টেক মহীন্দ্রার শহর ছাড়া, রাজ্যকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ

মূলত নতুন প্রযুক্তির সুনামিতেই পশ্চিমবঙ্গে পাততাড়ি গোটানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে টেক মহীন্দ্রা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ছ’মাসের মধ্যেই সম্ভবত রাজ্য থেকে ব্যবসার পাট গোটাতে চলেছে তারা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

রাজ্যে টেক মহীন্দ্রার ঝাঁপ ফেলা রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপ চায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সংগঠন এফআইটিই (ফাইট)। এ নিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে চায় তারা। লাগাতার ছাঁটাই আটকাতে কথা বলতে চায় বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গেও।

Advertisement

মূলত নতুন প্রযুক্তির সুনামিতেই পশ্চিমবঙ্গে পাততাড়ি গোটানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে টেক মহীন্দ্রা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ছ’মাসের মধ্যেই সম্ভবত রাজ্য থেকে ব্যবসার পাট গোটাতে চলেছে তারা। সংশ্লিষ্ট শিল্প-মহল সূত্রে খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি। কলকাতায় তাদের কর্মী সংখ্যা প্রায় ২,০০০। অর্ধেকই রয়েছেন বিপিও পরিষেবায়। কর্তারা দফায়-দফায় শহরে এসে অনেক কর্মীর কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তাঁরা বেঙ্গালুরু বা পুণে যেতে রাজি কি না। সংশ্লিষ্ট সূত্রেও খবর, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেমন উন্নত প্রকল্পের কাজ এখানকার অফিসে না-হওয়ায় আর কলকাতায় ব্যবসা চালাতে আগ্রহী নয় তারা। এ নিয়েই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় ফাইট।

সেই সঙ্গে তাদের দাবি, দেশের অন্যান্য অংশের মতো কলকাতাতেও এখন নানা অভিযোগ নিয়ে আসছেন বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা। যেমন, অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে ফিরে দেখছেন, নতুন করে আর কাজ দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। বসিয়ে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। অনেক ক্ষেত্রে আবার কর্মদক্ষতা বাড়ানোর (পার্সোনাল ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম) নামে এমন লক্ষ্য (টার্গেট) সামনে ঝোলানো হচ্ছে, যা ছোঁয়া অসম্ভব। পরে সেই লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক কর্মীকে। এ ধরনের অভিযোগ এখন শহরে ঘন ঘন উঠতে শুরু করেছে কগনিজ্যান্ট, আইবিএম, উইপ্রো, ক্যাপজেমিনির মতো সংস্থার বিরুদ্ধে। তাই তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চায় ফাইট।

Advertisement

এক দিকে, এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন মুলুকে কড়াকড়ি। অন্য দিকে, নতুন প্রযুক্তির ঢেউ। এই জোড়া চ্যালেঞ্জে খোলনলচে বদলের রাস্তা খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তুলনায় কম খরচে দক্ষ কর্মী জুগিয়ে মোটা ব্যবসার যে মডেল এত দিন রমরমিয়ে চলেছে, তা অকেজো হয়ে পড়ছে ক্রমশ। কারণ, সেই কম দক্ষতার কাজ করছে মেশিনই। ফলে কাজ খোয়াচ্ছেন বহু কর্মী।

কর্মী ছাঁটাইয়ের এই ছবি বেশ কিছু দিন ধরেই খুব বেশি করে প্রকট বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদের মতো তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের গড়ে। যে কারণে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সরকারের সঙ্গে বসেছে বা বসার চেষ্টা করছে ফাইট। দেশ জুড়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা। সেই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, যারা বরাবর বন্‌ধের দিনেও পুরো সময় কাজ করতে অভ্যস্ত। এ বার কলকাতাতেও কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসায় সেগুলি নিয়ে এখানে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় কর্মী সংগঠনটি।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে শুধু যন্ত্রের কারণে ৬৯% চাকরি কমবে ভারতে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা সংস্থা হর্সেস ফর সোর্সেস রিসার্চের দাবি, চার বছরের মধ্যে ৬.৪ লক্ষ কাজের সুযোগ হারিয়ে যাবে এই দেশে। বিশেষত মার খাবে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও বিপিও। যেখানে অনেক ক্ষেত্রে একই কাজ করতে হয় বারবার। কিছু কাজে দক্ষতাও লাগে তুলনায় সামান্য কম। কিন্তু তার আঁচ থেকে কর্মীদের বাঁচানোর জন্য তাঁদের নতুন ভাবে প্রশিক্ষণ দিতে কিংবা উন্নততর কাজ ও প্রযুক্তির সঙ্গে সড়গড় করতে সংস্থাগুলি এখনও সে ভাবে উদ্যোগী নয় বলে সংগঠনটির দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন