এক দিকে, মান্ধাতার আমলের কর্মসংস্কৃতি। আর অন্য দিকে, আধুনিক বাজারের ‘এখনই চাই’ মানসিকতা। দুইয়ের চাপে জেরবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল ঘুরে দাঁড়াতে দ্বিমুখী কৌশল নিচ্ছে। চাহিদা মেনে গ্রাহককে কম দামে বেশি সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এক সার্কেল থেকে দক্ষ কর্মী অন্য সার্কেলে আনতে তাঁদেরও বাড়তি সুবিধার প্রস্তাব দিচ্ছে সংস্থা।
গ্রাহক টানার দৌড়ে বেসরকারি সংস্থাগুলির চেয়ে বেশ পিছিয়েই বিএসএনএল। টিকে থাকতে ল্যান্ডলাইন ও মোবাইলে কম খরচে নানা পরিষেবা দিচ্ছে তারা। সংস্থার সিএমডি অনুপম শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, নতুন গ্রাহকদের কাছে বেশি করে তারযুক্ত ইন্টারনেট পরিষেবা (ব্রডব্যান্ড) পৌঁছে দিতে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মাসে ২৪৯ টাকায় ৩০০ জিবি ডেটা ব্যবহারের সুবিধা আনছেন তাঁরা। ছ’মাস পরে অবশ্য অন্য ‘প্ল্যান’ নিতে হবে গ্রাহকদের।
শনিবার বিএসএনএল-এর ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের সিজিএম রবীন্দ্রনাথ ঝা, জিএম অসীম কুমার সিন্হা (বিপণন) নানা সুবিধার কথা জানিয়ে দাবি করেন, রিলায়্যান্স জিও-র ৪জির চেয়ে তাঁদের ৩জি পরিষেবার খরচও কম। ভবিষ্যতে ৪জি এবং ওয়াই-ফাই সুবিধা চালুর কথাও সংস্থা জানিয়েছে। এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, প্রাথমিক ভাবে এ রাজ্যে শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, আসানসোল, খড়্গপুর ও গ্যাংটকে ৪জি পরিষেবা চালু হওয়ার কথা। কবে তা চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে সদর দফতরে আলোচনা চলছে।’’ অবশ্য আগামী মার্চের মধ্যেই রাজ্যের কয়েকটি পর্যটন এলাকায় ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালুর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জানান প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে, দিঘা, গঙ্গাসাগর ও হলদিয়া।
সুবিধা মিললেও গ্রাহকদের মাথাব্যথার বড় কারণ বিএসএনএল-এর পরিষেবার মান। যার মূলে রয়েছে খারাপ কর্মসংস্কৃতি। এটা যে এখনও বড় সমস্যা, মানছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর অভিযোগ, এ রাজ্যে বিএসএনএলের কর্মীদের মধ্যে চলে পারস্পরিক বিরোধিতার রাজনীতি। প্রায় ৭০% অফিসার পদ শূন্য। অথচ সহজে কেউ সেই সব পদে যোগ দিতে চান না। সংস্থারই আর একটি সূত্রের দাবি, অবসরের পরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় বহু পদই খালি। সেখানে কেউ যোগ দিলে বাড়তি দায়িত্বও নিতে হয়, কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই কর্মসংস্কৃতি। ভিন্ রাজ্যের অফিসারেরা তাই আসতে চান না পশ্চিমবঙ্গে। যদিও পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে বলেও দাবি কর্তাদের।
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, এই কারণে পশ্চিমবঙ্গের জন্য অফিসার পেতে তাঁদেরও সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো এখানেও কেউ বদলি হলে আগের সার্কেলের আবাসন দু’বছর ধরে রাখতে পারবেন। এবং পরে পছন্দের সার্কেলে যোগ দেওয়ার সুবিধাও পাবেন। তাঁর দাবি, এ মাস থেকেই এর সুফল মিলবে। শূন্য পদে নিয়োগ বাড়লে পরিষেবার মানও উন্নত হবে।