আয় কমছে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর জমায়

এক দিকে স্বস্তি, অন্য দিকে দুশ্চিন্তা। আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় বাড়ি-গাড়ির ঋণে যেমন ইএমআই কমার আশা তৈরি হয়েছে, তেমনই আশঙ্কা দানা বেঁধেছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে আয় কমার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০০
Share:

এক দিকে স্বস্তি, অন্য দিকে দুশ্চিন্তা।

Advertisement

আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় বাড়ি-গাড়ির ঋণে যেমন ইএমআই কমার আশা তৈরি হয়েছে, তেমনই আশঙ্কা দানা বেঁধেছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে আয় কমার। ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত, পিপিএফ থেকে শুরু করে ডাকঘরের যাবতীয় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পেই কমছে সুদের হার। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, স্বল্প সঞ্চয়ে ৫০ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমতে পারে। যার অর্থ, ডাকঘরে মাসিক আয় প্রকল্পে এখন ৮.৪% হারে সুদ মিললেও, তা নামতে পারে ৭.৬৫ থেকে ৭.৯০ শতাংশে। সে ক্ষেত্রে পিপিএফ, স্বল্প মেয়াদি জমা, বয়স্ক নাগরিকদের সঞ্চয় প্রকল্প, ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্ট, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মতো যাবতীয় সঞ্চয় প্রকল্পেই আয় কমবে সাধারণ মানুষের। বিষয়টি স্পষ্ট করে কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব শক্তিকান্ত দাস বলেন, ‘‘সরকার স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার পর্যালোচনা করবে।’’

Advertisement

কেন ডাকঘরে সঞ্চয়ে সুদ কমবে? রেপো রেট কমার সুবিধা দিতে ব্যাঙ্কগুলিকেও শিল্পের জন্য বা গাড়ি-বাড়ি কেনার ঋণে সুদ কমাতে হবে। ফলে কমবে তাদের আয়। কিন্তু যতক্ষণ না জমায় সুদ কমছে, ততক্ষণ তাদের আমানত সংগ্রহের খরচ কমবে না। সে ক্ষেত্রে ঋণেও সুদ কমানো সম্ভব হবে না। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কগুলির অভিযোগ, ডাকঘরে এত বেশি হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে যে, শুধু তারা সুদ কমালে ডাকঘরেই জমা বাড়বে। আর ব্যাঙ্কে জমা কমলে, তারা ঋণই বা দেবে কোথা থেকে! ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তথা দেনা ব্যাঙ্ক-প্রধান অশ্বিনী কুমারের যুক্তি, স্বল্প সঞ্চয়ে বেশি সুদই ঋণে সুদের হার কমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আজ সরকারের তরফে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমানোর বার্তা দেওয়া হয়। জেটলি অবশ্য দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চাননি। কিন্তু তাঁর মন্ত্রক সূত্রের খবর, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ব্যাঙ্কের বদলে বেশির ভাগ সঞ্চয় বাড়তি সুদে ডাকঘরে জমা পড়লে যেমন ব্যাঙ্কগুলির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই কেন্দ্রের ঘাড়েও সুদের বোঝা বাড়বে। সেই চিন্তাও রয়েছে জেটলির।

পিপিএফ-এ গত অর্থবর্ষে ৮.৭% সুদ মিলেছিল। ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে মেলে ৮.৪%। ২-৫ বছরের জমাতেও ৮.২ থেকে ৮.৪% হারে সুদ মেলে। প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ ৯.৩%। কোনও ব্যাঙ্কেই স্বল্প মেয়াদে টাকা জমা রেখে এত সুদ মেলে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, গরিব মানুষ, বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক, যাঁদের পেনশন নেই, তাঁরা ডাকঘর প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের কী হবে? মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

ব্যাঙ্ক, ডাকঘর-সব দিকেই সুদের হার কমে গেলে সঞ্চয়ের পরিমাণই কমে যাবে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়েছে সরকারের। কারণ ২০০৮-এ মন্দা শুরু ও মূল্যবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির পর থেকেই দেশে সঞ্চয় কমেছে। কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের কর্ণধার উদয় কোটাকের যুক্তি, ‘‘আসলে সঞ্চয়ে সুদ ৮%-এর কম হলেই একটা মানসিক বাধা তৈরি হয়। বোঝাতে হবে, মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট কমেছে। তবেই ব্যাঙ্কে সঞ্চয়ের অর্থ জমা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন