Coronavirus in India

ত্রাণ চায় শিল্প, আসবে কোত্থেকে প্রশ্ন এখন সেটাই

লকডাউন ঘোষণার ক’দিনের মধ্যেই বহু ঠিকা কর্মীকে ছাঁটাই করার অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন সর্ব ভারতীয় শ্রমিক সংগঠনও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা-সঙ্কট যোঝার এই সময়ে কর্মী কিংবা বেতন ছাঁটাই না-করার আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু তার পরেও লকডাউনের মাসুল গুনে বিপুল কর্মী ছাঁটাই কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলে সমীক্ষায় মেনে নিচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধারদের বড় অংশ। অর্থনীতি ইতিমধ্যেই যে অতল খাদের দিকে গড়িয়েছে, তাকে সেখান থেকে টেনে তুলতে অবিলম্বে মোটা অঙ্কের ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে বণিকসভা। কিন্তু টানাটানি রাজস্বের সংসারে কোথা থেকে ওই বিপুল অঙ্ক বার করা যাবে, সেই হিসেব মেলানোই কঠিন হচ্ছে কেন্দ্রের পক্ষে।

Advertisement

দেশ জোড়া লকডাউনের ছায়া শিল্প তথা অর্থনীতির উপরে কী ভাবে পড়বে, তা বোঝার চেষ্টায় ২০০ জন চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসারের (সিইও) সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষা করেছে বণিকসভা সিআইআই। তাতে আগামী দিনে কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা দেখছে ৫২% সংস্থাই। লকডাউন ঘোষণার ক’দিনের মধ্যেই বহু ঠিকা কর্মীকে ছাঁটাই করার অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন সর্ব ভারতীয় শ্রমিক সংগঠনও।

সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ, শিল্পের জন্য অবিলম্বে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করে দ্রুত তা কার্যকর করুক সরকার। কারণ, হঠাৎ শুরু লকডাউনে জোর ধাক্কা খেয়েছে শিল্প। অনেকেরই রুজি-রুটিতে টান পড়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

কিন্তু চাইলেও কেন্দ্র বিপুল অঙ্কের ত্রাণ প্রকল্প ঝুলি থেকে বার করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ বিস্তর। কারণ, করোনার সঙ্কট হানা দেওয়ার আগেই তলানিতে ঠেকা বৃদ্ধি আর চড়া বেকারত্বের হারে ঝিমিয়ে ছিল অর্থনীতি। আর্থিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে থাকায় কঠিন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ হওয়া। তার উপরে করোনার থাবা বসার পরে কর আদায় আরও কতখানি ধাক্কা খাবে, তা আঁচ করা শক্ত।

সারা বছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ঘরে কর এসেছে তার ৭৫%। জিএসটি আদায় কমছে। তার উপরে লকডাউনে অধিকাংশ কেনাবেচা বন্ধ থাকায় আগামী দিনে তা কোথায় নামবে, বলা কঠিন। শেয়ার বাজারের যা হাল, তাতে অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে রাজকোষ ভরাও প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় কেন্দ্র কোন জাদুতে বড় অঙ্কের ত্রাণ প্রকল্পের টাকা জোগাড় করবে, তা স্পষ্ট নয়। নতুন করে টাকা ছাপিয়ে তার জোগাড় করলে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার ঝুঁকি থাকছে। অর্থনীতির এই দুর্বল শরীরে যা সহ্য হওয়া শক্ত।

সরকারের যেমন হাত-পা বাঁধা, তেমনই গভীর সঙ্কটে অর্থনীতি। সিআইআইয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, আগের এবং চলতি ত্রৈমাসিকে আয় ১০% কমবে বলে আশঙ্কা অর্ধেকেরও বেশি সংস্থার। মুনাফা কমার সম্ভাবনা ৫%। ৮০% সংস্থার ঘরে তৈরি পণ্য পড়ে আছে বিক্রি না-হয়ে। লকডাউন ওঠার পরেও এক মাস বিক্রির মতো পণ্য মজুত ৪০% সংস্থার গুদামে।

শুধু একটি ক্ষেত্রই যে করোনায় কতটা বিধ্বস্ত, তা স্পষ্ট বণিকসভা আইসিসি-র পরিসংখ্যানে। তাদের দাবি, ২০১৮ সালে দেশের জিডিপি-র ৯.২% এসেছিল পর্যটন থেকে। যুক্ত ছিলেন প্রায় ২.৬৭ কোটি কর্মী। এখন তা বেড়েছে। কিন্তু এই শিল্পের কোমর ভেঙেছে করোনা। চট করে ওই আঘাত না-সারারই আশঙ্কা। তাই এই শিল্পের জন্য এক বছর জিএসটি ছাড়ের দাবি তুলেছে তারা। সুবিধা চেয়েছে ঋণ শোধ-সহ নানা ক্ষেত্রেও।

ঘুরে দাঁড়াতে এই বিপুল ত্রাণের চাহিদা কেন্দ্র জানে। কিন্তু জোগান? আপাতত তার ঠিকানা অজানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন