এক দিকে নগদের টানাটানি। অন্য দিকে ব্যবসার নতুন পথ খুঁজে পাওয়া। নোটের আকালে দেশের নতুন উদ্যোগ বা স্টার্ট-আপের দুনিয়া দেখছে এ রকমই বিপরীত দুই ছবি।
কেন্দ্র পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিলের পরে নগদের টান পড়েছে উদ্যোগ-পুঁজিতে। কারণ, নতুন ব্যবসা জন্ম নেওয়ার সময়ে যাঁরা পুঁজি ঢালেন, সেই ‘এঞ্জেল’ লগ্নিকারীরা নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত। স্টার্ট-আপে লগ্নি করার মতো অবস্থায় নেই অনেকেই। ফলে নানা ছোট-মাঝারি ব্যবসার মতো তহবিলের সমস্যা অন্তত এই মুহূর্তে ভালই টের পাচ্ছে নতুন উদ্যোগ সংস্থাগুলি।
কিন্তু তারই মধ্যে রুপোলি রেখা নগদহীন বাজারে নতুন ব্যবসা চালুর পথ খুলে যাওয়া। যেখানে হাতে টাকা না-থাকার বিকল্প ভাবতে গিয়ে উঠে আসছে বিভিন্ন রকমের অ্যাপ, মোবাইল ওয়ালেট, নেট বাজারের মতো ডিজিটাল হাতিয়ার তৈরির ভাবনা। বোনা হচ্ছে অসংখ্য নতুন স্টার্ট-আপের বীজ।
আশা-নিরাশার এই বিপরীত ছবি উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও। ৩০ হাজার স্টার্ট-আপের উপরে যে সমীক্ষা চালিয়েছে ডিজিটাল দুনিয়া সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘লোকাল সার্কলস সিটিজেন’। সেখানে দেখা গিয়েছে, সার্বিক ভাবে লগ্নি টানার ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি সদ্য তৈরি সংস্থাগুলি প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েছে। ব্যবসা মার খেয়েছে ২৮% সংস্থার। ৩৩ শতাংশের উপর কোনও প্রভাব পড়েনি। আর নগদহীন বাজারে ১৪% সংস্থার লেনদেন পরিস্থিতি আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে।
নগদের এই টান অবশ্য সাময়িক বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। কারণ তাঁদের মতে, উদ্যোগ-পুঁজি তহবিলে কালো টাকা নেই। ফলে নগদের জোগান বাড়লে লগ্নি ফিরবে। কলকাতার সংগঠন ক্যালকাটা এঞ্জেল নেটওয়ার্কের (ক্যান) প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ পানসারি যেমন বলছেন, ‘‘মূলত উঁচু আয়ের কিছু লগ্নিকারীই স্টার্ট-আপে পুঁজি ঢালেন। কিন্তু আপাতত তাঁরা নিজেদের ব্যবসা সামলাতে ব্যস্ত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই পুঁজি ফিরবে।’’
তবে এই নোট সঙ্কটের আবহেই যে স্টার্ট-আপ তৈরির নতুন জানলা খুলে যাচ্ছে, তা-ও জানিয়েছে ওই সমীক্ষা।
নেট দুনিয়ার জন্য আমজনতাকে প্রস্তুত করতে চাই মোবাইল অ্যাপ, ওয়ালেট, অনলাইন দোকানের মতো ডিজিটাল অস্ত্র। আর সেই ফাঁক ভরাট করার জন্য তৈরি হচ্ছে স্টার্ট-আপ ব্যবসা করার সুযোগ। পানসারির মতোই এ কথা একবাক্যে কবুল করেছেন তথ্য বিশ্লেষণ সংস্থা ‘টুকিটাকি’র প্রধান অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, চা সংক্রান্ত ই-কমার্স সংস্থা টি বক্স-এর কৌশল দুগর, আইডিজি ভেঞ্চার্স-এর টি সি সুন্দরম, মাইক্রোসফট-এর রবি নারায়ণ।
লগ্নির সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে ধারণা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমেরও। তাদের দাবি, টানাটানি ইতিমধ্যেই কমেছে। কারণ মেধার টানে স্টার্ট-আপে টাকা ঢালতে পিছপা হচ্ছেন না স্থানীয় শিল্পপতিরা। পানসারি জানান, গত অর্থবর্ষে মোট ৮টি স্টার্ট-আপে পুঁজি ঢেলেছে ক্যান। চলতি বছরে তা বাড়িয়ে অন্তত ১০ করা হবে।