রাজ্য ছাড়তে পারে হিন্দুস্তান স্টিলওয়ার্কস

কর্মী ছাঁটাইয়ে দেরি, চটে লাল পিএমও

অভিযোগ, ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া দ্রুত সারতে নির্দেশ জারি করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। সংস্থাটির নাম হিন্দুস্তান স্টিলওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন (এইচএসডব্লিউসিএল)।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৭
Share:

সারা দেশে বছরে অন্তত দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসনদে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। চার বছরের মাথায় কেন্দ্রের তথ্যই জানান দিয়েছে, বছরে দু’লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান করতেই হিমসিম তারা। বরং নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ফলে বহু মানুষের কাজ গিয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতায় সদর দফতর থাকা একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে ৪৭৮ জন চুক্তি ভিত্তিক কর্মীকে ছাঁটাই করতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া দ্রুত সারতে নির্দেশ জারি করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। সংস্থাটির নাম হিন্দুস্তান স্টিলওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন (এইচএসডব্লিউসিএল)।

Advertisement

সংস্থাটির ৯০ ভাগ কর্মীই চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা মাত্র ২৩। সারা দেশে ২৬টি দফতরে ৪৭৮ জন চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করেন। বিভিন্ন ইস্পাত সংস্থায় নির্মাণের কাজ করা সংস্থাটিকে সম্প্রতি অধিগ্রহণ করেছে আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনবিসিসি। তার পরেই চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি, কলকাতা থেকে সংস্থার কর্পোরেট দফতরও গুটিয়ে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকার ২০১৫ সালে কসবায় ৮.২৮ কাঠা জমি দেয় এইচএসডব্লিউসিএলকে। সেখানে দফতরের পরিকাঠামো তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতি সেই কাজ থমকে গিয়েছে।

Advertisement

১৪ ফেব্রুয়ারি এনবিসিসির পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের লিখিত বিবৃতি (মিনিটস) অনুযায়ী, সংস্থার সিএমডি উষ্মা প্রকাশ করে জানান, চুক্তি ভিত্তিক কর্মীর সংখ্যা কমানোর জন্য দেড় বছর আগে খোদ পিএমও থেকে নির্দেশ এসেছে। তা সত্ত্বেও ওই সমস্ত কর্মীদের ছাঁটাই করতে এত সময় লাগছে কেন? কর্মী ছাঁটাই এবং কর্পোরেট দফতর গুটিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে সংস্থার সিইও সুনীতা পুরসোয়ানিকে ই-মেল করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।

রাজ্যে থেকে সদর দফতর গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতেই সংস্থাটির সদর দফতর কলকাতা থেকে সরিয়ে না নেওয়ার জন্য সংসদে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পরে রাজ্যে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হয় বন্ধ করা হয়েছে, নয়তো নানা ভাবে বন্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এইচএসডব্লিউসিএল ব্যতিক্রম নয়।

তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে রেল অধিগ্রহণ করেছিল। মুনাফায় চলা সংস্থাটিকে সম্প্রতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এ বার তাদের লক্ষ্য হিন্দুস্তান স্টিলওয়ার্কস।’’ উল্লেখ্য, এক সময়ে লোকসান করলেও ২০১৫-১৬ সাল থেকে মুনাফা করতে শুরু করেছিল এইচএসডব্লিউসিএল।

চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ছাঁটাই করার চেষ্টাকে বেআইনি বলে দাবি করেছেন সংস্থায় আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সন্তোষ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার কর্মীদের ছাঁটাই না করার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তা করছেন কর্তৃপক্ষ।’’ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ লাহিড়ী ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক সোহম রায়ের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র সংস্থার মালিক হওয়া সত্ত্বেও বহু কর্মীকে পিএফের সুবিধা দেওয়া হয় না। এমন বহু কর্মী রয়েছেন, যাঁরা ১৫-১৬ বছর চাকরি করা সত্ত্বেও পিএফ পান না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন