দোলে চিনের কাছে হেরে গিয়েছিল ভারত। দীপাবলিতে সেই হারের বদলা নিতে প্রস্তুত তারা। যুদ্ধে জেতার হাতিয়ার আতসবাজি।
দেশের ২৫০০ কোটি টাকার বাজিশিল্প এ বার লাভের আশায় দিন গুনছে। দীপাবলির রোশনাই কমপক্ষে ১০% বেশি ব্যবসা এনে দেবে বলে দাবি শিল্পমহলের। গত বছর তলানিতে ঠেকা ব্যবসার ঘুরে দাঁড়ানোর মূলে রয়েছে এ দেশে কার্যত চিনা বাজি বিক্রির উপর সরকারি বিধিনিষেধ। যা ভারতীয় শিল্পের পায়ের নীচের জমিটাই কেড়ে নিয়েছিল গত বছর। বাজিশিল্পের দাবি, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স কেন্দ্র কাউকে দেয়নি। অথচ বছরে ১,০০০ কোটির উপর চিনা বাজি বেআইনি ভাবে দেশে ঢোকে বলে তাদের অভিযোগ।
এ বার হোলিতে চিনের কারণেই বাজার হারিয়েছে দেশীয় রং ও পিচকিরি প্রস্তুতকারকরা। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের দাবি, তাদের ৭৫% ব্যবসা হারাতে হয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী চিনা রঙবাহারি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেননি।
তবে ভাগ্য এ বার বাজিশিল্পের সহায়। শুধু সরকারি নিষেধাজ্ঞাই নয়। চিনা বাজির ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়েও সচেতনতা বাড়ছে। উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়াও। হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে সতর্কতা। তার জেরে চিনা বাজিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহারের খবর আমজনতার নাগালে। স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, এ নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কমছে চিনা বাজির চাহিদাও। ক্রেতার মনোভাব আগাম বুঝে চিনা বাজি মজুত করছেন না বিক্রেতারা।
তবে এ বছর কম প্রতিযোগিতার মুখে পড়লেও দাম বাড়াচ্ছেন না স্থানীয় প্রস্তুকারকরা। ভারতে বাজি তৈরির প্রাণকেন্দ্র তামিলনাড়ুর শিবকাশী। তামিলনাড়ু বাজি প্রস্তুতকারক সংগঠনের কর্তা পিসিএ আসাইথাম্বির দাবি, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহণ খরচ। কিন্তু ঘুরপথে ঢোকা চিনা বাজির বাজার ঠেকাতে দাম বাড়াতে নারাজ তাঁরা।
আর এই পট পরিবর্তনের সম্ভাবনায় স্বস্তিতে ভারতে বাজিশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫ লক্ষ পরিবার। গত বছর এই শিল্পের ছবিটা ছিল নেহাতই মলিন। খারাপ বর্ষা, আর্থিক মন্দা ও চিনা বাজির ত্র্যহস্পর্শে ব্যবসা তলানিতে ঠেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, গত বছর কম বরাত পাওয়ায় শিবকাশীর ১০০টি কারখানা বিক্রি হয়ে যেতে বসেছিল।
বস্তুত, দামে এই বৈষম্য তৈরি করে দেয় বাজি তৈরির কাঁচামালের দর। বিশেষজ্ঞরা জানান, চিনা বাজিতে পটাশিয়াম ক্লোরেট ব্যবহার হয়, যার কেজি প্রতি দাম ২৫ টাকা। এই উপাদান ভারতে ব্যবহার করা যায় না, ব্যবহার করা হয় পটাশিয়াম নাইট্রেট ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, যেগুলির দাম যথাক্রমে কেজি প্রতি ৭০ ও ২৫০ টাকা। সব মিলিয়ে মান বজায় রেখে চিনের তুলনায় ভারতে বাজি তৈরিতে ৪০% বেশি খরচ হয়।
রঙের ক্ষেত্রেও রয়েছে একই সমস্যা। অ্যাসোচ্যামের দাবি, স্থানীয় রং ও চিনে রং তৈরির খরচের মধ্যে ফারাক ৫৫%। এই কম দামের জোরেই বাজার দখল করেছে চিনা রং, পিচকিরি ও হোলিতে ব্যবহৃত খেলনা। এগুলি থেকে রাসায়নিক বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে হোলির আগে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু সচেতনতার অভাবে ক্রেতারা সেই বাছবিচার না-করেই কম দামের টানে নিম্নমানের জিনিস কেনেন।