বিশ্ব পরিস্থিতির কালো ছায়া বাজারে

দেশের ভিতরে অর্থনীতি যখন নানা দিক থেকে আশা জাগাচ্ছে, তখন বিশ্বের কিছু ঘটনা কালো ছায়া ফেলেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। ফলে উপরে ওঠার বদলে বেশ খানিকটা সঙ্কুচিত হয়েছে ভারতের প্রধান দুই শেয়ার সূচক। গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে সেনসেক্স পড়েছে ৫৭৯ পয়েন্ট বা ২.২৩ শতাংশ। নেমে এসেছে ২৫,৩২৯ অঙ্কে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৭
Share:

দেশের ভিতরে অর্থনীতি যখন নানা দিক থেকে আশা জাগাচ্ছে, তখন বিশ্বের কিছু ঘটনা কালো ছায়া ফেলেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। ফলে উপরে ওঠার বদলে বেশ খানিকটা সঙ্কুচিত হয়েছে ভারতের প্রধান দুই শেয়ার সূচক। গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে সেনসেক্স পড়েছে ৫৭৯ পয়েন্ট বা ২.২৩ শতাংশ। নেমে এসেছে ২৫,৩২৯ অঙ্কে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন ঘটনা ভারতীয় শেয়ার সূচকের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে।

Advertisement

• ইরাকে কয়েকটি ঘাঁটিতে মার্কিন হানার সিদ্ধান্ত। আশঙ্কা, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। ফলে শঙ্কিত লগ্নিকারীরা।

• রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি। পশ্চিমী দুনিয়া থেকে রাশিয়ার খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ। অন্য দিকে রাশিয়ার প্রতি আমেরিকা এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের অর্থনৈতিক অসহযোগিতা। পরিস্থিতি বিশ্ব বাণিজ্যের পরিপন্থী।

Advertisement

• ইউক্রেনকে ঘিরে যে-সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তাও ভাবাচ্ছে বিশ্ব বাজারকে।

• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ত্রাণ কমিয়ে আনার সম্ভাবনা ভাবাচ্ছে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে। এর ফলে কমে আসতে পারে ভারতে বিদেশি লগ্নির প্রবাহ।

• গাজায় ইজরায়েলের একনাগাড়ে বোমাবর্ষণ।

এই রকম এক প্রতিকূল পরিবেশে গত সপ্তাহে বাজার পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে তেল, ডলার এবং সোনার। এর ফলে ভারতের আমদানি বিল বেড়ে উঠবে অনেকটাই। বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি নেমে আসার পথও আবার সঙ্কুচিত হবে।

দেশের ভিতরে পরিস্থিতি কিন্তু অনেকটাই ভাল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:

১) গত কয়েক দিনে বর্ষার বেশ ভাল অগ্রগতি হয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টিপাতে ঘাটতি আরও কমবে। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, কৃষি সম্ভবত ততটা খারাপ করবে না। ফলে খাদ্যপণ্যের দামও হয়তো লাগামছাড়া হবে না।

২) পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার স্পর্শ করেছে ৭.৩ শতাংশ।

৩) জুলাই মাসে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্পের কাছেই এটি একটি ভাল খবর।

৪) অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জোরালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য বাড়ছে প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলির। ফলে বাড়ছে কর্মসংস্থানও।

৫) ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে ভারতের জাতীয় উৎপাদন ৫.৫ শতাংশ থেকে ৫.৭ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় জিডিপি বাড়তে পারে কম-বেশি ১ শতাংশ। বাজারের পক্ষে ভাল খবর।

৬) ভাল কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের ধারা বজায় থেকেছে গত সপ্তাহেও। যা আশা করা হয়েছিল, তার তুলনায় অনেকটাই ভাল ফল প্রকাশ করেছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। ভাল ফল উপহার দিয়েছে নেস্লে ইন্ডিয়া।

৭) সুদের হারে হাত না-দিলেও ৫ অগস্ট ঘোষিত ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। সুদ এখনই কমবে এমন আশা অনেকেই করেননি। ফলে ঋণনীতিতে আদৌ হতাশ হয়নি বাজার। বরং সূচক বেশ খানিকটা উঠেছিল ঋণনীতি ঘোষণার পরের দিন।

৮) সরকার আর্থিক সংস্কারের পথে নামায় তা স্বাগত জানাচ্ছে দেশি ও বিদেশি লগ্নিকারীরা। বিমা বিল আপাতত থমকে গেলেও অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের পথে দ্রুত এগোচ্ছে সরকার।

অর্থাৎ পরিস্থিতির তুল্যমূল্য বিচারে আশা প্রকাশ করা যায়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা শান্তি ফিরলে ভারতীয় বাজার দ্রুত শক্তি ফিরে পাবে। তত দিন পর্যন্ত একটু বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে।

দেশের সব মানুষকে, বিশেষ করে অনগ্রসর অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে কেন্দ্র এক অভিনব পরিকল্পনা হাতে নিতে চলেছে। প্রকল্পটির নাম ‘সম্পূর্ণ বিত্ত সমাবেশন’। যা জানা যাচ্ছে, স্বাধীনতা দিবসে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী সূচনা করতে পারেন প্রকল্পটির। লক্ষ্য, এক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের অধীনে ৭.৫ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা। যে-সব মূল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ১ বছর সন্তোষজনক ভাবে পরিচালিত হবে, সেখানে ৫,০০০ টাকা ঋণ (ওভারড্রাফট) দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।

এই ব্যাপারটিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবশ্য আপত্তি আছে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের মতে, ১ বছর খুবই কম সময়। এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ বেড়ে ওঠার আশঙ্কা থাকবে। এই পথে বিশেষ করে সঙ্কটে পড়তে পারে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। ১৫ অগস্ট জানা যাবে এই পরিকল্পনার বিশেষ রূপরেখা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রত্যেক পরিবারে যদি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যায়, তা হলে ভবিষ্যতে তা অনেক আর্থিক লেনদেনকেই গতি দিতে পারে। তবে ১ বা ২ বছরের মধ্যে এই কাজ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ আছে। গ্রামে ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো এমন নয় যে, এত কম সময়ে এত অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।

তবে উদ্যোগটিকে অবশ্যই স্বাগত। প্রত্যেক ঘরে ব্যাঙ্ক পৌঁছে গেলে সেখানে ভবিষ্যতে পৌঁছে যাবে অনেক আর্থিক প্যাকেজ এবং প্রকল্প। কমবে নগদে কারবার জনিত প্রতারণা। সব পরিবারের তথ্য আসবে সরকারের হাতে। আধার কার্ডের সঙ্গে যেন কিছুটা সাদৃশ্য আছে এই প্রকল্পের। দেখা যাক, জল কী ভাবে গড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন