বছর পাল্টেছে। কিন্তু বাজারের অস্থিরতায় কোনও ছেদ পড়েনি এখনও। গত শুক্রবার সেনসেক্স ১৮১ পয়েন্ট উঠলেও, আগের দিনই পড়ে গিয়েছিল ৩৭৮ পয়েন্ট। আবার গোটা বছরের বিচারে বিএসই-র সূচকটি ২,০১১ অঙ্ক (৫.৯০%) বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু ২০১৮ সালে সব শেয়ার মিলিয়ে লগ্নিকারীদের লোকসান হয়েছে ৭.২৫ লক্ষ কোটি টাকা।
গত বছরেই বাজার পা রেখেছিল ৩৮,৯৯০ পয়েন্টের সর্বোচ্চ উচ্চতায়। অথচ ২৯ অগস্টের ওই শিখর থেকে বছর শেষে সেনসেক্স নেমে এসেছে ৩৬,০৬৮ অঙ্কে। অর্থাৎ পরের চার মাসে তার ঝুলি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ২,৯২১ পয়েন্ট (৭.৫%)।
ইকুইটি শেয়ারের উপরে নতুন করে মূলধনী লাভ কর জারি হয়েছিল চলতি আর্থিক বছরের বাজেট থেকে। গত ৩১ জানুয়ারি শেয়ারের বাজার দরকেই এ ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। ওই দিন সূচক বেশ ভাল জায়গায় ছিল। কিন্তু বর্তমান বাজার দরের নিরিখে কমবেশি ৮০% শেয়ারের দাম ৩১ জানুয়ারির তুলনায় তেমন বাড়েনি। অর্থাৎ ওই সমস্ত শেয়ার বিক্রি করলে মূলধনী লাভ কর দেওয়ার প্রশ্ন নেই। ডিসেম্বরে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি প্রায় ৫,৫০০ কোটি টাকা ঢেলেছে। তবে তার প্রায় ৩,৬০০ কোটি ঋণপত্রে। আর মাত্র ১,৯০০ কোটি ইকুইটিতে।
নতুন বছরের শুরুতে অবশ্য ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছে। পরিসংখ্যান জানিয়েছে, অনুৎপাদক সম্পদ কমেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। যার বোঝায় প্রায় চার বছর ধরে অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক জেরবার। ওই খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে হয় তারা লোকসানে ডুবেছে, নয়তো মুনাফা কমেছে মারাত্মক ভাবে। হিসেবে প্রকাশ, গত মার্চের শেষে মোট ঋণের ১১.৫% ছিল অনুৎপাদক সম্পদ। সেপ্টেম্বরে এই হার নেমে হয়েছে ১০.৮%। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশা, চলতি আর্থিক বছরের শেষে তা নামতে পারে ১০.৩ শতাংশে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেতে পারে ১.২%।
আর এই খবরেই আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন ব্যাঙ্কিং শিল্পে লগ্নিকারীরা। সেই আশার প্রতিফলন হিসেবে কিছু ব্যাঙ্কের শেয়ার এরই মধ্যে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। তার উপর সেগুলিতে জ্বালানি জুগিয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে সরকারের নতুন মূলধন জোগানোর আশ্বাস। জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালের (এনসিএলটি) মাধ্যমেও অনাদায়ি ঋণের বড় অংশ উদ্ধারের পথ তৈরি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সব কিছু মিলিয়ে আগামী দিনে ব্যাঙ্কগুলি ভাল ফলাফল উপহার দিতে পারে। আর সেটা হলে অনেকটাই হাঁফ ছাড়বেন লগ্নিকারীরা। ভোট বছরে স্বস্তি পাবে কেন্দ্রও।
এ দিকে, ডিসেম্বরে মোটা ছাড় পাওয়ার সুযোগ এবং জানুয়ারিতে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও গত বছরের শেষ মাসে গাড়ির চাহিদা আশা অনুযায়ী বাড়েনি। দেশের মধ্যে মারুতির বিক্রি বেড়েছে মাত্র ১.৮%, হুন্ডাইয়ের ৪.৬% এবং হোন্ডার ৪%। গাড়ি বিক্রি কমলে তার প্রভাব পড়ে ইস্পাত, রং, টায়ার, যন্ত্রাংশ-সহ নানা ছোট-বড় শিল্পেও।
এর পাশাপাশি পরিকাঠামো শিল্প গত নভেম্বরে বৃদ্ধি দেখেছে মাত্র ৩.৫%। ১৬ মাসে সব থেকে কম। এক বছরের টার্ম ডিপোজ়িট ছাড়া অন্য সব ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ একই রাখা হয়েছে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। এক বছরের মেয়াদি জমায় এখন সুদ পাওয়া যাবে ৭%।
(মতামত ব্যক্তিগত)