এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) টাকা শেয়ার বাজারে ঢালা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার থেকে পাওয়া রিটার্ন এখনও আশানুরূপ নয়। কিন্তু এই টাকা তো সাধারণ মানুষের। শেয়ার বাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় তা বিনিয়োগ করা কি আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত?
দেখুন, একমাত্র ফাটকা ছাড়া যে কোনও লগ্নির বিষয়েই দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে ভাবা উচিত। তাই কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বাজারে খাটানোও সঠিক সিদ্ধান্ত কি না, তা দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে ভাবতে হবে। কয়েক দিন বা মাসের হিসেব দেখে এ নিয়ে উপসংহার টানলে হবে না।
মনে রাখতে হবে, এনএসই-র সূচক ‘নিফটি ৫০’-এর অন্তর্ভুক্ত শেয়ারগুলিতে টাকা ঢেলে গত পাঁচ বছরে সম্মিলিত ভাবে মুনাফা হয়েছে গড়ে ১৬% করে। ইতিহাস বলছে, ওই ধরনের লগ্নিতে ভাল আয় হয়েছে অতীতেও। তা ছাড়া, ইপিএফের টাকা বাজারে ঢালা সারা বিশ্বেই রীতি।
এখানে আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। ইপিএফের মতো বড় অঙ্কের তহবিলের অন্তত একটি অংশ দেশের বাজারে লগ্নি করা হলে, তার ভিত আরও মজবুত হবে। শেয়ার বাজার বিভিন্ন সংস্থার মূলধন সংগ্রহের জায়গা। তাই ইপিএফের টাকা বাজারকে আরও চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে। যা আখেরে দেশের উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
এখন ভারতে শেয়ার বাজারের রমরমা মূলত নির্ভর করে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির বিনিয়োগের (এফআইআই) উপরে। ওই সব বিদেশি সংস্থার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের বাজারের পক্ষে ঝুঁকির নয় কি?
ওই সমস্ত সংস্থার লগ্নির পরিমাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। বাস্তব হল, ওই সব বিদেশি লগ্নি সংস্থার তুলনায় দেশি লগ্নি সংস্থা এবং সাধারণ লগ্নিকারীদের বিনিয়োগ আমাদের শেয়ার বাজারে অনেক বেশি। আর ঝুঁকির কথাই যদি তোলেন, তা হলে বলব, ভারতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি উন্নত মানের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কায়েম করেছে। শেয়ার কেনা-বেচার জায়গা (স্টক এক্সচেঞ্জ) হিসেবে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাও যথেষ্ট মজবুত।
তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, বিনিয়োগের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতের শেয়ার বাজারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তা ছাড়া, বিদেশি এবং ভারতীয় লগ্নি সংস্থাগুলির মধ্যে স্বার্থের কোনও বিরোধ নেই।
সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের স্বার্থে এনএসই কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে আমাদের কাজ, বিনিয়োগের বিষয়ে লগ্নিকারীদের সব রকম সহায়তা করা। লগ্নিকারীদের মধ্যে বাজার সম্পর্কে যাতে সচেতনতা তৈরি হয়, তা মাথায় রাখি আমরা।
পাশাপাশি, বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করা আমাদের লক্ষ্য। বাজারে লগ্নি টানতে উপযুক্ত প্রকল্পের ব্যবস্থা যাতে করা যায়, মাথায় রাখা হয় সে কথাও। যেমন, মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) ইত্যাদি। এগুলি এমন সব প্রকল্প, যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র সাধারণ লগ্নিকারীরা সহজে বাজারে টাকা ঢালতে পারেন।
এর জন্যই নিফটি-ইটিএফ চালু করেছি। গত ১৫-১৮ মাসে ওই প্রকল্পে রিটার্নের ক্ষেত্রে ভাল অগ্রগতি চোখে পড়েছে। এক সময়ে শুধু নিফটি-ইটিএফ এবং গোল্ড-ইটিএফ বাজারে চালু ছিল। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে নিয়ে সিপিএসই-ইটিএফ আর ব্যাঙ্ক-ইটিএফও বাজারে এসেছে। এ ছাড়াও ফান্ডে টাকা ঢালার জন্য রয়েছে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিপ)।
আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এই সমস্ত প্রকল্পের সুবাদে বিনিয়োগের যে-পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, তা ক্ষুদ্র সাধারণ লগ্নিকারীদের নিশ্চিন্তে এবং সহজে বাজারে লগ্নির রাস্তা করে দেওয়ায় কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে।
বেশ কিছু সদ্য ব্যবসা শুরু করা সংস্থা (স্টার্ট-আপ) এনএসই-তে নথিভুক্ত। পূর্বাঞ্চলে এ ধরনের বহু সংস্থা আছে। তারা এনএসই থেকে কী ভাবে লাভবান হতে পারে? ওই সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষাতেই বা এনএসই কী পদক্ষেপ করেছে?
স্টার্ট-আপ এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি সংস্থাকে (এসএমই) আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শুধু নথিভুক্তিতে সীমাবন্ধ নয়। বরং ওই সমস্ত সংস্থার জন্য এমন একটি পরিকাঠামো তৈরি করেছি, যাতে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী লগ্নিকারীদের কাছে বিবেচিত হয়। এনএসই-তে নথিভুক্ত হয়ে সুযোগ পায় নিজেদের ব্র্যান্ড-নাম প্রচারের।
তবে আমরা জোর দিই সংস্থাগুলিকে রেটিং (মূল্যায়ন) করানোর ব্যাপারে। কারণ, তাতে লগ্নিকারীদের কাছে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
মোবাইল ফোনে শেয়ার লেনদেন ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। কী হারে তা বাড়ছে? এটি কি নিরাপদ?
মোবাইলে শেয়ার কেনা-বেচায় অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রতি বছর এই প্রক্রিয়া মারফত লেনদেন বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ হারে।
পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এনএসই-র পরিকল্পনা কী? রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে কিছু করার কথা ভবছেন?
পশ্চিমবঙ্গ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা এখানেই। এ রাজ্যের বহু মানুষ বেআইনি লগ্নি সংস্থার কাছে টাকা রেখে ঠকেছেন। লগ্নির সঠিক জায়গা বাছাইয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গত বছর এখানে ২০০টি কর্মশালা করেছি।
অন্য রাজ্যের মতো এখানেও স্কুল স্তরেই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে পড়ুয়াদের অবগত করতে আমরা যৌথ ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
বাজারকে বোঝা দিন-দিন কঠিন হয়ে উঠছে। এমন তিনটি বিষয় বলুন যা, বাজারকে বোঝার জন্য সাধারণ লগ্নিকারীদের জেনে রাখা জরুরি।
এখন বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের শেয়ার বাজার একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। শেয়ার বাজারের হাল প্রতিফলিত হয় নিফটিতে। তাই বাজার বুঝতে নিফটির উপর নজর রাখা জরুরি। তা ছাড়া, দেশের আর্থিক অবস্থা এবং ব্যবসা উভয়ের ওঠা-নামাই একে প্রভাবিত করে। তাই কোন সময়ে তা উঠছে আর কখনই বা পড়ছে, তার উপর সজাগ নজর রাখা দরকার। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ব্যবসার মডেলই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে থাকে। বাজারের হাল-হকিকত বুঝতে আপনাকে নজর রাখতে হবে তার উপরেও।