লাইন পেট্রোল পাম্পেও। শুক্রবার নদিয়ার হাঁসখালিতে। -নিজস্ব চিত্র
টাকা মিলবে পেট্রোল পাম্পেও— বৃহস্পতিবার রাতের এই খবরে বিভ্রান্তি ছড়াল শুক্রবার সকাল থেকেই। এতে আমজনতার একাংশের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, তেমনই পাম্প মালিকদের অনেককে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। কারণ, আপাতত সারা দেশে ২,৫০০ পেট্রোল পাম্পে এই সুবিধা মিলবে বলে সরকার জানিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেগুলি যে মূলত গ্রামীণ এলাকায় (যেখানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ততটা পৌঁছয়নি), সে বিষয়টি স্পষ্ট করা ছিল না। তা ছাড়া, নগদের খোঁজে হন্যে মানুষ কিছুটা ভুলও বুঝেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, টাকা মিলবে সব পাম্পে। আর সেই কারণেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাঁদের অনেককে।
বৃহস্পতিবার স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্যর সঙ্গে বৈঠকের পরে রাতে ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এখনও সে ভাবে নেই, এমন এলাকার পাম্পে কিষান সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে বছর তিনেক আগে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই পরিষেবা চালু করে তারা। এখন নগদ জোগাতে তা-ই কাজে লাগাতে চাইছে।
এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের সিজিএম (কলকাতা সার্কেল) পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত জানান, পশ্চিমবঙ্গে ১৮২টি পাম্পে সব ব্যাঙ্কের ডেবিট বা প্রি-পেড কার্ড দিয়ে দৈনিক ২০০০ টাকা তোলা যাবে। মূলত মফস্সল ও গ্রামীণ এলাকার পাম্পে তাঁদের ‘পয়েন্ট অব সেলস’ যন্ত্রে ওই কার্ডগুলি ঘষে (সোয়াইপ করে) টাকা তোলা যাবে।
ইন্ডিয়ান অয়েল জানিয়েছে, দেশে প্রায় ২৫০০টি পাম্পে এই সুবিধা চালু হচ্ছে। এসবিআই ও অন্য ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে ধাপে ধাপে তা ২০ হাজার পাম্পে চালু করতে চায় তারা। এ দিন থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর, ঘাটাল, বোলপুর, জলপাইগুড়ি, কৃষ্ণনগর, মায়াপুর, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন পাম্পে এই সুবিধা চালু হয়েছে। হাঁসখালির একটি পাম্পের মালিক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, ‘‘নগদ কম বলে এ দিন ১২ জনকে মাথাপিছু দু’হাজার টাকা করে দিয়েছি। ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’’
তেমনই আবার তাদের তালিকাভুক্ত রাজারহাট ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন পাম্পের দাবি, নগদ না থাকায় তারা এই পরিষেবা চালুই করতে পারেনি।
পাম্প মালিকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তুষার সেনের অভিযোগ, ‘‘এ জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। পাম্পে নগদ জোগানেরও খুব সমস্যা। কেউ টাকা তুলতে চাইলে সেই নগদ কোথা থেকে আসবে? গোলমাল হলে কর্মীদের সুরক্ষা কে দেবে?’’
টাকার জোগানের সমস্যার কথা মানছে স্টেট ব্যাঙ্ক। যদিও তাদের দাবি, এই প্রথা জনপ্রিয় হতে কিছুটা সময় লাগবে। এবং বাজারে নগদের জোগান বাড়লে তা সহজও হবে। তবে পাম্পে নগদের অভাব থাকলে তাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে বলছে এসবিআই। সে ক্ষেত্রে লেনদেন পিছু প্রতিটি পাম্পের যে পাঁচ টাকা প্রাপ্য তা জমা হবে তাদের অ্যাকাউন্টে। পাশাপাশি স্টেট ব্যাঙ্কের মেশিনে অন্য কার্ড ব্যবহার করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক-কে উদ্যোগী হতে হবে বলেও জানিয়েছে তারা।