নীরব-গ্রাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আস্থা

শক্তি ফিরে পেতে সময় নেবে বাজার

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কমবেশি ১২ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের সবটাই কি ব্যবসায়িক কারণে, না কি এতেও অনেক জালিয়াতি, তছরুপ, মিথ্যে তথ্য, অডিটে ফাঁক, ব্যাঙ্কঋণ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি ঘটনা জড়িত?

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

এই মুহূর্তে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) কেলেঙ্কারির জেরে নীরব-কাণ্ড নিয়েই সরব অর্থনীতি, বাজার থেকে শুরু করে রাজনীতির দুনিয়া। আর, তার নীচেই কার্যত চাপা পড়েছে বাদবাকি বিষয়।

Advertisement

সবে শুরু হয়েছিল বাজেট নিয়ে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। বিরোধীদের সমালোচনা ও কেন্দ্রের জবাব। আর্থিক ফলের খুঁটিনাটিও খতিয়ে দেখছিল বাজার। এ ছাড়া ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ খবর। কিন্তু সবই হঠাৎ চাপা পড়ে গেল নীরব মোদীর বৃহত্তম ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা সামনে চলে আসায়। টাকার অঙ্কে ১১,৪০০ কোটি ছোটখাটো ব্যাপার নয়। তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে গোটা অর্থনীতি, লগ্নি এবং ব্যাঙ্কিং জগতে এর প্রভাব আরও অনেক অনেক বড়।

এখন প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কমবেশি ১২ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের সবটাই কি ব্যবসায়িক কারণে, না কি এতেও অনেক জালিয়াতি, তছরুপ, মিথ্যে তথ্য, অডিটে ফাঁক, ব্যাঙ্কঋণ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি ঘটনা জড়িত? রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অটুট বিশ্বাস ছিল, তা বড় রকমের ধাক্কা খেল পিএনবি কেলেঙ্কারিতে। পিএনবি-র শেয়ার দর তলিয়ে যাওয়ায় লোকসান এরই মধ্যে ছাড়িয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা!

Advertisement

তবে শুধু পিএনবি নয়, ভাল নেমেছে প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ার। এতে শুধু ওই সব ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডাররা নন, বড় লোকসানে পড়েছেন ফান্ডের লগ্নিকারীরাও, বিশেষ করে ব্যাঙ্কিং ফান্ডে যাঁরা লগ্নি করেছেন। তবে শুধু ব্যাঙ্কিং শেয়ারই নয়, পড়েছে গোটা বাজারই!

বাজেট ও উঁচু মার্কিন বন্ড ইল্ড সংক্রান্ত ধাক্কা যখন বাজার সবে কাটিয়ে উঠছিল, তখনই সামনে এল এই অনভিপ্রেত ঘটনা, যার প্রভাব কাটাতে কিন্তু একটু সময় লাগবে। এর প্রভাবে যা যা হতে পারে, সেই তালিকায় রয়েছে:

• ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি দেশি -বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা কমবে।

• করদাতারাও রুষ্ট, কারণ এই লোকসানের বোঝা পরোক্ষ ভাবে তাঁদেরই বইতে হবে।

• বিষয়টি নিয়ে সঙ্কটে মোদী সরকার।

• অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারের কাছে ব্যাপারটি আদৌ ভাল নয়।

বস্তুত, অসংখ্য ছোট লগ্নিকারী পড়তি সুদের জমানায় বেশি আয়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঝুঁকেছিলেন শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি। বাজার সম্পর্কে অনভিজ্ঞ মানুষের পক্ষে পিএনবি-ধাক্কা বেশ বড়সড় হয়ে উঠতে পারে। এই সব কারণে এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলে চলবে না। এর প্রভাব ইতিমধ্যে ছড়িয়েছে বহু ক্ষেত্রে। তবে পিএনবি শেয়ার দরে ধস নামলেও ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের এখনও কোনও চিন্তার কারণ ঘটেনি।

পিএনবি-র ধাক্কায় নিফ্‌টি নেমে এসেছে ১০,৫০০ পয়েন্টের নীচে। সেনসেক্স কোনও রকমে টিকে ৩৪ হাজারের ঘরে। বাজারের পরিস্থিতি এখন বেশ অস্থির। ছোট মেয়াদে তা আরও কিছুটা নামতেই পারে। তবে বড় মেয়াদে বাজার হয়তো এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে। অতীতে এমন অনেক প্রতিকূল ঘটনা বাজার প্রত্যক্ষ করেছে। প্রত্যেক বারই কিন্তু তা কাটিয়ে উঠে সেনসেক্স পৌঁছেছিল ৩৬ হাজারে। কিছু দিন গেলেই এই ঘটনাটিও বাজার মানিয়ে নেবে বলে মনে হয়।

সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতি যদি ভাল জায়গায় থাকলে এই ধরনের ঘটনার দাগ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অর্থাৎ ২,০০০ পয়েন্টের পতনে শেয়ারে আস্থা হারালে চলবে না। বহু সংস্থা ভাল ফল করেছে। তার উপর সামগ্রিক ভাবে বাজার নামায় দাম পড়েছে বহু ভাল শেয়ারের। এ কথা মাথায় রেখে ভাল শেয়ার কেনা যেতে পারে প্রতিটি পতনে। আসলে চড়া বাজারে এই ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে সুযোগ করে দেয় কম জলে মাছ ধরার। এর জন্যই কিন্তু বসে থাকেন সুযোগসন্ধানীরা।

পিএনবি কাণ্ড বাদ দিলে গত সপ্তাহ বাজারের জন্য খুব একটা খারাপ ছিল না। বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশের পালা। ২০০০টির বেশি সংস্থাকে নিয়ে করা সমীক্ষা অনুযায়ী অক্টোবর-ডিসেম্বরে ওই সব সংস্থার গড় নিট লাভ বেড়েছে ২৭.৫%। বিক্রি বেড়েছে ১১.৫%। যা ৬টি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এই ভাল ফলের অন্যতম কারণ। অর্থনীতির জন্য যা ভাল ইঙ্গিত।

আর একটি ভাল খবর, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি জানুয়ারিতে ২.৮৪ শতাংশে নামা। ওই সময়ে রফতানি বেড়েছে ৯%। পশ্চিমী দুনিয়ার অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করায় রফতানি বাড়ছে গত কয়েক মাস ধরেই। তবে চড়া তেলের দর এখনও চিন্তার কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন