অভয়: টাকা নিয়ে চিন্তা নেই। বণিকসভা ফিকি-র ৯০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রী। বুধবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে। ছবি: পিটিআই।
আর্থিক ক্ষেত্রের খসড়া বিল নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে এ বার মুখ খুলতে বাধ্য বলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। আশ্বাস দিলেন ব্যাঙ্ক-জমার সুরক্ষা সম্পর্কে। দাবি করলেন, এ নিয়ে অহেতুক অপপ্রচার ও উদ্বেগ ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গ্রাহকদের স্বার্থ মাথায় রেখে ব্যাঙ্কে তাঁদের টাকা সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্র দায়বদ্ধ।
মঙ্গলবারই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, কোনও কারণে দেশে ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও, সেখানে গচ্ছিত গ্রাহকদের টাকা যাতে মার না-যায়, সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করবে কেন্দ্র। তারপরেই বুধবার বণিকসভা ফিকি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় নরেন্দ্র মোদী ফের যে ভাবে ওই প্রসঙ্গ টেনে আনলেন, তাতে স্পষ্ট যে, এ নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা কাটাতে চাইছে কেন্দ্র।
সংসদীয় যৌথ কমিটির সামনে থাকা আর্থিক ক্ষেত্রের এই খসড়া বিল (ফিনান্সিয়াল রিজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনশিওরেন্স বিল-২০১৭ বা এফআরডিআই-২০১৭) ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে সারা দেশে। বিরোধীদের অভিযোগ, শেষমেশ এই বিল আইন হলে, দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়ানো ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আর একশো শতাংশ নিশ্চিত থাকতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রচার চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছে সই সংগ্রহও। কেন্দ্রের অবশ্য পাল্টা দাবি, কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লালবাতি জ্বাললেও আমজনতার টাকা যাতে মার না-যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই নতুন আইন আনার তোড়জোড়।
এ প্রসঙ্গে জেটলিরও অভিযোগ ছিল, এই খসড়া বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিরোধীরা। তার জন্য সাহায্য নেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার। অকারণে বলা হচ্ছে যে, সঙ্কটের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের জমা ফেরতের দায় থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র। এ দিন কিছুটা একই অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বোঝাতে চেয়েছেন, শিল্পমহল এবং সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাতেই এ নিয়ে ঝড় তোলার চেষ্টা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, বিতর্ক থামাতেই উল্টো গাইছে কেন্দ্র।
খসড়া বিলটিতে বিতর্ক মূলত ৫২ নম্বর ধারা নিয়ে। সেখানে প্রস্তাব, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণার মুখে থাকলে, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হিসেবে গ্রাহকের আমানতের টাকা তাঁদের অনুমতি না-নিয়েই বাড়তি সময় আটকে রাখতে পারবে তারা। প্রয়োজনে তা বদলে দিতে পারবে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদিতে। অর্থাৎ, টাকা রাখার সময়ে ব্যাঙ্ক এবং গ্রাহকের মধ্যে তা সুদ সমেত ফেরতের যে চুক্তি থাকে, সেটি ওই সঙ্কটের পরিস্থিতিতে একতরফা ভাবে বদলে দিতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি।
বর্তমান নিয়মে, কোনও একটি ব্যাঙ্কে যতগুলি অ্যাকাউন্টে যত টাকাই কারও থাকুক না কেন, সেই ব্যাঙ্কের ব্যবসা লাটে উঠলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে ফেরত পাবেন তিনি। কারণ, গ্রাহকপিছু ওই পরিমাণ টাকা বিমা করা থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বাকি টাকার পিছনেও থাকে কেন্দ্রের অলিখিত গ্যারান্টি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নতুন আইনে এক লক্ষ টাকা ফেরতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে? থাকবে না ওই গ্যারান্টি? কর্পোরেটের ঋণ খেলাপের খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে?
অর্থ মন্ত্রকের দাবি, বিমার বন্দোবস্ত নতুন আইনেও থাকবে। তারা ওই অঙ্ক বাড়ানোর পক্ষপাতী। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গ্যারান্টিও থাকবে আগের মতো। বিশ্বজোড়া মন্দার সময়ে মার্কিন মুলুকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল লেম্যান ব্রাদার্সের মতো নামী ব্যাঙ্ক। সেই ধাক্কায় তলিয়ে যায় বিশ্ব অর্থনীতি। সে রকম ঘটনা যাতে ভারতে না-ঘটে, আগেভাগে তা রুখতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু সব কিছুর পরেও বিতর্ক পিছু না-ছাড়ায় মাঠে নামতে হল খোদ মোদীকেই।