SIR in West Bengal

এসআইআর-বিপাকে মতুয়ারা, মানছেন বিজেপি বিধায়কও

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এক সময়ে বলেছিলেন, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) যদি কোনও মতুয়ার নাম বাদ যায়, তা হলে এক-দু’বার ভোট দিতে না পারলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে এ কথায় দুশ্চিন্তা দূর হয়নি মতুয়াদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৪২
Share:

গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এক সময়ে বলেছিলেন, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) যদি কোনও মতুয়ার নাম বাদ যায়, তা হলে এক-দু’বার ভোট দিতে না পারলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে এ কথায় দুশ্চিন্তা দূর হয়নি মতুয়াদের। বরং, সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, নাগরিকত্ব না পেলে ভোটার তালিকায় কারও নাম তোলা যাবে না— তাতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে তাঁদের। এ বার সেই আশঙ্কাই কার্যত কবুল করে নিলেন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘে’র সঙ্ঘাধিপতি তথা উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর।

উত্তর ২৪ পরগনায় ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ নাম ‘নো ম্যাপিং’-এর আওতায় রয়েছে। এর বড় অংশ মতুয়া হতে পারেন বলে অনুমান সব পক্ষের। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিধায়ক সুব্রত বৃহস্পতিবার বনগাঁ শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে বলেছেন, ‘‘এটা নিয়ে দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব নেই যে, মতুয়াদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় সংশয়ের তালিকায় আছে। খসড়া তালিকায় ‘নো ম্যাপিং’-এর মধ্যে প্রচুর মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাম আছে। যাঁদের মধ্যে ২০০২ সালের তালিকায় নাম নেই, এমন মতুয়ার সংখ্যাও প্রচুর। তাঁদের কাছে কমিশনের নির্ধারিত ১২টি নথিও নেই।’’

তা হলে এখন করণীয় কী? সুব্রতের আশ্বাস, “এঁদের একমাত্র রক্ষাকবচ সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন)। সেখানে আবেদন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে। আজ না হোক, কাল নাগরিকত্ব তাঁরা পাবেন। এমন নয় যে, কেউ সিএএ-তে নাগরিকত্ব পাননি— ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ নাগরিকত্ব পেয়েছেন।” তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন জানানো হয়েছে, যেন ফাস্ট ট্র্যাকের (দ্রুত প্রক্রিয়া) মাধ্যমে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা এসআইআরের শুনানিতে যোগ দিতে পারেন।

বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছে, সিএও-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেলেও এসআইআর-এ শুনানি-পর্ব চলাকালীন সেই কাগজ হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় মতুয়াদের ওই অংশের নাম থাকবে না এবং তাঁরা ২০২৬ সালে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। সুব্রতও মানছেন, এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরে যা বলার বলবেন। কিন্তু ২০১৯ সালে সিএএ পাশ হওয়ার পরেও কেন এত দিন নাগরিকত্ব দেওয়া যায়নি? সুব্রতের যুক্তি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে ১৬৭টির বেশি মামলা হয়েছিল। সেই মামলাগুলির নিষ্পত্তি এবং আইনের ধারা তৈরিতে সময় লেগেছে।’’

এই আশঙ্কার আবহেই মতুয়া-অধ্যুষিত রানাঘাটের তাহেরপুরে কাল, শনিবার সভা করতে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। নাগরিকত্বের প্রশ্নে বিজেপির ভূমিকা সম্পর্কে মতুয়াদের বারবার সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসআইআর-পর্বে ভোটাধিকারের সূত্রে সেই বিষয়টিকে সামনে এনে ইতিমধ্যেই রাজ্যের মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ওই আশঙ্কার কথা মনে করিয়ে এসেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেও বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে নথি সংক্রান্ত সমস্যা আঁচ করে সেই কৌশলই জোরদার করতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের ন্যায্য পাওনার পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টা মতুয়াদের প্রশ্নেই প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন রাখতে চলেছে তারা।

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘে’র সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর মতুয়াদের জন্য নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন এর মধ্যে। নির্বাচন কমিশনে দাবি জানিয়েছেন। বিজেপির সুব্রতের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর মত, ‘‘ওরা আগেই জানত, মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। এত দিন চুপ করে ছিল! এখন নাটক করছে! কমিশন যে নথিগুলি চাইছে, তা মতুয়ারা কোথায় পাবেন? আমাদের দাবি, আধার কার্ডকে মান্যতা দিতে হবে।’’

মমতার পাশাপাশিই একই দাবিতে সরব থেকেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আমরা যে কথা বলে আসছিলাম, মতুয়াদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে সেই কথাই এখন বিধায়ক বলছেন। মতুয়া-সহ উদ্বাস্তুদের বলব, বিজেপির স্বরূপ চিনে নিন! প্রধানমন্ত্রী আসছেন, পারলে তিনি ঘোষণা করে যান যে, যাঁদের ভোট নিয়ে তাঁর দলের নেতারা সাংসদ ও বিধায়ক হয়েছেন, তাঁরা সকলে ২০২৬-এও ভোট দিতে পারবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নাগরিকত্বের আবেদন করলেই ভোটার তালিকায় নাম যে থাকবে না, আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম। ঝোলা থেকে এখন বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে! কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা মতোই মতুয়ারা যে হেতু অনুপ্রবেশকারী নন, তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়ার দাবি আমরা কমিশনে জানিয়েছি।’’

কিছুটা সুর নরম এখন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনুরও। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘উদ্বাস্তু মতুয়া সমাজের মানুষ যাতে সিএএ-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব পান, সে বিষয়ে শীঘ্রই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন করব।’’ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের পাল্টা বক্তব্য, “বিজেপি দীর্ঘ দিন ধরে মতুয়াদের নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন