বাজারের নজর এখন নির্বাচনেই আটকে। লোকসভা ভোটে জিতে কে দিল্লির তখ্তে বসতে পারে, তাই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই লগ্নিকারীদের মধ্যে। চলছে ভাল-মন্দের হিসেব কষাও। তার আগে ‘সেমি-ফাইনাল’ হিসেবে রয়েছে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ফল। তাই টাকায় ডলার ও পেট্রল-ডিজেলের দাম কমা, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামে পতন, বাণিজ্যিক গাড়ির ভাল ব্যবসা— অর্থনীতির এত সব সুখবরেও অস্থিরতা কাটছে না সূচকের। মনে হচ্ছে ভোটের কারণে এখনই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পুরোপুরি কাটবে না লগ্নিকারীদের। ফলে বাজারের এমন ওঠানামাও চলতেই থাকবে।
প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনের বছরে পেশ হয় না পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী ফেব্রুয়ারির গোড়ায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্ভবত পেশ করবেন ‘ভোট অন অ্যাকাউন্টস’। তবে এই বাজেটে যে কর সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব থাকবে না, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না।
অতীতে এ রকম পরিস্থিতিতে ছোটখাটো কর প্রস্তাব দেওয়ার নজির আছে। জিএসটি চালু হওয়ায় এমনিতেই আমজনতার কাছে বাজেটের গুরুত্ব খানিকটা কমেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট অন অ্যাকাউন্টস নিয়ে তাঁদের বা বাজারের তেমন কোনও মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তবে নির্বাচন যত এগোবে, ততই আন্দোলিত হবে শেয়ার সূচক।
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জাতীয় উৎপাদন বেশ ভাল রকম বেড়ে থাকবে, এমন মত সংশ্লিষ্ট অনেকেরই। বিভিন্ন মূল্যায়ন বহুজাতিক, ব্যাঙ্ক এবং বিশ্লেষক সংস্থার অনুমান, ওই সময় তা বেড়ে থাকতে পারে ৭.২ থেকে ৭.৯ শতাংশ হারে।
একই সময় চিনের জাতীয় উৎপাদন বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ হারে। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল ও কেয়ারের ইঙ্গিত, ভারতে তা হতে পারে ৭.৫ শতাংশ হারে। আইসিআইসিআই এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মতে, বৃদ্ধির হার ছুঁতে পারে যথাক্রমে ৭.৬ এবং ৭.৪ শতাংশ। প্রকৃত হার যা-ই হোক, নানা সমস্যা সত্ত্বেও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি ভালই এগিয়েছে বলতে হবে।
সূচকের উত্থান-পতনে শেয়ারে লগ্নিকারীরা যখন বেশ চিন্তিত, তখন অনেকটাই চিন্তামুক্ত হয়েছেন সুদনির্ভর অসংখ্য মানুষ। গত এক বছরে শেয়ারের দর যখন গড়ে কমবেশি ১০ শতাংশ পড়েছে, তখন জমার উপর সুদ কিন্তু বেড়েছে ১ থেকে ১.৫ শতাংশ বিন্দু। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কয়েক বার সুদ বাড়িয়েছে মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে। শিল্প অবশ্য এতে খুশি হয়নি। বরং এতে তাদের খরচ বাড়বে ও লগ্নি মার খাবে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বার বার। কিন্তু স্বস্তি পেয়েছেন প্রবীণরা। যাঁরা এখন বিভিন্ন প্রকল্পে সুদ পেতে পারেন ৮ থেকে ৯ শতাংশ হারে।
বাজার এখন
সেনসেক্স ৩৪,৯৮১.০২
নিফ্টি ১০,৫২৬.৭৫
রুপোলি রেখা
টাকায় ডলারের দাম কমে ৭০.৬৯ টাকা
লিটারে পেট্রল নেমে ৭৬.৪৭ টাকা
সোনা ২২ ক্যারাট (১০ গ্রাম) কিছুটা কমে ২৯,৫৪৫
টাকা
বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) ৩৭.৮২ %
জাতীয় উৎপাদনের সম্ভাব্য বৃদ্ধি (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭.২% -৭.৯ %
এখনও মেঘ
চিন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ
অনিয়মিত বর্ষা
মার্কিন মুলুকে সুদ বৃদ্ধি
ভোট ঘিরে লগ্নিকারীদের সংশয়
সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বাজারে আসছে সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির রিটেল বন্ড। ৩, ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি এই বন্ডের সুদ হতে পারে ৮.৫ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। এই ভাবে হাইওয়ে নির্মাণকারী সংস্থা বাজার থেকে তুলতে চায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বন্ডের রেটিং ‘AAA’ হওয়ার সম্ভাবনা। সুদ হবে করযোগ্য।
এ ছাড়া কিছু দিনের মধ্যে বাজারে আসছে নতুন সিপিএসই (কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা) ইটিএফ প্রকল্প। এর আগে এই ধরনের তিনটি প্রকল্প বাজারে ছাড়া হয়েছে রিলায়্যান্স নিপুণ লাইফের মাধ্যমে। সিপিএসই সূচকে আছে ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার। এই সব শেয়ারেই লগ্নি করা হবে নতুন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের টাকা। ইস্যুটির প্রাথমিক আকার হতে পারে ৮,০০০ কোটি টাকা। বাড়তি আবেদন মিললে তা বাড়তে পারে ১৪,০০০ কোটি পর্যন্ত। এই ধরনের প্রথম ইটিএফ বাজারে ছাড়া হয়েছিল ২০১৪ সালের মার্চে। পরের দুটি যথাক্রমে ২০১৭-র জানুয়ারি ও মার্চে।
তেল, ডলারের দাম নামলেও গত সপ্তাহের শেষ কিছু দিন সূচক দুর্বল ছিল। টাকায় ডলারের যে দাম ছাড়িয়েছিল ৭৪ টাকা, তা নেমেছে ৭০.৬৯ টাকায়। পেট্রলও কমে হয়েছে লিটারে ৭৬.৪৭ টাকা। ১০ গ্রাম খাঁটি সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম নেমেছে ৩১,১৪০ টাকায়। হলমার্ক গয়নার সোনা ২৯,৯৯০ টাকা। তেল, ডলার নামায় কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছে সরকারের কোষাগার। কয়েক সপ্তাহ পরে আবার বেড়েছে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। ১৬ নভেম্বরে শেষ হওয়া সপ্তাহে ৫৬.৮৯ কোটি ডলার বেড়ে পৌঁছেছে ৩৯,৩৫৮ কোটি ডলারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)