নোট নাকচের জমানা

আবাসন শিল্পের ভরসা সেই মধ্যবিত্ত বাজার

এ বারও ত্রাতা মধ্যবিত্ত বাজার। নোটের আকালে প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েছে আবাসন শিল্প। নগদে লেনদেন করার সুযোগ তলানিতে ঠেকায় বিক্রিতেও টান পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে দিল্লি। তারপরেই মুম্বই।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

এ বারও ত্রাতা মধ্যবিত্ত বাজার।

Advertisement

নোটের আকালে প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েছে আবাসন শিল্প। নগদে লেনদেন করার সুযোগ তলানিতে ঠেকায় বিক্রিতেও টান পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে দিল্লি। তারপরেই মুম্বই। কলকাতায় আঁচ কম লেগেছে। আর, এই টালমাটাল বাজারে কলকাতার আবাসন শিল্পে রুপোলি রেখা এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতা। মন্দার সময়ে শিক্ষা নিয়েছিল এই শিল্প। দামি বাড়ির ক্রেতা না-পেয়ে বড় অঙ্কের লাভের আশা ছেড়েছিল বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার দায়ে মধ্যবিত্তকেই আঁকড়ে ধরেছিল তারা। এ বারও মাথার উপরে ছাদ জোগাড় করতে মরিয়া সাধারণ মানুষই আপাতত আবাসন শিল্পের ভরসা।

নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই (বেঙ্গল)-এর কর্তা সুশীল মোহতার দাবি, নগদ সঙ্কটেও চাহিদায় টান পড়েনি। তার মূল কারণ কলকাতার বাজার ফাটকাবাজদের নয়। তিনি বলেন,‘‘খুব দামি ফ্ল্যাটের বাজার কিছুটা ফাটকাবাজদের দখলে থাকে। তাই বাজার পড়তির দিকে থাকলে সেগুলি বিক্রি হয় কম। কিন্তু মধ্যবিত্ত ক্রেতা প্রয়োজনেই ফ্ল্যাট কেনেন। আর কলকাতার সিংহভাগ ক্রেতাই মধ্যবিত্ত।’’

Advertisement

সরকারি তথ্যও বলছে আবাসনের ৯০ শতাংশ চাহিদা তৈরি করেন মধ্যবিত্ত ক্রেতা। শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসন নির্মাতা বিজিএ রিয়্যালটর্সের প্রধান শম্পা ঘোষ জানান, নগদের সমস্যা মধ্যবিত্তের নেই। কারণ তাঁরা ঋণ নিয়েই বাড়ি কেনেন। প্রকল্প ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যায়। ফলে নির্মাতাদেরও বিনিয়োগের টাকা আটকে থাকার সমস্যা নেই।

তবে চাহিদা না-কমলেও এখনই কেনার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না কিছু ক্রেতা। আবাসন শিল্পমহলের মতে, দাম পড়ার আশায় অনেকেই পরে কেনার কথা ভাবছেন। সিদ্ধা গোষ্ঠীর সঞ্জয় জৈন জানান, চাহিদায় টান পড়েনি। কিন্তু চটজলদি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না ক্রেতাদের একাংশ। সেই সংখ্যাটা এখনও তেমন বেশি নয় বলে তিনি জানান। তথ্য পরিসংখ্যানের নিরিখে কিছুটা মলিন গোটা দেশের ছবি। বিশেষজ্ঞ সংস্থা প্রপইকুইটির হিসেবে নগদের টানাটানিতে বাড়ির দাম কমবে প্রায় ৩০ শতাংশ। দেশের ৪২টি শহরে প্রায় ৫০ লক্ষ বাড়ির সব মিলিয়ে মূল্যের পরিমাণ ৩৯,৫৫,০৪৪ কোটি টাকা। তা কমে দাঁড়াবে ৩১,৫২,১৭০ কোটি টাকা। ক্রেডাই-এর মতে, বিলাসবহুল বাড়ির বিক্রি প্রাথমিক ভাবে কমবে। কারণ, এখনও এ ধরনের বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের পরিমাণ বেশি। সমস্যা সামলাতে ছ’মাস সময় লাগবে।

সাধারণ ভাবে নোট বাতিল হওয়ার ধাক্কা আবাসন শিল্পে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, এই সমস্যা সাময়িক। আখেরে আবাসন শিল্পের লাভই হবে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের প্রধান শিশির বৈজল জানান, স্বল্প মেয়াদি ধাক্কায় বাড়ি ও জমি বিক্রি কমবে। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ব্যবসা কমলেও ভবিষ্যতে নির্মাণ শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তৈরি হবে সংগঠিত ও কর্পোরেট পরিবেশ।’’

শ্রমিকদের বেতন চোকানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবাসন শিল্পমহল। সেই সমস্যা থেকে রেহাই পায়নি কলকাতাও। তবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে বা বিনা পয়সায় দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে এই সমস্যা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ক্রেডাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement