ইস্পাত উৎপাদন কমানোর কথা ঘোষণা করল চিন। আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে উৎপাদন ১৫ কোটি টন কমানো হবে বলে সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ। চিনের ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে, এ জন্য পুরনো হয়ে যাওয়া কারখানাগুলি পুরোপুরি বন্ধ করা এবং নতুন করে ইস্পাত প্রকল্পের অনুমোদন না দেওয়ার পথে হাঁটবে তারা। এর সঙ্গেই ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ইস্পাত-সহ অন্য শিল্পে অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধের কথাও জানিয়েছে চিন।
ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের ইস্পাতের অর্ধেকই তৈরি হয় চিনে। ২০১৫ সালে প্রায় ৮০.৪ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন করেছে এই দেশ। তার আগের বছরের তুলনায় যা ২.৩ শতাংশ কম। ১৯৮১ সালের পর এই প্রথম উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছে চিনের শিনহুয়া সংবাদমাধ্যম। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, তার পরও ৩৪ কোটি টন বাড়তি ইস্পাত তৈরি করেছে চিন। পাশাপাশি, বর্তমানে চিনের ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ১২০ কোটি টন বলেও দাবি তাঁদের।
প্রসঙ্গত, বেজিং অলিম্পিক পর্যন্ত চিনে ইস্পাতের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। তার পর থেকে সেই চাহিদা কমেছে ক্রমাগত। অথচ ভাটা পড়েনি জোগানে। আর চিন-সহ সারা বিশ্বে মন্দার পর ইস্পাতের চাহিদা কমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার দাম কমেছে হুড়মুড়িয়ে। অবস্থা আরও ঘোরালো করে তুলেছে ২০১৫ সালে সে দেশে গত ২৫ বছরে সর্বনিম্ন আর্থিক বৃদ্ধির হারও (৬.৯ শতাংশ)। এই সবেরই জের পড়েছে ভারত, ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশের ইস্পাত সংস্থাগুলির উপর।
ইউরোপের ইস্পাত শিল্পের অভিযোগ, নিজেদের তৈরির খরচের থেকেও কম দামে ইংল্যান্ডে ইস্পাত বেচছে (ডাম্পিং) চিনা সংস্থাগুলি। ফলে দামের লড়াইয়ে পাল্লা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে। তার উপর রয়েছে বিদ্যুতের চড়া দর। সব মিলিয়ে ধুঁকছে ইউরোপীয় অঞ্চলের শিল্প। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে ব্রিটেনে লর্ড স্বরাজ পলের সংস্থা ক্যাপারো ইন্ডাস্ট্রিজকে পাঠাতে হয়েছে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এ (যা অনেকটা ভারতের বিআইএফআরের মতো)। পাশাপাশি, ব্রিটেনে টাটা স্টিলের ধুঁকতে থাকা ও প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ইস্পাত কারখানাগুলি ফের চালু করা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। ইউরোপ ও ভারতে চাহিদা কমার হাত ধরে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান করেছে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটি। এই অবস্থায় আপাতত চিনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দিকেই তাকিয়ে সব মহল।