বৃহস্পতিবার এক ঝটকায় সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ৩৫৬ পয়েন্ট। যে পতন প্রায় চার মাসের সব থেকে বেশি। কারণ ছিল, চিন-মার্কিন হুমকি-পাল্টা হুমকির আঁচে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা আরও জোরালো হওয়া। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানো। বেশ খানিকটা পড়ে যায় নিফ্টিও। তবে সেই ঝড় স্থায়ী হয়নি। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই পতনকে ছাপিয়ে যায় শুক্রবারের উত্থান। সেনসেক্স ও নিফ্টি বাড়ে যথাক্রমে ৩৯১ ও ১১৬ পয়েন্ট। কিছুটা নেমে আসা উঁচু বাজারে সে দিন চুটিয়ে শেয়ার কেনেন লগ্নিকারীরা।
তবে বাজার যে শক্তি ফিরে পাচ্ছে, তা শুধু এই উত্থানেই স্পষ্ট হয়নি। এই দফায় বড় মাপের (লার্জ ক্যাপ) সংস্থাগুলির শেয়ারের পাশাপাশি বেড়েছে মাঝারি (মিড ক্যাপ) ও ছোট (স্মল ক্যাপ) সংস্থাগুলির শেয়ারও। শুক্রবার বিএসই-তে যখন ১,৭৬৮টি শেয়ারের দাম বেড়েছে, তখন পড়েছে ৯৩৭টির। নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি। নথিবদ্ধ সব সংস্থার শেয়ারের মোট মূলধন বেড়ে পেরিয়ে গিয়েছে ১৫৪ লক্ষ কোটি টাকা। বাজার শক্তি ফিরে পাওয়ায় জমি আরও পোক্ত হয়েছে অনেক ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের (শেয়ার ভিত্তিক)। বন্ড বাজারও আগের তুলনায় কিছুটা ভাল।
যা ভাবা হয়েছিল, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই গত বুধবার রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কারণ, সাম্প্রতিক কালে মাথা তোলা মূল্যবৃদ্ধির হারে রাশ টানা। তাই শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘোষণার আগে থেকেই সুদ বাড়াতে শুরু করেছিল কয়েকটি ব্যাঙ্ক। আর শীর্ষ ব্যাঙ্ক তার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ২০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটে গৃহঋণ সংস্থা এইচডিএফসি। তার আগে জমায় সুদ বাড়িয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক। আগামী দিনে জমা ও ঋণে সুদ বাড়াতে দেখা যাবে অন্যান্য ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাকেও।
তবে ঋণে সুদ বৃদ্ধি শিল্প ও বন্ডের জন্য শুভ নয়। যে কারণে বাজার এতে চিন্তিত হয়ে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মূল্যবৃদ্ধি থাকতে পারে ৪.৮ শতাংশের আশেপাশে। যদিও ২০১৮-১৯ সালে আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার একই জায়গায় (৭.৪%) ধরে রেখেছে তারা।
তার উপর চিনা পণ্যে আমেরিকা ফের শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়ে। পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি দেয় চিনও।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ৬.৭% পরিকাঠামো বৃদ্ধি মদত জুগিয়েছে বাজারকে। যা মে মাসে ছিল ৪.৩%। কয়লা, ইস্পাত, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ, অশোধিত তেল, শোধনাগারের পণ্য ও সিমেন্ট— এই আট শিল্প এর আওতায় পড়ে। পরিকাঠামোর বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতি ঠিক দিশায় এগোচ্ছে।
প্রথম ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশ শেষ হতে আর দিন দশেক বাকি। গত সপ্তাহেও একগুচ্ছ বেরিয়েছে। এর মধ্যে টাটা মোটরসের নিট লাভ ৩,১৯৯ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ২,১৭৫ কোটি। রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসির নিট লাভ বেড়েছে ৫৮%, পৌঁছেছে ৬,১৪৪ কোটিতে। আগের বছরের প্রথম তিন মাসে ৮০১ কোটি লোকসান গুনেছিল স্টিল অথরিটি। এ বার ৫৪০ কোটি টাকার নিট মুনাফা হয়েছে তাদের। ২৬৪ কোটি থেকে বেড়ে ডাবর ইন্ডিয়ার লাভ ছুঁয়েছে ৩২৯ কোটি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিওরেন্সের নিট লাভ ৪৯৯ কোটি থেকে উঠে এসেছে ৬৩৫ কোটি টাকায়। আর এক সাধারণ বিমা সংস্থা জিআইসি-র নিট মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৭৭১ কোটি টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের নিট লাভ ১,৩০৬ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৭০১ কোটি।
বাজারে মোট শেয়ার মূলধনের (মার্কেট ক্যাপ) নিরিখে দেশের বৃহত্তম সংস্থার তকমা পাওয়া নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে টিসিএস এবং রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে। বেশ কিছু দিন স্থানটি ধরে রেখেছিল তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। শেয়ারের দাম আচমকা অনেকটা বেড়ে ওঠায় গত সপ্তাহে রিলায়্যান্স উঠে আসে এক নম্বরে। বাজারে দুটি সংস্থার মোট শেয়ার মূলধনই এখন ৭ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। এ দিকে, প্রথম শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে (আইপিও) বড় মাপের সাফল্যের পরে আজ বাজারে নথিবদ্ধ হবে এইচডিএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের শেয়ার।
(মতামত ব্যক্তিগত)