কালো টাকা না-জানালে আয়কর হানার প্রস্তুতি

কালো টাকা ঘোষণার বিশেষ প্রকল্পেও যাঁরা সাড়া দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রস্তুত আয়কর দফতর। ইতিমধ্যেই কালো টাকার মালিকদের তালিকা তৈরি করেছে তারা। প্রকল্পের শেষ তারিখ পেরিয়ে গেলেই অফিসারেরা অভিযানে নামবেন বলে কেন্দ্রীয় আয়কর দফতর সূত্রে খবর।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

কালো টাকা ঘোষণার বিশেষ প্রকল্পেও যাঁরা সাড়া দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রস্তুত আয়কর দফতর। ইতিমধ্যেই কালো টাকার মালিকদের তালিকা তৈরি করেছে তারা। প্রকল্পের শেষ তারিখ পেরিয়ে গেলেই অফিসারেরা অভিযানে নামবেন বলে কেন্দ্রীয় আয়কর দফতর সূত্রে খবর।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কালো টাকা উদ্ধারের জন্য ‘ইনকাম ডিক্লারেশন-২০১৬’ প্রকল্পটি চালু করেছে আয়কর দফতর, যার মেয়াদ শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। যাঁদের কাছে কালো টাকা রয়েছে, তাঁরা তুলনায় কম আয়কর দিয়ে তা সাদা করার সুযোগ পাবেন এর মাধ্যমে। প্রকল্পের সুবিধাগুলি হল:
• ঘোষিত টাকার ৪৫% (সেস ও জরিমানা সমেত) আয়কর দফতরে জমা দিলেই বাকি টাকা সাদা করা যাবে। • কোন সূত্র থেকে আয় হয়েছে, তা-ও জানাতে হবে না। • যিনি ঘোষণা করছেন, তাঁর নামও গোপন থাকবে। • কালো টাকা দিয়ে কেনা সোনা বা সম্পত্তিও ঘোষণার সুযোগ রয়েছে।

কীসের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে কালো টাকার মালিকদের তালিকা? আয়কর দফতর সূত্রের খবর, তাদের হাতে থাকা তথ্য ছাড়াও বিদেশ থেকে হদিশ নেওয়া হয়েছে বেআইনি পথে আনা টাকার। এ জন্য ভারত ৯৪টি দেশের সঙ্গে চুক্তিও সই করেছে। তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানি, চিন, তাইল্যান্ড। কালো টাকার মালিকদের তালিকা তৈরিতে কাজে লাগানো হয়েছে ওই সব দেশ থেকে পাওয়া তথ্যও। মরিশাসের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। তবে সেখানকার তথ্য পাওয়া শুরু হবে ২০১৭-র গোড়া থেকে।

Advertisement

প্রকল্পটির সুযোগ যাঁরা নেবেন না, তাঁদের সাবধান করে দিয়ে আয়কর দফতরের এক উচ্চপদস্থ অফিসার বলেন, পরে ধরা পড়লে কর, জরিমানা, সুদ ইত্যাদি বাবদ তাঁদের গুনতে হবে প্রায় ১৪০% টাকা। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান: ধরুন কোনও ব্যক্তি ৬ বছর আগে ১ লক্ষ টাকার আয় গোপন করায় তা কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। এ বার তিনি যদি তা আয়কর দফতরকে জানান, তা হলে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েই রেহাই পাবেন। টাকাও সাদা হয়ে যাবে। কিন্তু তা গোপন করে ধরা পড়লে তাঁকে প্রথমত, কমপক্ষে ওই ১ লক্ষ টাকার উপর ৩০% অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা কর হিসাবে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, গত ৬ বছরের জন্য বার্ষিক ১২% হারে ২১,৬০০ টাকা দিতে হবে সুদ বাবদ। তৃতীয়ত, জরিমানা খাতে দিতে হবে মূল টাকার ৩০% (আরও ৩০ হাজার)। জরিমানার পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে তিন গুণ অর্থাৎ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্তও হতে পারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৮১,৬০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত তাঁকে ওই ১ লক্ষ কালো টাকার জন্য গুনতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও রুজু করতে পারে আয়কর দতর।

কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বণিকসভাও সুপারিশ করেছে। প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার চালাবেন বলে জানান এ ব্যাপারে গঠিত বিশেষ কমিটির অন্যতম কর্তা আয়কর দফতরের অতিরিক্ত ডিরেক্টর প্রিয়ব্রত প্রামাণিক। অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার্স-এর সহ-সভাপতি নারায়ণ জৈন বলেন, ‘‘আমরাও মক্কেলদের এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’

অবশ্য কালো টাকা রাখার অভিযোগে যে-সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আয়কর দফতর মামলা রুজু করেছে, তাঁরা এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন