উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

উন্নত পরিষেবা দিতে দুই সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাকে ঢেলে সাজবে রাজ্য

চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত। ঘরে ঘরে পৌঁছেও যাচ্ছে আলো। বিদ্যুৎ পরিষেবার দিক থেকে দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নাম। অথচ রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি আর্থিক দিক থেকে মোটেই শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে নেই।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৯:১৭
Share:

চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত। ঘরে ঘরে পৌঁছেও যাচ্ছে আলো। বিদ্যুৎ পরিষেবার দিক থেকে দেশের প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নাম। অথচ রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি আর্থিক দিক থেকে মোটেই শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে নেই।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, বিদ্যুৎ পরিষেবার মান আরও উন্নত হোক। আর তার জন্য প্রয়োজনে আমূল সংস্কারের পথে হাঁটতে বলেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের আর্থিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খাতায়-কলমে লাভজনক সংস্থা। কিন্তু তাদের আর্থিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে। নগদ অর্থের টানাটানিতে সংস্থা চালাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ কর্তাদের। মূলধনের প্রয়োজন হলেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। যার ফলে দুই সংস্থার মাথাতেই বাড়ছে বোঝা।

Advertisement

কেন এই অবস্থা?

নবান্ন সূত্রে খবর, দুই সংস্থার ‘রেগুলেটরি অ্যাসেট’ (মাসুল হিসাবে ভবিষ্যতে বাজার থেকে যা এখনও তোলা বাকি) প্রায় ১২ হাজার কোটি। আগামী তিন-চার বছরে এই অঙ্ক ১৪-১৫ হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্য দিকে, বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানো ও বকেয়া বিল আদায়ে বড়সড় খামতি থেকে দিয়েছে। তার জন্যও ফি-বছর কয়েকশো কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে কোষাগারে। আর বণ্টন সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমেরও আয় নড়বড়ে হয়ে যায়। কারণ বণ্টন সংস্থাকে বিদ্যুৎ বিক্রি করেই নিগমের যাবতীয় আয়। এই সাঁড়াশি চাপেই নাস্তানাবুদ সরকারি দুই সংস্থা। এর জেরে ভবিষ্যতে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ পরিষেবা ক্ষেত্র।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনের জন্যই আর্থিক পুনর্গঠনের পথে যেতে চাইছে নবান্ন। দু’টি সংস্থাই যাতে ধাপে ধাপে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, তার রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে, তার জন্য পরামর্শ নেওয়া হবে অভিজ্ঞ বিদ্যুৎ কর্তাদের।

রাজ্য প্রশাসন চাইছে, দুই সংস্থার আর্থিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি আগামী দিনে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়াতে। গত তিন-চার বছর ধরে এই ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীও চান, রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়ুক। সেই কারণেই নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির কাজ শেষ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোথায় নতুন প্রকল্প গড়া হবে, তারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে, লো-ভোল্টজ সমস্যাও চিন্তায় ফেলেছে নবান্ন কর্তাদের। গত তিন-চার বছরে বণ্টন সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দেড় কোটিতে পৌঁছেছে। কিন্তু জেলাস্তরে বহু জায়গাতেই লো-ভোল্টেজের সমস্যা নিয়ে নানা অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কানে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বিদ্যুৎ যেমন মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই ভোল্টেজ সমস্যাও মেটাতে হবে। তার জন্য যা-যা করা দরকার, সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন তিনি। সেই সূত্র ধরেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে কোথায় নতুন সাবস্টেশন তৈরি করা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামো ব্যবস্থার (হাইটেনশন লাইন) আমূল পরিবর্তনের দিকেও নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement