Coronavirus

লকডাউনের জোর ধাক্কা নতুন চাকরির বাজারেও

সংক্রমণ রুখতে দেশ জোড়া দীর্ঘ লকডাউন যে বহু কর্মীর কাজ কেড়েছে এবং কাড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ প্রায় নেই।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি

অভাবের তাড়নায় একশো দিনের কাজের খাতায় নাম তুলতে চান পলিটেকনিকের ছাত্রী। নামমাত্র বেতনের সাধারণ চাকরিতেও লক্ষ-লক্ষ আবেদন পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, স্নাতকোত্তরদের। অথচ লকডাউন উঠলে দক্ষ কর্মী না-মেলার আশঙ্কায় বেঙ্গালুরু থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন ছাড়তে দিতে নারাজ কর্নাটক! ভারতের কাজের বাজারে তুমুল বৈপরীত্যের এই ছবিই করোনার ছোবলে আরও তীব্র হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। বিশেষত চাকরির দুনিয়ায় নতুন পা-রাখাদের।

Advertisement

সংক্রমণ রুখতে দেশ জোড়া দীর্ঘ লকডাউন যে বহু কর্মীর কাজ কেড়েছে এবং কাড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ প্রায় নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা তো বটেই, বিধ্বস্ত অর্থনীতির আঁচ পেতে শুরু করেছেন সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরাও। কোথাও বেতন ছাঁটাই হয়েছে, কোথাও যাচ্ছে কাজই। এই পরিস্থিতিতে কাজের বাজারে প্রথম বার পা-রাখাদের জন্যও যে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তা পরিস্থিতিতে চোখ রাখলেই স্পষ্ট।

এক্সএলআরআই-জামশেদপুরের অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের কথায়, ‘‘সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ হয় অধিকাংশ বিজনেস স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। পছন্দের পড়ুয়াকে সংস্থা দিয়ে যায় অফার লেটার। চাকরিতে যোগদানের প্রাথমিক আমন্ত্রণপত্র। কিন্তু প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছাড়া অন্য প্রায় সর্বত্র আগে অফার লেটার দেওয়া বহু পড়ুয়াকে এখন আর নিতে চাইছে না অনেক সংস্থা।’’ সমস্যা এতটাই যে, সম্প্রতি তা না-করার জন্য শিল্পমহলকে আবেদন জানিয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, দেশের কিছু সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এখন আগে অফার লেটার দেওয়া পড়ুয়াকে নিতে বিস্তর দর কষাকষি করছে কিছু সংস্থা। কোথাও সুযোগ-সুবিধা কমানোর কথা বলা হচ্ছে, কোথাও বেতনই। টান ‘সামার ইন্টার্নশিপে’ও।

Advertisement

আরও পড়ুন: আপত্তি কৃষ্ণমূর্তির

অর্থনীতি স্তব্ধ। বিক্রিবাটা নেই। পুরোদমে উৎপাদন ফের কবে শুরু হবে কিংবা বাজারে তখন চাহিদা কেমন থাকবে, এর কোনও কিছু এখন নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তার উপরে বহু সংস্থার গুদামে উপচে পড়ছে আগে তৈরি, বিক্রি না-হওয়া পণ্যে। এই পরিস্থিতিতে এক জনও নতুন কর্মী নেওয়ার আগে দশ বার ভাবছে সংস্থা। যে সংস্থার সার্চ ইঞ্জিনের কাঁধে চড়ে চাকরি খোঁজার বিভিন্ন পোর্টালের খোঁজ করেন কর্মপ্রার্থীরা, সেই গুগলে আপাতত প্রায় সমস্ত নতুন নিয়োগ বন্ধ। যারা কর্মপ্রার্থীদের সঙ্গে সংস্থার ‘ঘটকালির কাজ’ করে, সেই ‘প্লেসমেন্ট এজেন্সি’র হাতেও কাজের খরা। এমন একটিতে সিভি পাঠিয়ে উত্তর মিলল, ‘‘ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে, কাজের সন্ধান দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।’’ এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এপ্রিলে নিয়োগ কমেছে ৬২%। কিছু চাকরির পোর্টাল উল্টে ই-মেল পাঠিয়ে জানতে চাইছে, এখন নিয়োগ করছে, এমন সংস্থার সন্ধান আছে কি না!

সুন্দরের মতে, ‘‘আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর কিছু বড় সংস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো কিছু ক্ষেত্র ইত্যাদিতে কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতার কর্মীর কদর করোনার বাজারেও বাড়বে। চাহিদা থাকবে নির্মাণ শিল্প-সহ কিছু ক্ষেত্রে আধা-দক্ষ সস্তা কর্মীরও। কিন্তু তার বাইরে কাজের বাজারে আলোর দেখা এই মুহূর্তে নেই। কম কর্মী নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় নিয়োগ কম হবে ছোট শিল্পে। আর বিক্রিবাটা চাঙ্গা না-হওয়া পর্যন্ত তাতে এগিয়ে আসবে না দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য শিল্প।’’

গ্রাম, মফস্‌সল, শহরতলির বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া পাশ করেন সাধারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জেনারেল স্ট্রিমে। এঁদের বড় অংশ আবার পাখির চোখ করেন বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষাকে। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির আশঙ্কা, ‘‘সরকারি চাকরি এমনিতেই এখন আগের তুলনায় অনেক কম। তার উপরে কেন্দ্র এবং সমস্ত রাজ্য সরকার যে ভাবে খরচ কমানোর কথা বলছে, তাতে আগামী দু’বছরে পূর্ণ সময়ের সরকারি চাকরিতে কোপ পড়ার সম্ভাবনা। গবেষণার তহবিলে কোপ পড়লে, কাজ কমবে উচ্চশিক্ষাতেও।’’

যে দেশে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ জন চাকরির খোঁজে কাজের বাজারে প্রথম বার পা-রাখেন, তার জন্য এ বড় সুখের সময় নয়।

আরও পড়ুন: মাস্ক কী হবে! ট্রাম্প হতে চান ‘চিয়ারলিডার’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন