বাজেটের আগে ক্রমশ তেজী হচ্ছে ভারতের শেয়ার বাজার। এবং অঙ্কের হিসাবে সূচক ফিরে এসেছে নোট কাণ্ডের আগের অবস্থায়। আগের দিন ২৫৮ পয়েন্ট বাড়ার পরে বুধবারও ৩৩২.৫৬ উঠল সেনসেক্স। দাঁড়াল ২৭,৭০৮.১৪ অঙ্কে। গত তিন মাসে তা এত উঁচুতে ওঠেনি। নিফ্টি ১২৬.৯৫ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হয় ৮,৬০২.৭৫ অঙ্কে। বিশ্ব বাজারও এ দিন চাঙ্গাই ছিল। এশিয়া ও ইউরোপের বাজার উঠেছে। খোলার পনের মিনিটের মধ্যে মার্কিন বাজারেও ডাও জোন্স পেরিয়ে গিয়েছে ২০ হাজারের মাইলফলক। ওয়াল স্ট্রিট সূত্রের খবর, ট্রাম্পের নীতি অর্থনীতির চাকায় গতি আনবে, সেই আশাতেই শেয়ার কিনতে ভিড় করেন লগ্নিকারীরা।
টাকার দামও ডলারে ৮ পয়সা বেড়েছে। ডলার হয়েছে ৬৮.০৭ টাকা।
এ দিকে বিএসই-র নতুন শেয়ার ইস্যু নিয়ে লগ্নিকারীদের আগ্রহ যে তুঙ্গে, তার প্রমাণ মিলেছে এ দিন। ইস্যু বন্ধের পরে দেখা গিয়েছে, তাদের শেয়ার কেনার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ৫১ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে। বাজারে শেয়ার ছেড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জটির ১,২৪৩ কোটি তোলার পরিকল্পনা। বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ এনএসই-ও বাজারে প্রথম শেয়ার ছাড়ার জন্য আবেদন করেছে।
বাজারের দিশা
• বিএসই শেয়ারে বাড়তি আবেদন ৫১ গুণ
• সেনসেক্স নোট-কাণ্ডের
আগের জায়গায়
• ২০ হাজারের মাইলফলক পেরোল মার্কিন সূচক ডাও জোন্স
বিএসই-র পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত খনন সংস্থা ম্যাঙ্গানিজ ওর ইন্ডিয়া লিমিটেড বা এমওআইএল-এর শেয়ার কেনার জন্যও প্রয়োজনের তুলনায় ৫ গুণ বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ওই সংস্থার ১০% শেয়ার বিলগ্নিকরণ খাতে ৪৮০ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে কেন্দ্র।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের শেয়ার বাজার চাঙ্গা করায় ইন্ধন জুগিয়েছে বিএসই ও এমওআইএলের শেয়ার বিক্রি। বাদবাকি কারণগুলি হল:
•বাজেট নিয়ে আশার ফানুস ফুলতে থাকা। নোট-কাণ্ডের জেরে আর্থিক ব্যবস্থার যে-ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে জনমানসে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া কাটাতে কেন্দ্র এই বাজেটকেই হাতিয়ার করবে বলে ধারণা শেয়ার বাজার মহলের। যা আরও গাঢ় হয়েছে পাঁচ রাজ্যে ভোট এসে পড়ায়। লগ্নিকারীদের ধারণা, ভোট বৈতরণী পেরোতে প্রধানমন্ত্রী বাজেটকে যতটা সম্ভব জনমোহিনী করে তুলতে বলবেন অর্থমন্ত্রীকে। আশা, আয়কর ছাড়-সহ চটকদার প্রস্তাবে সেজে উঠবে বাজেট।
• গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বেশ কিছু সংস্থার ভাল আর্থিক ফলাফল প্রকাশ। যার ফলে নোট বাতিলের জন্য দেশের অর্থনীতির ক্ষতি কতটা, তা নিয়ে বহু লগ্নিকারীর মনে ধন্দ দেখা দিয়েছে। যা শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করার রসদ জুগিয়েছে।
• আগাম লেনদেনে হস্তান্তর করার জন্য শেয়ার কেনার বহর বৃদ্ধি। বুধবার ছিল আগাম লেনদেনের সেট্লমেন্ট। যে -সব লগ্নিকারী হাতে শেয়ার না-থাকা সত্ত্বেও তা বেচে রেখেছিলেন, তাঁরা হস্তান্তরের জন্য শেয়ার কিনতে নামেন। আজ প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বন্ধ থাকছে শেয়ার বাজার। তাই বৃহস্পতিবার সেট্লমেন্টের নির্ধারিত দিন হলেও তা একদিন এগিয়ে আনা হয়।
শেয়ার বাজার মহলে এক শ্রেণির লগ্নিকারীর মনে অবশ্য বাজেট নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। যেমন, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিকের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী যে শেয়ার লেনদেন থেকে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর পক্ষে, তা তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকেই বোঝা গিয়েছে। যদিও অবস্থা সামাল দিতে জেটলি জানিয়েছেন, দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর ছাড়ের সুবিধা যেমন আছে, তেমনই থাকবে। তবে কৌশিকের ধারণা, শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদি ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স আদায় ব্যবস্থার পরিবর্তন না-করা হলেও স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভকরের যে-বিশেষ হার রয়েছে, তা যে কাট-ছাঁট করা হবে না, এমনটা জোর দিয়ে বলা মুশকিল।
রয়েছে ডিভিডেন্ডে কর ছাড়ের বিষয়টিও। একটা সময়ে ডিভিডেন্ড বাবদ আয়ে কোনও করই ছিল না। বিজেপি সরকারে আসার পরে গত বাজেটে ১০ লক্ষ টাকার বেশি ডিভিডেন্ড আয়ের উপর ১০% হারে কর বসিয়েছে। এ বার তা বাড়ানো না-হলেও করছাড়ের জন্য ডিভিডেন্ড আয়ের ঊর্ধ্বসীমা যে কমানো হবে না, তা হলফ করে বলা যায় না।
তবে বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি যে বাজেটের উপর নির্ভর করছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই একমত। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের এমডি অজিত খান্ডেলওযাল বলেন, ‘‘সম্প্রতি সূচকের চাঙ্গা হওয়াকে প্রাক্-বাজেট দৌড় বলে ব্যাখ্যা করা যায়। দৌড় লম্বা হবে কি না, তা বোঝা যাবে বাজেট প্রস্তাবগুলি দেখার পরে।’’