জমি-বাড়ির মালিককে প্রতারণার অভিযোগ

ভুয়ো টাওয়ার সংস্থা নিয়ে ফের হুঁশিয়ারি কেন্দ্রের

মাঝে কিছু দিন সব চুপচাপ ছিল। কিন্তু ফের এ রাজ্যে শুরু হয়েছে মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে ভুয়ো সংস্থার প্রতারণা চক্রের দাপট। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট) সূত্রের খবর, তারা বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার লোগো ‘জাল’ করে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় টেলিকম সংস্থাগুলিকে গ্রাহকদের এ নিয়ে এসএমএস বার্তায় সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছে টেলিকম দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

মাঝে কিছু দিন সব চুপচাপ ছিল। কিন্তু ফের এ রাজ্যে শুরু হয়েছে মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে ভুয়ো সংস্থার প্রতারণা চক্রের দাপট। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট) সূত্রের খবর, তারা বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার লোগো ‘জাল’ করে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় টেলিকম সংস্থাগুলিকে গ্রাহকদের এ নিয়ে এসএমএস বার্তায় সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছে টেলিকম দফতর।

Advertisement

জমি বা বাড়িতে টাওয়ার বসানোর নামে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মালিকের কাছে আগাম টাকা চাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এ ধরনের চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ। ওই সংস্থাগুলি কখনও সরকারকে কর দেওয়ার নামে অথবা ডট বা টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের কাছ থেকে অনুমোদনের জন্য আগাম টাকা চায়। যদিও ডট, ট্রাই, টেলিকম ও টাওয়ার সংস্থাগুলি স্পষ্টই জানিয়েছে, এটা একেবারেই বেআইনি। এ জন্য বাড়ি বা জমির মালিককে টাকা দিতে হয় না।

এমন বহু অভিযোগ এক সময়ে এসেছিল টেলিকম দফতরের শাখা টার্ম সেলের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার কাছে। সম্প্রতি ফের এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন টার্ম (টেলিকম এনফোর্সেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং) সেল (কলকাতা)-এর সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অতনু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ফের এ রকম ঘটনা ঘটছে। টেলিকম সংস্থার লোগোও জাল করা হচ্ছে।’’ এ নিয়ে সতেচনতা বাড়াতে তাই প্রত্যেক সংস্থাকে তাঁদের গ্রাহকদের এসএমএস পাঠাতে বলেছেন তাঁরা। দফতরের দাবি, প্রত্যেক মাসে কোন কোন সংস্থাকে ওই এসএমএস পাঠাতে হবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি রাজারহাট-গোপালপুরের নিরঞ্জনপল্লfর বাসিন্দা সঞ্জীব ও মৌসুমি মজুমদার বিজ্ঞাপন দেখে একটি সংস্থার সঙ্গে টাওয়ার বসানোর জন্য আলোচনা শুরু করেন। উদ্দেশ্য ভাড়া বাবদ আয় করা। তাঁর দাবি, সংস্থাটি সরকারি নথিপত্রের ‘কপি’ও তাঁদের কাছে পাঠিয়েছিল। টাওয়ার বসানোর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি-সহ বিভিন্ন কারণে সংস্থার দাবি মতো মজুমদার দম্পতি দফায় দফায় তাদের বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি চুক্তির ‘স্ট্যাম্প ডিউটি’ বাবদ সংস্থাটি আরও কিছু অর্থ দাবি করে, যা আগে বলা হয়নি বলে পাল্টা দাবি করেন সঞ্জীববাবুরা। তাঁরা এর পর আগে দেওয়া অর্থ ফেরত চান। কিন্তু ওই টাকা না-দিলে আগে দেওয়া টাকাও ফেরত মিলবে না বলে জানায় সংস্থাটি। সঞ্জীববাবুর দাবি, এরপর তিনি সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া পাননি। তখন তিনি কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানান।

অতনুবাবু জানান, অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। টেলিকম সংস্থার লোগো ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থা যে ভাবে প্রতারণার ফাঁদ ছড়াচ্ছে, তার তদন্ত শুরু করেছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, ওই সংস্থাটি প্রস্তাবিত চুক্তিপত্র, শর্ত সহ বিভিন্ন নথিপত্রে ‘এমটিএস’ ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করেছে। সরকারি নথি বা টেলি সংস্থার লোগো, সবই জাল বলে দাবি টেলিকম দফতরের। এমন অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রের জন অভিযোগ সেল-এ নালিশ জানাতেও বলছে তারা।

এমটিএস-ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানান, এ ধরনের কোনও ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই। তিনি বলেন, ‘‘এমটিএস-ইন্ডিয়া সহ সব টেলিকম সংস্থাই এ ধরনের ভুয়ো টাওয়ার সংস্থার প্রতারণার মুখে পড়ছে। এই ঘটনা রুখতে এমটিএস পৃথক একটি দফতরও খুলেছে। স্থানীয় পুলিস-প্রশাসনের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার তদন্ত করাই সেই দফতরের কাজ।’’ পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে ও অন্যান্য ভাবে এই প্রতারণার বিষয়ে সামিজক সচেতনতা বাড়াতেও নানা কর্মসূচি নিচ্ছে তারা।

বস্তুত, জমি-বাড়িতে টাওয়ার বসিয়ে ভাড়া বাবদ দু’পয়সা আয়ের চাহিদা যথেষ্ট। আর সেই চাহিদাকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায় প্রতারক সংস্থাগুলি। টেলিকম দফতর ও টেলিকম শিল্পের দাবি, সরকারি স্বীকৃত টাওয়ার সংস্থাগুলির নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, আলোচনার মাধ্যমে টাওয়ার বসানোর শর্ত ঠিক করে বাড়ি বা জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে সেই স্বীকৃত টাওয়ার সংস্থা। প্রয়োজনীয় সরকারি ছাড়পত্র নেয় টাওয়ার সংস্থাগুলি। তা পেলে তবেই টাওয়ার বসাতে পারে তারা। বিনিময়ে চুক্তি মতো প্রতি মাসে টাওয়ার সংস্থার কাছ থেকে ভাড়া পান ওই জমি বা বাড়ির মালিক। কিন্তু টাওয়ার বসানোর জন্য কোনও কর বা অন্য খরচ বাবদ মালিককে ওই সংস্থাকে কোনও অর্থ দিতে হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন