ফাইল চিত্র।
কফিনে শেষ পেরেক।
শেষ পর্যন্ত বার্ন স্ট্যান্ডার্ড গুটিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবেই সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ফলে এখনই সংস্থা বন্ধ না হওয়া নিয়ে মাঝে কর্মীদের মধ্যে যে ক্ষীণ আশা তৈরি হয়েছিল, তা শেষ হয়ে গেল এ দিন। তার জায়গায় আরও বেশি করে দানা বাঁধতে শুরু করল পাওনা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।
গত বছর জুলাইয়ে কেন্দ্রের কাছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড না গোটানোর আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠি দিয়েছিলেন তদানীন্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে। ডাক দিয়েছিলেন প্রতিবাদে পথে নামার। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই মন্ত্রকের ছাতার নীচে নিয়ে এসেছিলেন এই সংস্থাকে। কিন্তু বুধবার কেন্দ্রের ঘোষণার পরে কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, পথে নামার ডাক দিলেও পরে এ নিয়ে সে ভাবে সরব হননি মমতা।
তবে এ দিন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। এর বিরুদ্ধে নোটিস জমা দিয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভায়।
সংস্থা গোটাতে রেলের ঘোষণার পরেও ৫০৮ জন কর্মীর মনে ক্ষীণ আশা ছিল যে, অন্তত লোকসভা ভোটের আগে বার্নকে গোটাবে না কেন্দ্র। সংস্থার সম্পদ তার দায়ের তুলনায় অনেকটা বেশি হওয়ায় সেই আশার পালে হাওয়াও লেগেছিল। কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিল এ দিনের সিদ্ধান্ত। ঠিক হয়েছে সব কর্মীকেই স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার বিষয়টি। এ জন্য বরাদ্দ ১১২.৩৭ কোটি টাকা। যদিও এ নিয়ে কর্মীরা এখনও অন্ধকারে।
সময় সারণি
১৯৯৪: বিআইএফআরে গেল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড
১৯৯৫: রুগ্ণ সংস্থার তকমা
সেপ্টেম্বর, ২০১০: সংস্থার রাশ গেল রেল মন্ত্রকের হাতে
ডিসেম্বর, ’১৬: উঠে গেল বিআইএফআর
মে, ’১৭:
• নতুন দেউলিয়া বিধি মেনে এনসিএলটি-তে গেল সংস্থা
• বিশেষজ্ঞ (অন্তর্বর্তী রেজলিউশন প্রফেশনাল বা আইআরপি) নিয়োগ, পাওনাদারদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে নির্দেশ দিল এনসিএলটি
জুলাই, ’১৭:
• পাওনাদারদের নিয়ে তৈরি হল ক্রেডিটর্স কমিটি
• নিযুক্ত হল মূল্যায়নকারী
• রেজলিউশন প্রফেশনাল (আরপি) নিয়োগ
• বার্ন স্ট্যান্ডার্ড না গোটানোর
আর্জি মমতার। প্রতিবাদে
রাস্তায় নামার ডাক
অগস্ট, ’১৭: জমা পড়ল মূল্যায়নের রিপোর্ট
অক্টোবর, ’১৭: পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা (রেজলিউশন প্ল্যান*) তৈরির নির্দেশ এনসিএলটি-র
ফেব্রুয়ারি, ’১৮: সংস্থা গোটানোর সিদ্ধান্ত জানাল রেল
৪ এপ্রিল, ’১৮: সংস্থা গোটানোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার
সংস্থায় তৃণমূল সমর্থিত ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংস্থা সম্প্রতি মুনাফার মুখ দেখতে শুরু করেছিল। ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। আমরা আশাহত।’’ সিটু অনুমোদিত ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণকিশোর রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দল আন্দোলনে নামুক। সঙ্গে থাকব।’’
জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালে থাকা বার্নকে গুটিয়ে নিতে কেন্দ্র ৪১৭.১০ কোটি টাকা দেবে। তার সংস্থান রেল তাদের অভ্যন্তরীণ বাজেটেই করে রেখেছে। ওই টাকার মধ্যে ১৭২.৫৫ কোটি খরচ করা হবে বরাত সরবরাহকারী-সহ পাওনাদারদের বকেয়া মেটাতে। ব্যাঙ্কের না-মেটানো ঋণ ৬৫.৪৭ কোটি। ঋণ ও অন্যান্য খাতে কেন্দ্রের বকেয়া ৬৬.৭১ কোটি টাকা।