বিস্তর ঢাকঢোল পিটিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) বিক্রির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্রেতা মেলেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনতে এই ‘অরুচি’ এখন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রের। কারণ, ‘মহারাজ’কে কিনতে যেমন কেউ আগ্রহ দেখায়নি, তেমনই একই সমস্যা অন্য অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষেত্রেও। তাই চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া কী ভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে মোদী সরকারের অন্দরে।
এ বছর বিলগ্নিকরণ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন আপাতত অসুস্থতার জন্য অর্থ মন্ত্রক থেকে দূরে থাকা অরুণ জেটলি। মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, যে সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কেন্দ্র অংশীদারি কমাতে বাজারে শেয়ার ছাড়ছে, সেখানে তেমন কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যে সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, সমস্যা সেখানেই। অর্থাৎ, গন্ডগোল সংস্থা বিক্রি করতে গেলেই। কারণ খদ্দের মিলছে না।
মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১৬ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ২৪টি সংস্থার তালিকা তৈরি করে। বলা হয়, দ্রুত গতিতে তাদের কৌশলগত বিলগ্নিকরণ (স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেস্টমেন্ট) হবে। অর্থাৎ, তাদের নিয়ন্ত্রণ বা সিংহভাগ শেয়ার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তালিকা তৈরির দু’বছর পরের চিত্র হল, একমাত্র হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের (এইচপিসিএল) মালিকানা বদল হয়েছে। তা-ও কিনেছে আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি। মূলত সেই সুবাদেই গত অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণ থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে কেন্দ্র। কিন্তু এখন ওএনজিসি বলছে, সংস্থাটি কিনতে গিয়ে তাদের হিসেবের খাতার অবস্থা মোটেই ভাল নয়। তাই পেট্রল, ডিজেলের দাম কমানোর বোঝাও সম্প্রতি ঘাড়ে নিতে চায়নি তারা।
বিলগ্নিকরণ দফতর সূত্রের বক্তব্য, একই যুক্তিতে পিছিয়ে যাচ্ছে অন্য বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও। যারা কিছু ছোট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনবে বলে কেন্দ্রের আশা ছিল। অর্থ মন্ত্রকের ধারণা ছিল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, হিন্দুস্তান প্রিফ্যাব, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোজেক্টসের মতো সংস্থাকে কিনতে এগিয়ে আসবে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা না হওয়ায় সময়সীমা বাড়াতে হয়েছে।
কিন্তু বেসরকারি সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেন? এই অবস্থায় কী করবে অর্থ মন্ত্রক? বিলগ্নিকরণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আসলে বেসরকারি সংস্থার চাহিদা মতো লোভনীয় প্রস্তাব তৈরি করা যাচ্ছে না। তাতে পরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে। সমস্যা সেখানেই।’’ অনেকে বলছেন, এটাও সেই ইউপিএ জমানার মতো নীতিপঙ্গুত্বেরও সমস্যা।
সূত্রের খবর, বিলগ্নিকরণ থমকে নেই দেখাতে দু’মাসে তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ‘ডেট এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ বাজারে ছাড়া হবে। তালিকায় আছে রেল বিকাশ নিগম। ডিসেম্বরের মধ্যে নিপকো, গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স, মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্সের মতো আরও পাঁচ সংস্থার নতুন শেয়ার বাজারে আসবে।
তা ছাড়া নর্থ ব্লকের দাবি, ‘‘এআইয়ে হোঁচট খেলেও স্কুটার্স ইন্ডিয়া ও হেলিকপ্টার সংস্থা পবনহংস বেচার প্রক্রিয়া শুরুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।’’ যদিও কপ্টার সংস্থার জন্যও আগ্রহ দেখা যায়নি এখনও। পরিস্থিতি সামাল দিতে যে কোনও উপায়ে এআই বিক্রি করতে কোমর বাঁধছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, তার জন্য তাদের আপত্তি নেই বিক্রির শর্ত বদলেও।