খোলা বাজারে চটের বস্তা ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করতে হলে এ বার থেকে রাজ্যের চটকলগুলিকে আগাম ছাড়পত্র নিতে হবে জুট কমিশনারের। খাদ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য সময় মতো কেন্দ্রকে বস্তা সরবরাহ না-করে চটকলগুলি তা খোলা বাজারে বেচে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠাতেই এই পদক্ষেপ করেছে তারা।
রাজ্যের চটকল মালিকদের অধিকাংশই অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। উল্টে এই অবস্থার জন্য তাঁরা কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন। মালিকদের দাবি, বস্তা কেনার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। তা ছাড়া যে-পরিমাণ বরাত দেওয়া হয়েছে, তা উৎপাদনের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। ফলে জোগানে ঘাটতি থেকে গিয়েছে। তবে কমিশনারের নির্দেশ মেনে তাঁরা নথি জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বস্তুত সময়সীমা মেনে চাহিদা মতো চটের বস্তা সরবরাহ করতে না-পারায় রাজ্যের চটকলগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের টানাপড়েন চলছিলই। তার উপর আবার অভিযোগ, বেশি মুনাফার টানে চটকলগুলি খোলা বাজারে চটের বস্তা-সহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছেন। আর তাতেই মার খাচ্ছে কেন্দ্রের বরাত দেওয়া চটের বস্তার উৎপাদন। বেগতিক বুঝে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের তরফে জুট কমিশনারের দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের ছাড়পত্র না-পেলে খোলা বাজারে চটকলগুলি কোনও পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। খোলা বাজারে কার কত বরাত বা পণ্য সরবরাহের চুক্তি রয়েছে সে সম্পর্কিত যাবতীয় নথিপত্র এপ্রিলের মধ্যে কমিশনারের দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে রাজ্যের চটকলগুলিকে।
কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্যের চটকলগুলির চুক্তি মতো নভেম্বর-মার্চের মধ্যে ১০.২২ লক্ষ গাঁট চটের বস্তা সরবরাহের কথা (এক গাঁট মানে ৫০০ চটের বস্তা)। কিন্তু ১৩ মার্চ পর্যন্ত চটকলগুলি ৭.৫ লক্ষ গাঁটের মতো বস্তা সরবরাহ করতে পেরেছে। হিসেব মতো ২.৮০ লক্ষ গাঁট এখনও সরবরাহ করা যায়নি। এর সঙ্গে এপ্রিলের মধ্যে অতিরিক্ত তিন লক্ষ গাঁট দেওয়ার কথা। মূলত রবিশস্যের জন্যই এই বস্তা প্রয়োজন। বস্ত্র মন্ত্রকের মতে, চটকলগুলির উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও বাইরের চাহিদা মেটাতে গিয়েই তারা লক্ষ্য ছুঁতে পারছে না।
কমিশনের এক কর্তা জানান, চটকলগুলি প্রতি মাসে সাড়ে তিন লক্ষ গাঁট করে বস্তা সরবরাহ করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা তা কমিয়ে তিন লক্ষ গাঁট করে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রাও তারা পূরণ করতে পারছে না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। ওই কর্তার দাবি, সেই কারণেই এই পদক্ষেপ করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।
বস্ত্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, চুক্তি মতো বস্তার জোগান না-দেওয়ায় ইতিমধ্যেই তিনটি চটকলের এক বছরের জন্য সমস্ত বরাত বাতিল করা হয়েছে। অন্যদেরও বলা হয়েছে, চুক্তি না-মানলে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই কর্তার দাবি, চটকলগুলি কেন্দ্রের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির সুরক্ষাও চায়, আবার খোলা বাজারে দাম বেশি পেলে চুক্তি লঙ্ঘন করে কেন্দ্রকে চাহিদা মতো বস্তা জোগান দেয় না। ফলে অনেক সময়েই বস্তার অভাবে খাদ্যশস্য পড়ে থেকে নষ্ট হয়।