মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত মিত্র। নবান্নে বৃহস্পতিবার। -নিজস্ব চিত্র
নোট বাতিলের জেরে মন্দার কবলে অর্থনীতি। সেই কারণেই আপাতত পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে সমর্থন করবে না তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার নবান্নে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে পাশে বসে সায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
অর্থমন্ত্রী জানান, তৃণমূল কংগ্রেস জিএসটি চালুর পক্ষে। অনেক আলোচনা চালিয়ে এ নিয়ে একটি সর্বসম্মত অবস্থানে পৌঁছনো গিয়েছে। কিন্তু এমন সময়ে কেন্দ্র একতরফা ভাবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অর্থনীতি সঙ্কটে পড়তে বাধ্য। এর পরে যদি জিএসটি চালু হয়, তার ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গ কেন, কোনও রাজ্যই নিতে পারবে না বলে দাবি করেন অমিতবাবু।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেস জিএসটি-র মূল সংবিধান সংশোধনী বিলটি সমর্থন করে পাশ করে দিয়েছে। এখন জিএসটি বিল অর্থ বিল হিসাবে সংসদে পেশ হলে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়াই পাশ হয়ে যেতে বাধ্য। তাই এই বিরোধিতার আদৌ কোনও মূল্য নেই বলেও দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের একাংশ।
রাজ্য অর্থ দফতর সূত্রের খবর, জিএসটি চালু হলে দেশে বছরে গড়ে কর আদায় ১৪% বাড়বে বলে ধরা হয়েছে। যে-সব রাজ্য করের হারের এই বৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না, তারা আগামী পাঁচ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ পাবে। আর যে-সব রাজ্যের কর বাড়বে ১৪ শতাংশের বেশি হারে, তারা কোনও ক্ষতিপূরণ পাবে না।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তার দাবি, রাজ্যে নিজস্ব করের বৃদ্ধির হার গত তিন-চার বছরে ১০ শতাংশের নীচে থেকেছে। তাই জিএসটি চালু হলে রাজ্য পাঁচ বছরে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পেতে পারত। কিন্তু নোট বাতিলের ফলে সে সব পণ্ড হওয়ার জোগাড়।
কেন? এ রাজ্যের অর্থ দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের ফলে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা আসতে বাধ্য। এর জেরে দেশের অধিকাংশ রাজ্যই কর আদায়ে ১৪% বৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। তখন প্রায় সমস্ত রাজ্যই ক্ষতিপূরণের দাবি জানাবে। অথচ দেশে সেস বাবদ আয় থেকে একটি বিশেষ থোক তহবিল গঠন করা হয়েছে। তাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা থাকার কথা। সেই টাকা দিয়েই জিএসটি খাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। এখন যা পরিস্থিতি তাতে এই তহবিলে যেমন ৫০ হাজার কোটি জমাও পড়বে না, তেমনই প্রায় সব রাজ্যই ক্ষতিপূরণের দাবি জানাবে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে জিএসটি চালু অবাস্তব পদক্ষেপ হবে।