সরকারি খরচে লাগামের নির্দেশ

বৃদ্ধিতে গতি ফিরবে কী ভাবে, উঠছে প্রশ্ন

নির্দেশিকায় আর্থিক বিষয়ক দফতর বলেছে, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সাময়িক ভাবে অসামঞ্জস্য তৈরি হলে, তা আটকানো যাবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেশে বৃদ্ধির হার নেমেছে ৪.৫ শতাংশে। বাজারে চাহিদা নেই। কমেছে বিক্রিবাটা। লগ্নির ঝাঁপি খুলছে না সংস্থাগুলি। বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ায় ধাক্কা লেগেছে রফতানিতেও। এই অবস্থায় অর্থনীতির পালে হাওয়া ফেরাতে ভরসা ছিল একমাত্র সরকারি ব্যয়। কিন্তু রাজকোষের ‘হাঁড়ির হালে’ এ বার সেই খরচেই রাশ টানছে কেন্দ্র। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রকের নির্দেশ, চলতি অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খরচ বাজেট প্রস্তাবের ২৫ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে হবে বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরগুলিকে। আগে যা ছিল ৩৩%। শুধু তা-ই নয়, অর্থবর্ষের শেষ মাসে ওই হার হতে হবে ১০%। এত দিন তা বাঁধা হয়েছিল ১৫ শতাংশে।

Advertisement

নির্দেশিকায় আর্থিক বিষয়ক দফতর বলেছে, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সাময়িক ভাবে অসামঞ্জস্য তৈরি হলে, তা আটকানো যাবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে। যার হাত ধরে কমবে কেন্দ্রের অতিরিক্ত ধার নেওয়া এবং সেই বাবদ সুদে খরচ। পাশাপাশি, সরকারি খরচে রাশ টেনে বাজারে নগদ জোগান বাড়ানোও এর লক্ষ্য। যা কি না আদতে সরকারি ঋণকেই বাড়িয়ে তোলে। যদিও অনেকে বলছেন, বেসরকারি লগ্নি যেখানে দেখা যাচ্ছে না, সেখানে সরকারি ব্যয়ে রাশ টানলে বৃদ্ধি মুখ তুলবে কী ভাবে? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের অবশ্য খবর, কেন্দ্রের বড় প্রকল্পগুলির বরাদ্দে কাটছাঁট হবে না। সেগুলি আগের মতোই চলবে।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কেনাকাটা কমার জের পড়েছে কেন্দ্রের পরোক্ষ কর বাবদ আয়ে। প্রত্যক্ষ কর আদায়ও সে ভাবে আশানুরূপ নয়। আশা ছিল বিলগ্নিকরণ খাতে মোটা অঙ্ক ঘরে তোলার। কিন্তু তা-ও এখনও পর্যন্ত ফল দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে খরচে রাশ টেনে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যই রাখার চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। লক্ষ্য, যাতে রাজকোষ ঘাটতি ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা না-ছাড়ায়।

Advertisement

রাজকোষের হাল

• চলতি অর্থবর্ষে জিএসটি থেকে ৬.৬৩ লক্ষ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য বেঁধেছে কেন্দ্র। এপ্রিল-নভেম্বর, এই আট মাসে সংগ্রহের অঙ্ক ৩.৯৮ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ, লক্ষ্য ছুঁতে চার মাসে আদায় হতে হবে আরও ২.৬৫ লক্ষ কোটি।
• এই অর্থবর্ষে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। প্রথম সাত মাসে ৪৫% আদায় সম্ভব হয়েছে।
• কেন্দ্রের লক্ষ্য, বিলগ্নিকরণ খাতে ১.০৫ লক্ষ কোটি আয় করা। এ পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৭,০০০ কোটি।
• এপ্রিল-অক্টোবরে রাজকোষ ঘাটতি ছুঁয়েছে ৭.২০ লক্ষ কোটি। বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ১০২.৪%।

নির্দেশ কী

• চলতি অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে খরচ বেঁধে রাখতে হবে বাজেট প্রস্তাবের ২৫ শতাংশে। তা ছিল ৩৩%।
• জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তা হতে হবে ১৫%।
ছিল ১৮%।
• মার্চে খরচ ১০ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। সেই হার ছিল ১৫%।
• সংশোধিত হিসেবে কোনও খাতে সর্বোচ্চ খরচ বাজেট প্রস্তাবের চেয়ে কম হলেও মানতে হবে সেটাই।
• যদি কোনও ক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য সংসদের অনুমোদন লাগে, তা হলে বাজেট অতিরিক্ত খরচে সায় মেলার পরেই তা করা যাবে।
• কোনও ক্ষেত্রে সংশোধিত হিসেবের অঙ্ক বাজেট প্রস্তাবের চেয়ে বেশি হলে, সংসদের সায়ের পরেই সেই খরচ করা যাবে।
• সমস্ত মন্ত্রক এবং দফতরকে এই নির্দেশিকা মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।
• বেশি অঙ্কের ব্যয়ের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের জারি করা নির্দেশই কার্যকর হবে।

সমস্যা

• অর্থনীতির চারটি ইঞ্জিন— বাজারে কেনাকাটা, লগ্নি, রফতানি ও সরকারি ব্যয়।
• এর মধ্যে প্রথম তিনটির অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।
• বাজারে কেনাকাটা কমেছে।
• চাহিদায় টানের জের পড়েছে লগ্নিতেও। কোনও সংস্থাই উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে না। মুখ ফিরিয়ে বিদেশি লগ্নিও।
• বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ার জের পড়েছে রফতানিতেও।
• সরকারি ব্যয়ের সাহায্যে অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর আশা করা হচ্ছিল। অনেকের প্রশ্ন, এ বার সেই খরচে রাশ টানা হলে শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধি আরও তলিয়ে যাবে না কি? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যা ইতিমধ্যেই ছুঁয়েছে ছ’বছরের তলানি।

তবে ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিটের মতো উপদেষ্টা সংস্থার মতে, এই অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা পেরোনোর সম্ভাবনাই বেশি। এপ্রিল থেকে অক্টোবরে তা ৭.২০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে ত্রাণের সওয়াল করেছে তারা।

অনেকে বলছেন, কেনাকাটা, রফতানি, লগ্নি ও সরকারি ব্যয়ের মতো অর্থনীতির চারটি ইঞ্জিনের কোনওটিই যদি ঠিক মতো কাজ না-করে, তা হলে বৃদ্ধিতে গতি আসবে কী ভাবে? পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার কেন্দ্রের স্বপ্নই বা কী ভাবে পূরণ হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন