খরচ সামলে বিয়ে

বিয়ে জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত। সামনেই তার লম্বা মরসুম। যাঁদের বাড়িতে অনুষ্ঠান, তাঁদের প্রস্তুতি নিশ্চয় তুঙ্গে। চুটিয়ে আনন্দ করুন। কিন্তু খরচকে পকেটের মাপের বাইরে যেতে না দিয়ে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্যের কথা মনে করালেন দেবপ্রিয় সেনগুপ্তবিয়ে জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত। সামনেই তার লম্বা মরসুম। যাঁদের বাড়িতে অনুষ্ঠান, তাঁদের প্রস্তুতি নিশ্চয় তুঙ্গে। চুটিয়ে আনন্দ করুন। কিন্তু খরচকে পকেটের মাপের বাইরে যেতে না দিয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৪
Share:

দম ফেলার ফুরসত নেই সমীরবাবুর। সামনেই মেয়ের বিয়ে। এই প্যান্ডেলের লোককে ফোনে ধরছেন, তো এই দৌড়চ্ছেন কেটারারের কাছে। ডেকরেটর, ফুল-সহ আরও অন্তত একশো রকমের কাজ এখনও বাকি। কাজ এবং সেই সঙ্গে খরচও। কারণ, এর কোনওটিই তো বিনা পয়সায় হওয়ার নয়। নগদ ফেললে তবে বাড়িতে হাজির হবে জিনিস, পরিষেবাও। তাই চিন্তায় মাথার চুল খাড়া। শেষ পর্যন্ত বাজেটে কুলোবে তো? যে টাকা পুঁজি করে নেমেছেন, টান পড়বে না তো তাতে?

Advertisement

বিয়েতে খরচের চিন্তায় ঘুম উড়ে যাওয়ার দশা কিন্তু বহু বাড়ির চেনা দৃশ্য। এক-এক বাড়িতে বাজেটও এক-এক রকম। রেস্তর মাপ এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে। কিন্তু আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের টাকা তো অঢেল নয়। তাই বিয়ের মতো আনন্দের অনুষ্ঠানেও শুরু থেকে বোধহয় একটু সাবধানে পা ফেলা জরুরি। আলাদা খাতায় গোড়া থেকেই কষা উচিত হিসেবের অঙ্ক। খুঁটিয়ে দেখা যেতেই পারে যে, কোথায় বাঁচানো সম্ভব দু’টি টাকা। অঙ্কের পরীক্ষায় খাতা মেলানোর মতো করে দেখা জরুরি যে, কোথাও অকারণে বাজে খরচ হচ্ছে না তো? এগুলি করলে কিন্তু বেশ কিছুটা টাকা বাঁচানো সম্ভব। বিয়েতে কিপটেমি করতে বলছি না। কিন্তু মনে রাখবেন, ওই বাঁচানো টাকা কিন্তু অনেক ভাল কাজে লাগানো যেতে পারে। কী ভাবে বাঁচাবেন, আলোচনা তা নিয়েই।

Advertisement

লোক কোথায়?

খরচ কমানোর কথা বলছি ঠিকই। কিন্তু ভালই বুঝতে পারি, আগের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাওয়ায় এখন বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠানের খরচ আরও বেড়েেছ। কারণ, আগে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব মিলেই কত কাজ সামলে দিতেন। কাঁচা আনাজ বাজার করা থেকে শুরু করে ঠাকুর দিয়ে রান্না, পরিবেশন— অনেক কিছুই হইহই করে সামলে দিতেন তাঁরা। কিন্তু এখন এই ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছে। লোকবল নেই। তাই নির্ভরতা অনেক বেশি কেটারার, ডেকরেটরদের উপরে। আর সেই কারণেই বিয়ের খরচ নিয়ে গোড়া থেকে আরও সাবধানী হতে বলা। আপনি যখন জানেন যে প্রায় প্রতি পায়ে খরচ অপেক্ষা করে আছে, তখন সেই প্রতি ধাপে রাশ টানতে টানতে যাওয়া উচিত নয় কি? তবেই তো অল্প-অল্প জুড়ে অনেকটা কমে।

বিয়ের বাজেট

বাজেট কী? এক কথায় আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা। আর বিয়ের খরচ যেহেতু আসে রোজগার এবং জমানো টাকা থেকে, তাই তারও পরিকল্পনা করা জরুরি। প্রথমেই বিভিন্ন সূত্র থেকে আয় ধরে তহবিলের একটা হিসেব ছকে ফেলুন। তা হলে হাতে মোট কত টাকা আছে, গোড়াতেই তার একটা আন্দাজ পাবেন।

এখানে দু’টি কথা বলে রাখি। এক, অনেকে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ নেন। যার সুদ বেশ চড়া। একেবারে একান্ত প্রয়োজন না হলে, এই ধার কিন্তু এ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা উচিত। অন্তত অনুষ্ঠানের চাকচিক্য বাড়ানোর জন্য তা নেওয়া বোকামি।

দ্বিতীয়ত, বিয়ের তহবিলের অন্তত ১০% শুরুতেই আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখুন। তাতে সুবিধা অনেক। জোগাড়যন্ত্রের সময়ে আসল খরচ অনুমানের থেকে বেড়ে গেলে, তা সামাল দিতে অসুবিধা হবে না। আর যদি কিছু টাকা শেষে বাঁচাতে পারেন, তাতে তো আপনারই ভাল।

খরচের খাত

বিয়ের অনুষ্ঠান তো একটু বড় করে করার ইচ্ছে থাকেই। এটাও ঠিক যে, অনেক খরচে কাটছাঁট করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু খাত ধরে ধরে হিসেব করলে টাকা বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।

সাধারণ ভাবে মোটা খরচের জায়গাগুলি হল—

• অনুষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া

• আলো, ডেকরেশন, ফুল

• খাওয়াদাওয়া

• গয়না, সাজ

• গাড়ি ভাড়া

• কার্ড

• ছবি, ভিডিয়ো

• মধুচন্দ্রিমা

এর বাইরে কোনও খরচ মাথায় এলে তা-ও লিখে ফেলুন। আপনার প্রথম কাজ হল, এগুলিতে কে কেমন টাকা চাইছে, তা যাচাই করতে একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলা। এক জনের দর শুনেই ‘হ্যাঁ’ করে দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে কাজের কথা না-ও হতে পারে। কাকে কোন কাজ দেবেন, তা মোটামুটি ঠিক করে ফেলার পরে তাঁদের কাছে টাকার অঙ্ক স্পষ্ট জানুন। তবেই সেগুলি জুড়ে খরচের অন্তত একটা আঁচ পাবেন।

সুতরাং খরচ কমানোর একটাই রাস্তা। তা হল, প্রতিটি খাতে তা কিছুটা করে কমানোর চেষ্টা করা। তার জন্য আগে থেকে খোঁজখবর ও পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। সেটা অনুষ্ঠানের জায়গা ঠিক করা হোক বা কেটারার বাছাই। একটু বাড়তি দৌড়ঝাঁপের ঝক্কি ঘাড়ে নিয়েও একাধিক জায়গা থেকে দর জানতে চাওয়া জরুরি।

টুকরো টোটকা

খরচে রাশ টানতে কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখতে পারেন—

• বিয়েতে চার হাত আর দুই পরিবারের মিলটাই আসল। সে কথা ভেবে আজকাল অনেকে সইসাবুদে বিয়ে সারছেন। সেটা মন্দ নয়। তবে যাঁদের বিয়ে এবং তাঁদের পরিবার কী চায়, তা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

• জয়েন্ট রিসেপশনও এখন নতুন কিছু নয়। এতে দুই পরিবার মিলে খাওয়াদাওয়া এবং অনুষ্ঠানের খরচ জোগায়। তাতে খরচ ভাগ হয়ে যায় দু’ভাগে। ফলে টাকা বাঁচে।

• কেটারারকে খাওয়ানোর দায়িত্ব হয়তো দিতেই হয়েছে। তবু দেখুন, নিজে কিছুটা বাজার-দোকান করে দিলে খরচ কিছুটা কমে কি না। যেমন, মিষ্টি, আইসক্রিম নিজে কিনে দিলে অনেক সময়ে খরচ কিছুটা কমে।

• আরও একটি প্রস্তাব। হয়তো একটু ঝুঁকি নিয়েই। তা হল, আচার অনুষ্ঠান এড়াতে যদি সমস্যা না থাকে, তা হলে পঞ্জিকা দেখে বিয়ের মরসুমে দিন না খুঁজে অন্য সময়ে দেখতে পারেন। তাতে কিন্তু এক ঝটকায় খরচ কমে যেতে পারে অনেকখানি।

• অনেকে বিয়ের ঠিক আগে গয়না গড়াতে গিয়ে চাপে পড়েন। তাই অনেক আগেই লকারে থাকা গয়নায় চোখ বুলিয়ে নিন। বিয়ের আগে আদৌ নতুন গয়না কতটা কিনতে হবে, সে ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট হবে। কারণ এটা এমন একটা খরচ, যেখানে দরাদরির বিশেষ জায়গা নেই।

• আজকাল অনেকেই হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট বা লনে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চান। সে সব ক্ষেত্রে বিয়ের জায়গা, ফুল এবং খাবার মিলিয়ে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ থাকে। খুঁটিয়ে বুঝে নিন আপনার জন্য কোনটা ঠিক। কোথায় কত খরচ, তার খোঁজ করুন।

• ব্যবস্থাপনার ঝামেলা ঘাড় থেকে নামাতে অনেকেই আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হাতে। তাতে খরচ বাড়ে। সেই রেস্ত আছে তো?

এবং মধুচন্দ্রিমা

• বেশিরভাগ জনই মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা শুরু করেন বিয়ের পরে। তাতে কিন্তু খরচ বাড়ে। অথচ প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিং আগে থেকে করে রাখলে খরচ কমতে পারে। বিয়ে যখন ঠিক হয়ে গেল, তখন থেকে শুরু করলেও ফারাক টের পাওয়া যাবে।

• সন্তানের বিয়ের জন্য অনেক অভিভাবকই আগে থেকে টাকা জমান। কেউ কেউ গয়না কেনার প্রকল্পে টাকা রাখেন। সেই সব পার করে এখন মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইপির যুগ। আপনি কিছুটা ঝুঁকি নিতে চাইলে শুধু ব্যাঙ্কে টাকা না রেখে ওই সব প্রকল্পে টাকা রাখতে পারেন। দীর্ঘ দিন ধরে জমালে রিটার্নও বেশি মিলতে পারে।

• সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সঙ্গতি থাকুক। মনে রাখবেন বিয়ের আনন্দটাই আসল। কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে তাতে জল ঢালবেন না। তা হলে কিন্তু পুরোটাই মাটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন