জিএসটিতে কম আয়, চিন্তায় জেটলি 

ভাবা হয়েছিল, জিএসটি চালু হলে যে সব রাজ্যে কলকারখানা বেশি সেখানে কর বাবদ আয় কমবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যে পণ্য উৎপাদন হয় কম, ভোগ এবং লেনদেনই বেশি সেখানে আয় লাফিয়ে বাড়বে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অরুণ জেটলির কপালে ভাঁজ ফেলছে জিএসটি বাবদ আয়ের ঘাটতি। জুলাইয়ে জিএসটি চালু হয়, অগস্টে লাফিয়ে কমে মোট রাজস্ব আয়। সেপ্টেম্বরে তা সামান্য বাড়লেও প্রত্যাশার তুলনায় বৃদ্ধি অনেক কম। পাশাপাশি, প্রায় প্রতিটি রাজ্যই ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে দ্বারস্থ হচ্ছে কেন্দ্রের। দু’শোটির বেশি পণ্যে জিএসটি কমানোয় এমনিতেও ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমার কথা। সব মিলিয়ে চাপে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী জেটলি ও রাজস্ব দফতরের কর্তারা।

Advertisement

ভাবা হয়েছিল, জিএসটি চালু হলে যে সব রাজ্যে কলকারখানা বেশি সেখানে কর বাবদ আয় কমবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যে পণ্য উৎপাদন হয় কম, ভোগ এবং লেনদেনই বেশি সেখানে আয় লাফিয়ে বাড়বে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে জিএসটি জমানায় প্রায় সব রাজ্যেরই আয় হয়েছে প্রত্যাশার তুলনায় কম। এ দিকে রাজ্যগুলির প্রত্যাশা মতো আয় না হলে, আগামী পাঁচ বছর কেন্দ্রকেই সেই ক্ষতি পূরণ করে দিতে হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির যা রাজস্ব আয় ছিল, তার তুলনায় প্রতি বছর রাজস্ব আয় ১৪% হারে বাড়বে ধরে নিয়ে প্রতিটি রাজ্যের প্রত্যাশিত বা আনুমানিক আয় হিসেব করা হয়। আয় তার থেকে কম হলে, সেটাই কেন্দ্রের মিটিয়ে দেওয়ার কথা। জুলাই-অগস্টে রাজস্থান ছাড়া সব রাজ্যকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ প্রক্রিয়াগত জটিলতায় ক্ষতিপূরণ পায়নি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ক্ষতিপূরণ মেটানো হচ্ছে দু’মাস অন্তর। জুলাই-অগস্ট বাবদ রাজ্যগুলি ৮,৬৯৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ৪২৬ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বরে অবশ্য জিএসটি বাবদ আয় ২% হলেও বেড়েছে, রাজ্যগুলির জিএসটি বাবদ ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। কিন্তু বড় ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগে ভ্যাট থেকে যতটা আয় হতো, তার চেয়ে বেশি হলেও সেপ্টেম্বরে দিল্লি ছাড়া আর কোনও রাজ্যেরই প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আয় হয়নি। পুদুচেরি, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যে জিএসটি বাবদ আয় তো প্রত্যাশিত আয়ের প্রায় অর্ধেক।

Advertisement

কী ভাবে মেটানো হবে এই ক্ষতি? রাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ মেটানো হয় বিলাসদ্রব্য বা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর পণ্যে যে ২৮% জিএসটি বসে, তার উপর সেস চাপিয়ে। প্রথম দু’মাসে সেই সেস থেকে ১৫,০৬০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ফলে ৮,৬৯৮ কোটি টাকা মেটানোর পরেও তহবিলে অর্থ রয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের ঘাটতি হিসেব করে নভেম্বরে ক্ষতিপূরণ মেটানো হবে।’’

আর একটি ব্যাপার হল, শিল্পোন্নত রাজ্যে ঘাটতি বেশি হবে ভাবা হলেও সে সব রাজ্যেই বরং দেখা যাচ্ছে ঘাটতি তুলনায় কম। শিল্পোন্নত রাজ্যে উৎপাদন যেমন বেশি, তেমনই কাঁচামালও বেশি কিনছে এরা, যার অনেকটাই নিজের রাজ্যের। সেই কাঁচামালের ওপর জিএসটি দিতে হচ্ছে উৎপাদকদের, যেটা রাজ্যের তহবিলে জমা পড়ছে। এর ফলে তাদের ঘাটতি কিছুটা কমছে।

কখন কত আদায়

• জুলাই ৯৪,০৬৩ কোটি টাকা
• অগস্ট ৯০,৬৬৯ কোটি টাকা
• সেপ্টেম্বর ৯৫,১৩১ কোটি টাকা

সেপ্টেম্বরে ঘাটতি দিল্লি ছাড়া সব রাজ্যেই

২৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি ১৭টি রাজ্যে

• পুদুচেরি ৫৯% • উত্তরাখণ্ড ৫০%
• ছত্তীসগঢ় ৪৩% • বিহার ৪১% • পঞ্জাব ৩৯% • ঝাড়খণ্ড ৩২% • মধ্যপ্রদেশ ২৫%

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন