দিনভর দুরুদুরু বুকে অপেক্ষার পর অবশেষে খানিকটা স্বস্তির হাওয়া শিল্পমহলে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়ে দিল, গত অগস্টে শিল্প বৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় পৌঁছে গিয়েছে ৬.৪ শতাংশে। যা গত তিন বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। এর আগে শেষ বার ২০১২ সালের অক্টোবরে শিল্পোৎপাদনের হার বেড়েছিল ৮.৪%। তার পর এতটা বাড়ল এই এ বার। যা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন শিল্প কর্তারা।
তবে পুরো চিন্তা মুক্ত থাকতে পারল না অর্থনীতি। কারণ, এ দিনই সরকারের আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অগস্টের রেকর্ড তলানি থেকে সামান্য হলেও ফের কিছুটা উঠেছে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি। সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছে ৪.৪১%। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া স্বস্তি-সীমার নীচেই রয়েছে হার। তবুও আগামী দিনে তা আরও বাড়বে কি না, সেটাই ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশকে। তার উপর এই হার বেড়েছে মূলত খাদ্যপণ্য, পানীয় ও ডালের দাম বাড়ার কারণেই। ফলে, এর জের সাধারণ মানুষ পদে পদে টের পাবেন, মনে করছে তারা।
এ দিনের পরিসংখ্যান বলছে, অগস্টের শিল্পোৎপাদন বেড়েছে প্রধানত দেশের কলকারখানায় উৎপাদন এবং মূলধনী পণ্য তৈরি বেশি হওয়ার দৌলতেই। এ দু’টি বেড়েছে যথাক্রমে ৬.৯% এবং ২১.৮% হারে। প্রসঙ্গত, এই দু’টি ক্ষেত্র বাড়তে থাকে তখনই, যখন বাড়তে থাকা চাহিদা মেনে জোগান নিশ্চিত করার জন্য দেশে শিল্প সংক্রান্ত কাজকর্ম বেশি হতে থাকে। অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার জন্য যেটা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শর্ত। আগের বছরের একই সময় শিল্প বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ০.৫%। সে বার কলকারখানায় উৎপাদন এবং মূলধনী পণ্য, দু’টি ক্ষেত্রেই উৎপাদন বাড়ার বদলে সরাসরি কমে গিয়েছিল। এ বছরের অগস্টে খনন ক্ষেত্রকেও ৩.৮% হারে বাড়তে দেখা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন এ দিন বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতির পক্ষে উৎসাহজনক খবর। শিল্পোৎপাদন বেড়েছে। পরোক্ষ কর আদায় ভাল হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির হারও কমই আছে।’’
এ দিকে, অগস্টে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ৩.৭৪% থাকার পর, সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৪.৪১ শতাংশে। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের ইঙ্গিত ছিল, দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি ভাল না-হওয়ায় বাড়তে পারে খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে ২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে ফের মাথা তুলতে পারে মূল্যবৃদ্ধি।
অবশ্য এখনই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির এই হারকে অতটাও গুরুত্ব দিতে নারাজ শিল্পমহলের বেশির ভাগ অংশ। বরং তাদের যুক্তি, যতক্ষণ তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের করা ৫.৮% (২০১৬-র জানুয়ারির মধ্যে) পূর্বাভাসের নীচে আছে, ততক্ষণ নিশ্চিন্ত না-থাকার কারণ নেই। বরং বিভিন্ন শিল্প কর্তাদের বক্তব্য, শেষমেশ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের চেষ্টা ফল দিতে শুরু করেছে। এ বার এই গতি ধরে রাখার প্রক্রিয়া জারি রাখতে হবে। তবেই পুরোপুরি চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি।