গৌতম গম্ভীর। ছবি: পিটিআই।
পুরনো মেজাজে গৌতম গম্ভীর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় জিতে সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক বাউন্সার সামলালেন ভারতীয় দলের কোচ। শুধু সামলালেন না, একের পর বাউন্সার উড়িয়ে দিলেন তিনি। অপ্রিয় প্রশ্ন শুনে মেজাজ সামলাতে পারলেন না তিনি। গলার স্বর বেড়ে গেল। গম্ভীরের কথা থেকে স্পষ্ট, যত দিন তিনি কোচ রয়েছেন, তত দিন তাঁর কথাই শেষ। বাইরের কারও সমালোচনা বা পরামর্শ, কোনওটাই শুনবেন না তিনি।
এক দিনের সিরিজ় জিতলেও টেস্ট সিরিজ়ে হেরেছে ভারত। গম্ভীরের কম সমালোচনা হয়নি। সেই কারণে হয়তো মনে মনে ক্ষোভও ছিল তাঁর। গম্ভীরকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারতীয় দলে ভিন্ন ফরম্যাটে কি ভিন্ন কোচ দরকার? প্রশ্ন শুনে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সাংবাদিককে সেখানেই জবাব দেন কোচ। গম্ভীর বললেন, “এই কথা উঠছে, কারণ ফলাফল আমাদের পক্ষে যায়নি। কিন্তু কেউ বলছে না বা কোনও সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে না যে, প্রথম টেস্টে অধিনায়ককে ছাড়াই আমাদের খেলতে হয়েছিল। ও ব্যাটই করতে পারেনি। আমরা ২৩ রানে হেরেছিলাম। আমি সাংবাদিক বৈঠকে এসে জবাব দিই না। তার মানে এই নয় যে সত্যিটাও আপনারা দেখাবেন না।” শুভমনের না থাকাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে কথাও শোনা যায় গম্ভীরের মুখে। তিনি বলেন, “কেউ তো শুভমনের না থাকার কথা বলছে না। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ়ে আমরা অধিনায়ককে পাইনি। এমন এক জন ব্যাটারকে পাইনি যার লাল বলের ক্রিকেটে শেষ সাত ম্যাচে ১০০০-এর কাছাকাছি রান আছে।” টেস্ট সিরিজ় হেরে যে রূপান্তরের কথা গম্ভীর বলেছিলেন, তা আরও এক বার শোনা গিয়েছে। কোচ বললেন, “দল একটা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতার অভাব আছে। শুভমন ফর্মে ছিল। কিন্তু ওকে পেলাম না। কেউ সেটা বলছেন না। দেখলাম, আইপিএলের একটা দলের মালিকও সমালোচনা করেছেন। সকলে পিচের কথা বলছেন। পরিস্থিতির কথা বলছেন। কই, আমি তো বাকিদের কিছু বলতে যাই না। তা হলে যাঁরা ক্রিকেট বোঝেন না, তাঁরা কেন কথা বলতে আসছেন? তাঁদের তো কথা বলার কোনও এক্তিয়ার নেই।”
এখন থেকেই বিশ্বকাপের কথা ভাবছেন না গম্ভীর। তিনি বর্তমানে থাকতে চান। তাই নতুনদের সুযোগ দিচ্ছেন। গম্ভীর বললেন, “দেখুন, আমাদের বুঝতে হবে যে, বিশ্বকাপ এখনও দু’বছর পর হবে। তাই বর্তমানে থাকার চেষ্টা করছি। রুতুরাজ দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের হয়ে ভাল খেলেছে। তাই ওকে সুযোগ দিয়েছি। রুতুরাজ ও যশস্বীর সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।”
বিশাখাপত্তনমে টস জিতলেও আগের ২০টি এক দিনের ম্যাচে টস হেরেছে ভারত। টসের প্রশ্ন উঠতেই আবার ফুরফুরে মেজাজে গম্ভীর। তিনি বললেন, “২০-২১টা টসের কথা জানি না। আমার কোচিংয়ে প্রথম বার এক দিনের ম্যাচে টস জিতলাম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিশির পড়ছিল না। তাই টসের গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু বছরের এই সময়ে ভারতের মাঠে টস খুব গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টিতে সমস্যা হয় না। কারণ, দু’দলই রাতে খেলে। এক দিনের ক্রিকেটে টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।”
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির সঙ্গে গম্ভীরের সম্পর্ক নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। দু’জনের সঙ্গে যে কোচের সম্পর্ক খুব ভাল নয়, সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তবে এই সিরিজ়ে রোহিত ও কোহলি যে ভাবে ব্যাট করেছেন তার প্রশংসা করেছেন কোচ। গম্ভীর বললেন, “ওরা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। এত বছর ধরে এত রান করেছে। ওদের অভিজ্ঞতা এই সিরিজ়েও দেখা গিয়েছে। আশা করছি আগামী দিনেও দেখা যাবে।” তবে দুই ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে খেলবেন শুভমন। সে কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন কোচ। গম্ভীর বললেন, “শুভমন ফিট। ও পুরো তৈরি। তাই তো ওকে টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া হয়েছে।”
গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার মিউজ়িক্যাল চেয়ারের মতো। প্রতি ম্যাচেই তা বদলে যায়। তা নিয়ে গম্ভীরের কম সমালোচনা হয় না। তবে গম্ভীরের মতে, সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বেশি মাতামাতি হয়। গম্ভীর বললেন, “আমি বিশ্বাস করি, সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডার বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু দুই ওপেনারের জায়গা নিশ্চিত। বাকিদের যে কোনও জায়গায় খেলতে হতে পারে। ওয়াশিংটন সেটা দেখিয়েছে। ওকে যেখানে নামিয়েছি, সেখানেই ভাল খেলেছে। এই রকমের ক্রিকেটার আমাদের দরকার। ওয়াশিংটনের ভবিষ্যৎ উজ্জল।”
গম্ভীর বরাবরই আগ্রাসী ক্রিকেটের ভক্ত। কিন্তু সব সময় যে আগ্রাসী ক্রিকেট দরকার নেই সেটা জানিয়েছেন কোচ। বিশাখাপত্তনমে শতরান করেছেন যশস্বী জয়ওসওয়াল। তাঁর ইনিংসের প্রশংসা করেও গম্ভীর জানিয়েছেন, কী ভাবে ইনিংস গড়তে হবে সেটা যশস্বীকে বুঝতে হবে। গম্ভীর বললেন, “এক দিনের ক্রিকেটে সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পরিস্থিতি বুঝতে হবে। কখন কী ভাবে ব্যাট করতে হবে সেটা বুঝতে হবে।”