প্যাঁচালো: জিলিপিতে জিএসটি। মালদহে রথের মেলায়। চালু হল নতুন কর ব্যবস্থা। কিন্তু তার প্যাঁচ নিয়েই চিন্তিত শিল্পমহল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শুক্রবার মাঝরাত থেকে চালু পণ্য-পরিষেবা করকে (জিএসটি) সার্বিক ভাবে স্বাগত জানাচ্ছে শিল্পমহলের একাংশ। তবে তা রূপায়ণের পদ্ধতিগত সমস্যার কাঁটা যে ব্যবসাকে বিঁধবে, সেটাও বিলক্ষণ বুঝছে তারা। যে কারণে ছোট-মাঝারি শিল্পের আশঙ্কা, সেই জটে জড়িয়ে শনিবার থেকেই হোঁচট খেতে পারে বহু সংস্থা।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কেন্দ্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব থেকেই জিএসটি-র ইন্সপেক্টরদের হাতে গ্রেফতারের বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিরোধিতা করলে যে ভাবে ‘টার্গেট’ করা হয়, আমার আশঙ্কা শিল্পপতিরা কোনও নীতির বিপক্ষে গেলেও গ্রেফতারের ওই ধারা ব্যবহার করা হবে।’’
জিএসটি-কে এক রাষ্ট্র, এক কর, এক বাজারের তকমা দিয়েছে কেন্দ্র। আগের কর-কাঠামো থেকে নতুন ব্যবস্থায় পা রাখতে নেটে ‘প্রভিশনাল আইডি’ নিতে হয়েছে সংস্থাগুলিকে। বলা হয়েছে, বছরে ১.৫ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে যারা, তাদের সমস্ত লেনদেনের ‘ইনভয়েস’-এ প্রতিটি পণ্যের ‘এইচএস কোড’ থাকতে হবে। কিন্তু এমসিসি চেম্বারের অন্যতম কর্তা সঞ্জীব কোঠারির অভিযোগ, একে তো পদ্ধতিগত সমস্যায় অনেকেই নথিবদ্ধ হওয়ার ওই আইডি পায়নি। ফলে শনিবার থেকে তারা কী ভাবে কেনা-বেচা করবে, স্পষ্ট নয়। তার উপর, অনেক পণ্যেরই এইচএস কোড জিএসটি তালিকায় নেই। তিনি বলেন, এমনকী সংস্থাগুলির পুরনো পণ্যের (স্টক) ভ্যাট বা কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্কের হিসেব দিতে প্রয়োজনীয় ‘ট্রান্স১ ফর্ম’-ও এ দিন পর্যন্ত মেলেনি।
আরও পড়ুন: কমেছে ভারতীয়দের গচ্ছিত টাকা, রিপোর্ট সুইস ব্যাঙ্কের
নেট-ভিত্তিক হওয়াও জিএসটি রূপায়ণের পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন একাংশ। ছোট শিল্পের সংগঠন ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য এবং ফ্যাকসি-র প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহর বক্তব্য, ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি অনলাইনে হিসেব রাখায় সড়গড় নয়। ফলে সমস্যা হবে তাঁদের। হিতাংশুবাবু বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে জানতে পারি রোজকার হিসেব রোজই নথিভুক্ত করতে হবে। অথচ আমাদের ধারণা ছিল, রিটার্নের সময় একসঙ্গে তা দিলেই চলবে।’’
জিএসটি-তে নথিভুক্ত নয়, এমন একেবারে ছোট ও ক্ষুদ্র সংস্থার হাল নিয়েও সংশয় রয়েছে। বহু বড় সংস্থা তাদের দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেয়। হাওড়ার এমন অনেকে পড়েছে উভয়সঙ্কটে, জানাচ্ছেন কর উপদেষ্টা অভিজিৎ চক্রবর্তী। এক দিকে, জিএসটি-তে নথিভুক্ত হয়ে ব্যবসা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। আবার সেটা না-করলে রয়েছে বড় সংস্থার বরাত হারানোর আশঙ্কা।
যদিও ক্লাবকার্ট ডট ইন-এর এমডি তরুণ মল্লিকের দাবি, অনেকেরই কোনও সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘১৭ বছর ধরে চর্চার পরে জিএসটি চালু হচ্ছে। এতে ব্যবসার সুবিধা হবে। ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বা ফোন বিলের পরিষেবা করের টাকা এত দিন পেতাম না। এ বার ফেরত পাব। ফলে খরচ কমবে। ক’দিন পর থেকেই আর অভিযোগ জানাবেন না কেউ।’’