ফের বিপাকে বানতলা জুতো-পার্ক

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে আশার রুপোলি রেখা দেখেছিল বানতলা জুতো-পার্ক। কিন্তু জমি জটের ফাঁসে আটকে নতুন অনিশ্চয়তা চেপে বসল প্রকল্পের উপর।বহু বছর ধরে অনেক জটিলতার মুখে পড়া বানতলা জুতো-পার্কের কপালে শিকে ছিঁড়েছে গত নভেম্বরে। প্রকল্প তৈরির জন্য তহবিল জোগানোর প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে আশার রুপোলি রেখা দেখেছিল বানতলা জুতো-পার্ক। কিন্তু জমি জটের ফাঁসে আটকে নতুন অনিশ্চয়তা চেপে বসল প্রকল্পের উপর।

Advertisement

বহু বছর ধরে অনেক জটিলতার মুখে পড়া বানতলা জুতো-পার্কের কপালে শিকে ছিঁড়েছে গত নভেম্বরে। প্রকল্প তৈরির জন্য তহবিল জোগানোর প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র। সেই অনুযায়ী, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনার আওতায় ইন্ডিয়ান লেদার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (আইএলডিপি) থেকে টাকা বরাদ্দ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কেন্দ্রের চূড়ান্ত সিলমোহর পেতে দরকার পার্কের জন্য চিহ্নিত জমির মালিকানা, ব্যবহার-সহ অন্যান্য তথ্য। আর নতুন সমস্যা মাথা তুলেছে সেখানেই।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শর্ত, যে-সংস্থা পার্ক তৈরির দায়িত্বে রয়েছে, জমির মালিকানাও থাকতে হবে তারই হাতে। অথচ বানতলা জুতো-পার্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হলেও, জমির মালিক এখনও এম এল ডালমিয়া অ্যান্ড কোম্পানি। এই পরিস্থিতিতে বানতলার ১,১০০ একরের চর্মনগরীর মধ্যে পার্কের জন্য চিহ্নিত ওই ১১০ একর জমি রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার শর্ত হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে তারা।

Advertisement

চর্মশিল্পের অবশ্য পাল্টা দাবি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জমিটি তাদের জন্য বরাদ্দ। কারণ, গত ১৯৯৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই ১১০ একর চর্মজাত পণ্যের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে সেখানে জুতো-পার্ক গড়তে অসুবিধা নেই বলেই মনে করছে তারা।

প্রকল্প তৈরিতে জমি কোনও বাধা হবে না বলে দাবি করেছেন ছোট-মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ-ও। এই দফতরের আওতাতেই পড়ে চর্মশিল্প।

কিন্তু দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে দিয়ে দ্রুত বয়ে যাচ্ছে সময়। কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির মেয়াদ ফুরোচ্ছে ৩১ মার্চ। এর মধ্যে যাবতীয় তথ্য-সহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সবুজ সঙ্কেত মিললে তৈরি করতে হবে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট (ডিপিআর)। অথচ হাতে আর তেমন সময় নেই বলে পার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত লগ্নিকারীরা। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে হাতছাড়া হবে কেন্দ্রের ১২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুদানের সুযোগ।

উল্লেখ্য, রাজ্যে জুতো-পার্ক তৈরির পরিকল্পনা বহু দিনের। সেই অনুযায়ী বহু বছর আগে বানতলা চর্মনগরীর জমি চিহ্নিত করা হয়। বিনিয়োগকারীও মজুত। সব মিলিয়ে দু’ধাপে লগ্নির সম্ভাব্য পরিমাণ ১,০০০ কোটি টাকা। জুতো-পার্কে জায়গা চেয়ে ২০০৮ সালেই ৩৪টি সংস্থা আবেদন জানায়। বাম আমলে ‘কশন মানি’ বাবদ জমাও পড়ে প্রায় ২৭ লক্ষ। কিন্তু প্রশাসনিক টালবাহানায় প্রকল্প আটকে যায় বলে চর্মশিল্পমহলের অভিযোগ। তবে এখনও প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে সেই বানতলা জুতো-পার্ককেই বাজি ধরছে রাজ্যের চর্মশিল্প। যেখান থেকে দেশে ও বিদেশে জুতো বিক্রির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা বছরে যথাক্রমে ৪,০০০ ও ১,০০০ কোটি টাকা। সেখানে ইতালি, জার্মানি, তাইওয়ান ও চিনের বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগ এখনও নিশ্চিত বলেই জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। কাউন্সিল অব লেদার এক্সপোর্টসের পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান রমেশ জুনেজার দাবি, পার্কে দিনে দেড় লক্ষ জোড়া জুতো তৈরি হবে। কর্মসংস্থান হবে ৫০০০ জনের।

তবে এত দিনের আয়োজন শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখবে, নাকি নতুন করে দেখা দেওয়া অনিশ্চয়তা জল ঢালবে পুরো যজ্ঞে, তা বলবে সময়ই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement