ভিসা-অভিযোগ খাস মার্কিন মুলুকেই, আশঙ্কা উস্কে ফের ফরমান ট্রাম্পের

অনেকের মতে, হোয়াইট হাউসের এই বিবৃতি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়াতে বাধ্য। কারণ, ফি বছর ইস্যু হওয়া ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসার সিংহভাগই যায় তাদের ঝুলিতে। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

হোয়াইট হাউসের তরফে হুঁশিয়ারি শোনা যাচ্ছে অনেক দিন থেকেই। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ফের ফরমান জারি করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে স্পষ্ট জানানো হল, প্রেসিডেন্ট চান, শুধু সস্তায় বিদেশি কর্মী পেতে এইচ-১বি ভিসার অপব্যবহার বন্ধ হোক। তা দেওয়া হোক সত্যিকারের মেধা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে। যাতে মূলত তা যায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারে দড় পেশাদারদের পকেটে। দ্রুত রাশ টানা সম্ভব হয় তুলনায় কম টাকায় কাজ করে দেওয়া ভিন্‌ দেশি কর্মীদের কাছে কাজ পাচারে (আউটসোর্সিং)।

অনেকের মতে, হোয়াইট হাউসের এই বিবৃতি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়াতে বাধ্য। কারণ, ফি বছর ইস্যু হওয়া ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসার সিংহভাগই যায় তাদের ঝুলিতে।

Advertisement

এইচ-১বি ভিসা কী?

• কাজের সূত্রে মার্কিন মুলুকে অস্থায়ী ভাবে থাকার ছাড়পত্র।

• সাধারণত এই ভিসায় তিন বছর পর্যন্ত থাকা যায়। প্রয়োজনে সেই সময় বাড়িয়ে করা যায় ছ’বছর পর্যন্ত।

• যে সমস্ত কাজে বিশেষ দক্ষতা লাগে (ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি), তাতে আমেরিকার বা ওই দেশে অফিস থাকা কোনও সংস্থা মার্কিন মুলুকের মাটিতে এক জন বিদেশিকে নিয়োগ করতে চাইলে এই ভিসা প্রয়োজন হয়।

• নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নেওয়া যায় পরিবারের সদস্যদের।

• ৫ বছর কাটালে পাকাপাকি ভাবে থাকার আবেদন করাও সম্ভব।

কাদের লাগে?

• বরাত পাওয়া কাজে কর্মী পাঠাতে ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা।

• এ দেশ থেকে কর্মী নিতে ব্যবহার করে গুগ্‌ল, মাইক্রোসফটও।

• আইন বদলালে সবচেয়ে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা সংস্থাগুলির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদেরই।

সুযোগ পান ক’জন?

• এক আর্থিক বছরে ইস্যু করা হয় ৬৫ হাজারটি পর্যন্ত।

• তার বাইরেও ২০ হাজারটি তোলা থাকে স্নাতকোত্তর বা তার বেশি ডিগ্রি থাকাদের জন্য। সে ক্ষেত্রে আবার অগ্রাধিকার আমেরিকার প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি পকেটে থাকলে।

• সাধারণত এইচ-১বি ভিসার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ থাকে ভারতীয়দের পকেটে।

এইচ-৪ ভিসা বৃত্তান্ত

• ইস্যু করা হয় এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কাজে আসা কর্মীর স্বামী/ স্ত্রীকে এবং সন্তানদের (২১ বছরের কম বয়সী)। এতে মার্কিন মুলুকে কাজের সুযোগ মেলে।

• এইচ ১বি-র মতো এই ভিসা নিয়েও কড়াকড়ি করার কথা বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

আগেই হুমকি

• গোড়া থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এইচ-১বি ভিসায় কর্মীকে বেতন দিতে হবে বছরে অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। এখন যা ৬০ হাজার ডলার।

• আগে কাজ দিতে হবে একই যোগ্যতার ভূমিপুত্রকে।

• ২০% ভিসা তুলে রাখতে হবে নতুন ব্যবসা শুরু করা সংস্থা বা স্টার্ট-আপগুলির জন্য।

• বন্ধ করতে হবে এইচ-১বি ভিসার অপব্যবহার ও জালিয়াতি।

• শুধু ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামার’কে আর বিশেষ ভাবে দক্ষ বলা যাবে না।

ফের ফরমান

• এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করা হোক নিখাদ মেধার ভিত্তিতে।

• দেওয়া হোক সেই সমস্ত কাজের জন্য বিদেশি কর্মী আনতে, যেখানে সত্যিই খুব উঁচু দরের দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী আনা জরুরি।

• শুধু সস্তায় বিদেশি কর্মী পেতে (আউটসোর্সিং) এর ব্যবহারে রাশ টানুক আমেরিকার মাটিতে ব্যবসা করা সংস্থাগুলি।

• একই ভাবে খতিয়ে দেখা হোক এইচ-৪ ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা। তার জন্য নেওয়া হতে পারে আমজনতার মতামতও।

তবে শুধু ভারতীয় সংস্থা নয়। ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের এই কড়া অবস্থান ঘুম কেড়েছে গুগ্‌ল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মতো মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থারও। কারণ, তুলনায় কম খরচে দক্ষ কর্মী পেতে এই ভিসা অনেক দিন ধরেই তাদের অন্যতম অস্ত্র। সেই কারণেই ওয়াশিংটনের এই ভিসা নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মার্কিন সংস্থাগুলির সংগঠন কম্পিট আমেরিকা। মার্কিন স্বরাষ্ট্র (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) সচিবকে সম্প্রতি এ নিয়ে চিঠিও দিয়েছে তারা। অভিযোগ, হালে এইচ-১বি ভিসা আটকে দেওয়া হচ্ছে খুব বেশি সংখ্যায়। তার জন্য খাড়া করা হচ্ছে হাজারো যুক্তি। কখনও শিক্ষাগত যোগ্যতা তো কখনও কোনও জরুরি দক্ষতা— বিভিন্ন যুক্তিতে ওই ভিসা আটকে দেওয়া হচ্ছে বিপুল সংখ্যায়।

আশঙ্কা দানা বাঁধছে এইচ-৪ ভিসা নিয়েও। কারণ, এ নিয়ে মার্কিন মুলুকে সাধারণ মানুষের মতামত জানতে চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে আশঙ্কা, শেষমেশ এই ভিসায় কড়াকড়ি হলে, কাজের সুযোগ নড়বড়ে হবে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন মুলুকে যাওয়া কর্মীর স্বামী/ স্ত্রীরও।

ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের যুক্তি, এইচ-১বি ভিসায় অন্য দেশ থেকে কর্মী আনার মূল উদ্দেশ্য দুনিয়া ঢুঁড়ে সেরা ও সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের মার্কিন মুলুকে নিয়ে আসা। বিশেষত সেই সমস্ত ক্ষেত্রে, যেখানে ওই মানের দক্ষতা আমেরিকায় অমিল। কিন্তু আদপে ওই ভিসায় আসা কর্মীরা কাজ ‘কেড়ে নিয়েছেন’ ভূমিপুত্রদের। কিন্তু ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের পাল্টা দাবি, এই ভিসা-নীতি এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেই শুধু আঘাত করবে না, আমেরিকায় ওই ব্যবসা চালানোর খরচও অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে।

অনেকে অবশ্য বলছেন, ভিসা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতিশ্রুতি অনেক দিন ধরেই মার্কিন মুলুকে ভোট-বাজারে মনজয়ের চেনা রাজনীতি। আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানাতেও ‘কাজ চুরি’র অভিযোগে ভারতের দিকে আঙুল উঠেছে। সওয়াল করা হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের বিপক্ষে। প্রস্তাব উঠেছে এইচ-১বি ভিসা ফি বৃদ্ধির।

এ বারও কি সেই সুর চড়াতে শুরু করলেন ভোটের দিকে পা বাড়াতে শুরু করা ট্রাম্প? না কি গত বার ভোটের আগে দেওয়া কথা রেখে আউটসোর্সিং বন্ধে মরিয়া তিনি? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরেই চোখ ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন