নজরে কেন্দ্র-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বন্দ্ব, ভোট

শেয়ার কেনা ভাল প্রতিটি পতনেই

ভাল মন্দ মিলিয়ে কাটল আরও একটি অস্থির সপ্তাহ। সপ্তাহ শেষে পরিস্থিতির বিচারে সেনসেক্সের অবস্থান (৩৫,৪৫৭) খুব খারাপ বলা যাবে না।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share:

ভাল মন্দ মিলিয়ে কাটল আরও একটি অস্থির সপ্তাহ। সপ্তাহ শেষে পরিস্থিতির বিচারে সেনসেক্সের অবস্থান (৩৫,৪৫৭) খুব খারাপ বলা যাবে না। ডলারের দাম নেমেছে ৭২ টাকার নীচে। লিটারে ৭৯ টাকার নীচে নেমেছে পেট্রলের দামও। সোমবার সেই দাম আরও কমে হয়েছে ৭৮.৪৭ টাকা। আর একটি ভাল খবর হল খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারে পতন। অক্টোবরে এই হার হয়েছে ৩.৩১%। যা গত ১৩ মাসে সবচেয়ে কম। এটা হয়েছে জ্বালানির দর ৮.৫৫% বাড়া সত্ত্বেও। দাম কমেছে আনাজ এবং খাদ্যপণ্যের।

Advertisement

অন্য দিকে, সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার তেমন আশাপ্রদ নয়। গত মাসে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৪.৫% হারে। জুন এবং জুলাই মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬.৯ এবং ৬.৫%। অক্টোবরে রফতানি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতিও। গত মাসে রফতানি বেড়েছে ১৭.৮৬% হারে। অন্য দিকে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে স্পর্শ করেছে ১,৪৬১ কোটি ডলার। আর একটি ভাল খবর হল, বিদেশি লগ্নিকারীদের বাজারে প্রত্যাবর্তন। এই সব কারণে সেনসেক্স থেকে গিয়েছে ৩৫ হাজারের উপরে।

আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। সংশ্লিষ্ট সবাই মুখিয়ে আছেন সরকার এবং আরবিআইয়ের মধ্যে বিরোধ কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর লক্ষ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদ জমার অনুপাত অর্থাৎ সিআরআর ১% পর্যন্ত কমাতে পারে। ১% কমার অর্থ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের জোগান ১.২ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে আমানতের যে অনুপাত অর্থ জমা রাখতে হয়, তা-ই হল নগদ জমার অনুপাত। এই জমার উপর ব্যাঙ্কগুলি কোনও সুদ পায় না। সরকার অবশ্য চাইছে, আরবিআই ব্যাঙ্কগুলির ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও কমাক। শীর্ষ ব্যাঙ্কের পর্ষদের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, তার একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে শেয়ার বাজারে, বিশেষ করে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে।

Advertisement

গত সপ্তাহে শেষ হল দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ষান্মাসিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের মরসুম। এই তিন মাসে মোটের উপর বহু কোম্পানির বিক্রি বাড়লেও, লাভ সেই অনুপাতে বাড়েনি। উন্নত ফলাফল প্রকাশ করেছে টাটা স্টিল। কোম্পানির বিক্রি ১০,৮২৩ কোটি টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ৪৩,৪৯৮ কোটি টাকায়। তিন মাসে নিট লাভ ১,০১৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩,১১৬ কোটি টাকা।

কয়েকটি সরকারি ব্যাঙ্ক অবশ্য খারাপ খবরই প্রকাশ করেছে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের লোকসান পৌঁছেছে ১,৮২২ কোটি টাকায়। ইউকো-র লোকসান ১,১৩৬ কোটি টাকা। খুব পিছিয়ে নেই ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-ও। সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত তিন মাসে এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১,১৫৬ কোটি টাকা। পরপর অষ্টম ত্রৈমাসিক ফলে লাভের মুখ দেখেনি আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। আগের তিন মাসে ব্যাঙ্কের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩,০৬২ কোটি টাকা।

অন্য দিকে কোল ইন্ডিয়ার নিট মুনাফা ৩৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ৩,০৮৫ কোটিতে। জেট এয়ারওয়েজের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১,২৯৭ কোটি। তবে টাটা গোষ্ঠী সংস্থাটি কিনতে আগ্রহী, এই খবরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে জেট শেয়ার। টাটা স্টিল উষা মার্টিনের ১৯.৫% শেয়ার কেনার ব্যাপারেও উৎসাহী হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ফলাফল প্রকাশের মরসুম সমাপ্ত হওয়ার পরে এখন সময় ভাল শেয়ার বাছার এবং প্রতিটি পতনে তা একটু একটু করে কেনার। ভোট পর্যন্ত বাজার অস্থির থাকবে ঠিকই। তবে আশা, চলতি অর্থবর্ষে অর্থনীতি খুব খারাপ করবে না। একটু বড় মেয়াদে সূচক আরও এগোতে পারে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন