২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের সূচনা ভালই হয়েছে শেয়ার বাজারের পক্ষে। ক্ষণিকের জন্য হলেও সেনসেক্স ৩০ হাজার স্পর্শ করেছে বছরের প্রথম সপ্তাহেই। লগ্নি বাড়ছে দেশি এবং বিদেশি আর্থিক সংস্থার।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অনুমান, চলতি এবং আগামী অর্থবর্ষে ভারতের জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) বাড়বে যথাক্রমে ৭.৪ এবং ৭.৬% হারে। জিএসটি চালু হওয়ার পথে আর বাধা নেই। পরোক্ষ কর ব্যবস্থার এই সংস্কারে বিদেশি লগ্নিকারীরা বিশেষ ভাবে উৎসাহিত। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক বাজার বিশেষজ্ঞ আগামী দিনে ‘বুল বাজার’ দেখতে পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সংস্থা সিএলএসএ-র পূর্বাভাস, আগামী মার্চের মধ্যে নিফ্টি-ও ছুঁতে পারে ১০ হাজার অঙ্কের মাত্রা। এখন নিফ্টি-র অবস্থান ৯,১৯৮ অঙ্কে। ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে বিদেশি লগ্নি ছাড়িয়েছে ৬০০ কোটি ডলার। কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) এবং ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)-এর তহবিল থেকেও বাজারে লগ্নি করা হয়েছে আনুমানিক ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার।
সিএলএসএ-র অনুমান, এই ধরনের লগ্নি-প্রবাহ বছরভর চলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে লক্ষ রেখে অনেক বিশেষজ্ঞই এখন মানুষকে ইকুইটি এবং ইকুইটি-নির্ভর ফান্ডে বেশি করে লগ্নির পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাজারকে কম-বেশি প্রভাবিত করতে পারে, এমন খবরের অভাব ছিল না বছরের প্রথম সপ্তাহে। ইকুইটিতে লগ্নি করার আগে যে-সব খবরকে গুরুত্ব দিতে হবে, চলুন, সেগুলি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে:
• রেপো রেট-এ (যে-হারে আরবিআই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ধার দেয়) এ বারের ঋণনীতিতে কোনও পরিবর্তন করেননি উর্জিত পটেল। তবে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে রিভার্স রেপো রেট (যে-সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নেয়)। মূল্যবৃদ্ধি মাথা চাড়া দেওয়ায় বাজার থেকে নগদের জোগান কিছুটা শুষে নেওয়াই এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
• বৃহস্পতিবার সংসদে উতরে গিয়েছে জিএসটি বিল। এর ফলে ১ জুলাই থেকে পণ্য-পরিষেবা কর জমানা শুরুর পথে কার্যত বাধা কাটল।
•এ বারের বাজেটে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাজেট এ বার এক মাস এগিয়ে আসায় এই সব খাতে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত খরচ শুরুর পদক্ষেপ করছে। এতে উপকৃত হবে পরিকাঠামো শিল্প। বাড়বে কর্মসংস্থান।
• উত্তরপ্রদেশের নতুন সরকার ৩৬,৪০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ মকুব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে অবশ্য খুশি নন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল। তাঁর মন্তব্য, এর ফলে ভবিষ্যতে মানুষ ঋণ পরিশোধে অনীহা দেখাবে, যার দায় বর্তাতে পারে করদাতাদের উপর।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে অর্থবর্ষের প্রথম অর্ধে ৪.৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় অর্ধে ৫ শতাংশ করেছে। এর ফলে ব্যাঙ্ক-সুদ আরও নেমে আসার সম্ভাবনা কমবে।
• নোট বাতিলের প্রভাবে ব্যবসার কিছুটা ক্ষতি সত্ত্বেও প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-’১৭ সালে কেন্দ্রের কর আদায় বেড়েছে ১৮%, পৌঁছেছে ১৭.১ লক্ষ কোটি টাকায়। বিশদ তথ্য দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে। কর আদায় কিছুটা বেড়েছে কালো টাকা ঘোষণার প্রকল্পের জন্যও।
• গত কয়েক দিনে প্রতি ডলারের দাম নেমে এসেছে ৬৪.২৮ টাকায়। বছর-দেড়েকের মধ্যে এটিই টাকার সর্বোচ্চ দাম। এর ফলে সুবিধা হবে আমদানি-নির্ভর শিল্পের। ডলার ভাঙিয়ে কম আয় হবে রফতানিকারীদের।
• সেবি-র সদ্য প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের ৯৫ শতাংশ পরিবারই টাকা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে চায়। ১০ শতাংশের কম মানুষ টাকা রাখতে চান মিউচুয়াল ফান্ডে। ব্যাঙ্কের পরে লগ্নির জায়গা হিসেবে মানুষের দ্বিতীয় পছন্দ জীবন বিমা। এর পরের স্থানগুলিতে আছে যথাক্রমে সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প, গৃহসম্পত্তি, মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার এবং পেনশন প্রকল্প, কোম্পানি জমা প্রকল্প, ডিবেঞ্চার, পণ্যের আগাম লেনদেনের বাজার ইত্যাদি। সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে অবহিত আছেন মাত্র ১.৪ শতাংশ মানুষ। এই তথ্য কিন্তু বাজারের পক্ষে আদৌ উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
• ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির মোট সম্পদের পরিমাণ (এইউএম) ৩৫% বেড়ে পৌঁছেছে ১৮.৩ লক্ষ কোটি টাকায়। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয়, মানুষ এ বার ঝুঁকতে শুরু করেছেন মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে লাভ বাড়বে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিতেও। ব্যাঙ্কে কম সুদের জমানায় তাই আরও বেশি মানুষ ঝুঁকতে পারেন ফান্ডের প্রতি।