বেহাল আর্থিক দশার মোকবিলায় ফের নিজেদের মুদ্রা ইউয়ানের মূল্য হ্রাস করল চিন। গত চার মাসে এই নিয়ে দু’বার। আর তার জেরে আবার ধস নামল বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে। রেহাই পেল না ভারতও। এ দিকে টাকার দাম ফের পড়ায় প্রতি ডলারের দাম প্রায় ৬৭ টাকা ছুঁই ছুঁই।
বৃহস্পতিবার সেনসেক্স ৫৫৪.৫০ পয়েন্ট পড়ে নেমে এসেছে ২৪ হাজারের ঘরে। দাঁড়িয়েছে ২৪,৮৫১.৮৩ অঙ্কে। ডলারে টাকার দামও কমেছে ১১ পয়সা। ফলে প্রতি ডলার হয়েছে ৬৬.৯৫ টাকা।
তবে বাজারের এই পতনে ভারতের লগ্নিকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে আশার বাণী শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সংবাদ সংস্থার খবর, আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস টুইট করে বলেন, ‘‘শেয়ার বাজারে দামের ওঠা-পড়া বিশ্বে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। নিজেদের আর্থিক জোরেই ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সমস্যার দরুন তৈরি হওয়া যে-কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সক্ষম।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, পুরো অবস্থার উপর নজর রাখছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, চিন তার মুদ্রার দাম বারবার কমালে বিশ্ব বাজারে মার খাবে ইতিমধ্যেই কমতে থাকা ভারতের রফতানি। যা শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারে রাজকোষ ঘাটতির উপর।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই চিনের আর্থিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার খবরে ধস নেমেছিল ভারতের শেয়ার বাজারে। সেনসেক্স পড়েছিল ৫৩৮ পয়েন্ট। তার মাত্র চার দিনের মাথায় আজকের পতন। এবং কারণও সেই চিনের বেহাল আর্থিক অবস্থা। সমীক্ষায় প্রকাশ, চিনের অর্থনীতি ক্রমশ মন্দার কবলে প্রবেশ করছে। পরিষেবা শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে গত ১৭ মাসের মধ্যে সব থেকে নীচে।
এই দিন চিনা শীর্ষ ব্যাঙ্ক পিপ্লস ব্যাঙ্ক অব চায়না ডলারের সাপেক্ষে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে ০.৫১%। ফলে লেনদেন শুরু হওয়া মাত্র চিনের বাজারে হু হু করে পড়তে থাকে শেয়ারের দাম। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই শেয়ার সূচক পড়ে যায় ৭%। অবস্থা সামাল দিতে সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী চিনের বাজার নিয়ন্ত্রক তৎক্ষণাৎ শেয়ার বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয়। বন্ধ হয়ে যায় শেয়ার বাজার।
ভারতের লগ্নিকারীদের অবশ্য আফশোস, নিজের দেশের আর্থিক অবস্থা অনেকটাই মজবুত জায়গায় চলে আসা সত্ত্বেও বাইরের সমস্যার জেরে ধাক্কা খাচ্ছে বাজার। বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে-র মন্তব্য, ‘‘অবস্থা এমনই যে, কাল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের কোনও সমস্যার খবরের জেরে বাজার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আজ বলা মুশকিল।’’ তাঁর মতে, বিদেশে এখন যা যা ঘটছে, তার সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব থেকে ভারতের মুক্ত থাকা কঠিন। অর্থনীতিবিদদের সুরেই অজিতবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশের আর্থিক হাল খারাপ হয়ে পড়ছে। অশোধিত তেলের দাম দ্রুত কমতে থাকায় পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির অর্থনীতি সঙ্কটে। অবস্থা এমন যে, তেল বেচে উৎপাদন খরচটুকুও তারা তুলতে পারছে না। ওই সব দেশে বহু ভারতীয় চাকরি করেন, যাঁরা ডলার পাঠান দেশে। তাঁদের চাকরির নিরাপত্তাও ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া ওই সব দেশে ভারতীয়দের প্রচুর ব্যবসাও রয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণ সংস্থাগুলি তাদের বরাত খোয়াবে বলে আশঙ্কা।’’
ভারতের বাজার যে স্বল্প মেয়াদে চূড়ান্ত অনিশ্চিত থাকবে, তা নিয়ে সংশয় নেই বলে জানান জে এল আর লাঢা ফিনান্সিয়াল সির্ভিসেসের ডিরেক্টর অরুণ লাঢা। তবে তাঁর দাবি, ‘‘যেহেতু ভারতের আর্থিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে, তাই দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বাজার তেজী হবে।’’
আশায় বুক বেঁধেছেন স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখও। তাঁর মতে, ‘‘বর্তমান বাজার শেয়ার কেনার পক্ষে খুব ভাল সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন লগ্নি করলে ভবিষ্যতে ভাল মুনাফা করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে আমার ধারণা।’’ তবে সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের আপাতত শেয়ার বাজার থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন অজিতবাবু।