নোট বাতিলের পরে ফেরত আসা পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট গোনার কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজেই কত নোট ফেরত এসেছে, তা বলা সম্ভব নয়।
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রশ্নের মুখে বুধবার এই যুক্তি দিয়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল বলেন, সপ্তাহে ছ’দিন আরবিআই কর্মীরা কাজ করে চলেছেন। আরও নোট গোনার যন্ত্র দরকার। তার বরাতও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে গোনা শেষ হবে, তারও সময়সীমা দিতে চাননি উর্জিত। তাঁর যুক্তি, নেপালে যে-সব বাতিল নোট ছিল, সেগুলি এখনও ফেরত আসেনি। এ ছাড়া সমবায় ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে বদলে দেওয়া সব নোট এখনও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে জমা পড়েনি।
নোট বাতিলের পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াল, তা বিশ্লেষণ করতে বীরাপ্পা মইলির নেতৃত্বাধীন অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি উর্জিতকে তলব করেছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিরোধী সাংসদরা ঠিকই করে রেখেছিলেন, উর্জিতের দেওয়া তথ্য থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র বার করবেন। যদি দেখা যায়, সরকারি হিসেবের থেকেও বেশি নোট ফেরত এসেছে, তা হলেই প্রমাণ হবে, জাল নোট জমা পড়লেও ধরা যায়নি। তাই শুরুতেই তৃণমূলের সৌগত রায়, সমাজবাদী পার্টির নরেশ অগ্রবালরা প্রশ্ন করেন, কত নোট ফিরে এসেছে। তারপর প্রশ্ন ওঠে, এখন কত নগদ বাজারে আছে? ডিজিটাল লেনদেনই বা কতটা বাড়ল?
উর্জিত জানান, নোট বাতিলের সময়ে বাজারে মোট ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকার নগদ ছিল। এখন ১৫.৪ লক্ষ কোটি। ডিজিটাল লেনদেন বাড়লেও ফের তা যে কমে আগের জায়গায় পৌঁছেছে, সে কথা কবুল করেন তিনি। বিরোধীদের যুক্তি, এতেই স্পষ্ট মোদীর কম নগদ ও ডিজিটাল লেনদেনের অর্থনীতির সূচনা করার দাবি ভাঁওতা।
প্রশ্নছিল, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কতখানি ভূমিকা ছিল? সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বিরোধীরা দেখাতে চাইছিলেন, আসলে মোদী নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তরও এড়ান উর্জিত।
নোট বাতিলের ধাক্কায় আর্থিক বৃদ্ধি কমবে বলে আগেই পূর্বাভাস দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কমিটির সদস্য হিসেবে বৈঠকে হাজির থাকলেও তিনি অবশ্য কোনও প্রশ্ন করেননি। কিন্তু অন্যদের এই প্রশ্নে উর্জিত জানান, চলতি বছরে বৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশে দাঁড়াবে। উল্লেখ্য, নোট বাতিলের আগে ৭.১% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
আজ প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে সাংসদদের প্রশ্নের মুখে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজে মুখ না-খুলে তাঁর ডেপুটি গভর্নরদের এগিয়ে দেন উর্জিত। নোট বাতিলের জেরে যে বহু মানুষের কাজ গিয়েছে, অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে, সে কথা স্বীকার করতে চাননি তিনি। বিরোধী সাংসদরা জানান, সংসদীয় কমিটির সামনে মিথ্যা বলা যায় না। ‘বলব না’ মন্তব্য করাও সম্ভব নয়। সে কারণেই কৌশলে অনেক জবাব এড়ান উর্জিত।
বৈঠক শেষে কমিটির চেয়ারম্যান মইলি বলেন, ‘‘গভর্নরকে আর ডাকা হবে না। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু বাদল অধিবেশনেই নোট বাতিল নিয়ে কমিটির রিপোর্ট জমা পড়বে।’’
সওয়াল-জবাব
• বাতিল নোটের কতখানি ফেরত এসেছে?
এখনও গোনা শেষ হয়নি। নোট গুনতে আরও যন্ত্র দরকার। বরাত দেওয়া হয়েছে।
• কবে শেষ হবে?
বলা যাচ্ছে না।
• কতখানি কালো টাকা ও জাল নোট ফেরত এল?
নির্দিষ্ট ভাবে উত্তর দেননি।
• নোট বাতিলের জেরে কি বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে?
চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে। আগামী আর্থিক বছরে তা ৭.৪% হওয়ার সম্ভাবনা।
• নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা কতখানি?
নির্দিষ্ট ভাবে উত্তর দেননি।
• তার পরে কি ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে?
প্রথমে বেড়েছিল। পরে কমে ফের আগের জায়গায় ফিরে এসেছে।
• বাজারে নগদ কি ফিরেছে?
নভেম্বরে নগদ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। এখন ১৫.৪ লক্ষ কোটি।