোর সিদ্ধান্তও সেই কারণে।’’
বিতর্ক মূলত খসড়া বিলটির ৫২ নম্বর ধারা নিয়ে। সেখানে প্রস্তাব, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণার মুখে থাকলে, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হিসেবে গ্রাহকের আমানতের টাকা তাঁদের অনুমতি না-নিয়েই বাড়তি সময় আটকে রাখতে পারবে তারা। প্রয়োজনে তা বদলে দিতে পারবে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদিতে। অর্থাৎ, টাকা রাখার সময়ে ব্যাঙ্ক এবং গ্রাহকের মধ্যে তা সুদ সমেত ফেরতের যে চুক্তি থাকে, সেটি ওই সঙ্কটের পরিস্থিতিতে একতরফা ভাবে বদলে দিতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি।
এখন কোনও একটি ব্যাঙ্কে যতগুলি অ্যাকাউন্টে যত টাকাই কারও থাকুক না কেন, সেই ব্যাঙ্কের ব্যবসা লাটে উঠলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে ফেরত পাবেন তিনি। কারণ, গ্রাহকপিছু ওই টাকা বিমা করা থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বাকি টাকার পিছনেও থাকে কেন্দ্রের অলিখিত গ্যারান্টি। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নতুন আইনে এক লক্ষ টাকা ফেরতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে? থাকবে না ওই গ্যারান্টি? কর্পোরেটের ঋণ খেলাপের খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে?
অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য গোড়া থেকেই দাবি, বিমার বন্দোবস্ত নতুন আইনেও থাকবে। তারা বরং ওই অঙ্ক বাড়ানোর পক্ষপাতী। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি এখনও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারি গ্যারান্টিও থাকবে আগের মতো। বিশ্বজোড়া মন্দার সময়ে মার্কিন মুলুকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল লেম্যান ব্রাদার্সের মতো নামী ব্যাঙ্ক। দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল তারা। সেই ধাক্কায় তলিয়ে গিয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতি। সে রকম ঘটনা যাতে আগামী দিনে ভারতে না-ঘটে, আগেভাগে তা রুখতেই এই উদ্যোগ বলে মোদী সরকারের দাবি।
এই সমস্ত কিছু ছাড়াও বিলে বদলের পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় যে রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন জেটলি। তাঁর দাবি, ‘‘বিল সংসদের যৌথ কমিটির সামনে। এ বিষয়ে তারা যে সমস্ত সুপারিশ করবে, সরকার অবশ্যই সেগুলি বিবেচনা করবে।’’